বাগান করিতে গিয়া একবার মিষ্টি আলুর কয়েকটা ডগা লাগাইয়াছিলাম। যত্ন করি নাই, পরিচর্যাও তেমন করা হয় নাই। ধীরে ধীরে কবে কখন চোখের আড়ালে মাটির নীচে তিনি এত বড় হইয়া উঠিয়াছে জানিতেও পারি নাই। বাগান আলু পাতায় ভরিয়া উঠিতেছে ভাবিয়া উহা সমুলে নির্মুল করিতে গিয়া এই আলুখানা চোখে পড়িলো। কখন কিভাবে যে এত অনাদরেও সবার অলক্ষ্যে সে এত বড় হইয়া উঠিয়াছে কেহই জানিতে পারে নাই। এখন তাহাদের বংশ সহ জীবন ধংসের মুখে। কেমন যেনো মনে হইতেছিলো। তখন মনে বড্ড কষ্ট হইতে লাগিলো এই ভাবিয়া যে, আহা এই ক্ষুদ্র বোবা উদ্ভিদ তৃনলতার মতো মেরুদন্ডহীন লতাটাকে বাগানে রাখিয়া দিলেও পারিতাম। কারন এরাও ফল দেয়, আর এই ফল মুল্যহীন নয়। বাগানে কেহই অনর্থক বা মুল্যহীন নয়।
চোখ বুজিয়া আমি যেনো আমাদের সমাজের বৃহত বাগানের চিত্রটি দেখিতে পাইলাম। অনেক কিছুই ফুটিয়া উঠিলো। এখানে সবাই কোনো না কোনো সময়ে নিজের আপন চেষ্টায়, গোপনে সবার অলক্ষ্যে বাচিয়ে রাখার চেষ্টা করে। সে যত অবহেলিতই হোক, কিংবা অনাদর। মালি কিংবা মালিক কারো কোনো পরিচর্যা ছাড়াও কোনো কোনো প্রজাতি এই ধরায় অস্তিত্ত্ব টিকিয়ে রাখার আপ্রান যুদ্ধ করেই পতবর্তী প্রজন্মের জন্য ফল দেয়। কেউ ফেলনা নয়। এটা হয়তো ফিলোসোফির একটা দিক বা মুদ্রার।
কেউ কেউ আবার এই বড় মিষ্টি আলুটির চেহাড়া সুরুত আর সাইজ দেখিয়া ইহাও বলিতে পারেন, এই বেটা একটা আলুই শুধু এতো মোটা আর বড় হইলো কেনো? অন্যগুলি না কেনো? সেই ফিলোসোফি যদি বলি- হতে পারে যে, এই একটা আলুই বাগানের যাবতিয় সুখ আর খাদ্য একাই খাইয়া এতো বড় হইয়াছে যাহার ফলে অন্য আলুগুলির ভাগ্য রোহিংগাদের মতো। এই বড় আলুটি শুধু নিজের কথাই ভাবিয়াছে আর ভাবিয়াছে, এই পৃথিবীতে কে কাহার? আগে নিজে বড় হই, তারপর দেখা যাবে। কিন্তু যখন কোনো গোত্রের মধ্যে বিপদ আসিয়া হাজির হয়, তখন কে কত বড় আর কে কত ছোট তাহা ভাবিয়া বিপদ আসে না। তখন ছোটবড় সবাই একত্রে মরিতে হয়। অথবা যিনি সবচেয়ে বড় তাহাকেই আগে কতল করা হয়।
তাই গোত্রের সবাইকে নিয়া একত্রে বড় হওয়া একটা নিরাপত্তার ব্যাপার থাকে। নতুবা এই ছোট আলুগুলির থেকে বেশী নজর থাকে সবার বড় আলুর দিকে। ইহাকেই আমরা আজ প্রথম সিদ্ধ করিবো। বাকিগুলি হয়তো আবার কোনো না কোনো বন-জংগলে ফেলিয়া দেবো, কারন তাহাদের প্রতি আমাদের মতো মালি বা মালিকের খুব বেশী ইন্টারেস্ট নাই। ফলে, এই কারনে কোনো একদিন তাহারাই আবার বংশ বিস্তার করিয়া তাহাদের অস্থিত্ত বজায় রাখিবে।
আরেক দল আবার ভিন্ন একখানা মতবাদ লইয়া এই আলুর উপর কিছু দোষ চাপাইয়া নিজেরা পার পাইতে চেষ্টা করেন। কারো কারো ব্যক্তিগত দোষের কারন কেনো বা কি মনে করিয়া এই নীরিহ বোবা একটা আলুকে দোষারুপ করেন তাহা আমি আজো বুঝিয়া উঠিতে পারি নাই। কিছু হইলেই মানুষ ‘আলুর দোষ’ বলিয়া চালাইয়া দেন। অথচ এই বোবা আলুটি সারাজীবন সবার অলক্ষ্যেই বসবাস করে। হইতে পারে, গোপনভাবে থাকার এই বইশিষ্ঠই মানুষের আলুর সাথে মিল থাকার সব দোষ এই নন্দ ঘোষের উপর পড়ে।
মোরাল অফ আলুঃ
একাই শুধু খাইয়া বড় হইয়েন না, বিপদ আছে তাহলে।
আলুর প্রতি এতো ঝুকে যাইয়েন না, তাহলেও বিপদ হইতে পারে।
আলুর যত্ন নিন। আলুকে ভালোবাসুন।