১৮/০৩/২০০৪-মিটুল, মালয়েশিয়া ট্রেনিং

আজ আমি ঢাকায় এলাম একটা বিশেষ কাজে। কাজটা হলো আমার স্ত্রী আগামী কয়েকদিন পরে বিদেশ চলে যাবে ট্রেনিং করতে। তাকে সব কিছু ঠিক ঠাক করতে হলে আমাকে অনেকগুলি এক্সট্রা ব্যবস্থা করা দরকার।

এম্নিতেই আমি থাকি খোলাহাটি, ঢাকা থেকে অনেক দূর। এর মধ্যে আমার স্ত্রী মিটুলের আবার বৈদেশিক একটা ট্রেনিং এর নাম এসছে মালয়েশিয়া। মালয়েশিয়ায় সে ট্রেনিং এ যাবে কিনা আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলো। আমি এক কথায় বলে দিয়েছি যে, তাঁর মালয়েসিয়ায় ট্রেনিং এ যাওয়া উচিত। মিটুলের সেই ১৯৮৮ সাল থেকে যা যা ক্যারিয়ারে দরকার সাহাজ্য করা তাতে আমার কখনোও কোনো কার্পন্য ছিলো না। আর এর প্রধান কারন হলো, মিটুলকে সাবলম্বি করে তোলা। আমি জানি, আমার আসলে সাহাজ্য করার মতো আশেপাশে কোনো হোমরা চোমড়া নাই। না আছে আমার বাবার দিক থেকে কোনো সাহাজ্য, না আছে আমার শ্বশুর বাড়ির দিক থেকে কোনো সাহাজ্য। ফলে যদি আমাকে কেউ সরাসরি সাহাজ্য করার কেউ থাকে সেতা হচ্ছে আমার স্ত্রী মিটুল। আর সেইই যদি ওই অবস্থায় না থাকে বা নিজের পায়ে দাড়াতে না পারে, তাহলে আমাকে বা আমার পরিবারকে অথবা আমার অনুপস্থিতিতেই বা মিটুল কিভাবে সাহাজ্য করবে? এই চিন্তা ধারা থেকেই আসলে আমি সব সময় চেয়েছি মিটুল গড়ে উঠুক।

মিটুলের মালয়েশিয়ার কোর্স টা শুরু হবে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে। প্রায় ছয় মাসের মতো একটা কোর্স। সমস্যা দাঁড়াবে যে, আমিও ঢাকায় আমার বাচ্চাদের কাছে নাই আবার এবার মিটুল ও থাকবে না। উম্মিকার বয়স মাত্র আট বছর আর কনিকার বয়স মাত্র তিন। এই দুইজনের জন্য দেখভাল করার কোনো লোক ও নাই। বাজার করার লোক, রান্না বান্নার লোক, যদি মেয়েরা অসুস্থ হয়, তাদেরকে হাসপাতালে নেওয়ারও কোনো লোক নাই। তারপরেও আমি মিটুলকে মালয়েশিয়া যাওয়ার সিদ্ধান্তে আওটল থাকলাম। সব কিছু নির্ভর করে আল্লাহর উপর। বাড়িওয়ালা মেজর (অবঃ) ফেরদৌস স্যার ভালো মানুষ। অন্তত দরকারী প্রয়োজনে তাঁর ডাইরেক্ট সাহাজ্য পাওয়া যাবে এটা একটা ভরষার স্থান ছিলো।

নসিরন নামে আমার বাসায় যে কাজের মেয়েটি আছে, সে অত্যান্ত ভালো একজন মেয়ে। তাঁর কোনো আত্তীয় স্বজন নাই, আমরাই তাঁর বাবা, আমরাই তাঁর মা, আমরাই তাঁর সব। আর নসিরন নিজেও এটা জানে আর এতাও জানে আমাদের বাসা ছাড়া ওর আর কোথাও যাওয়ার জায়গা নাই। সে আমার মেয়েদের কাছেও অনেক প্রিয় একজন নসি আপু। সমস্ত কাজ কর্ম নসি করতে পারে। কিন্তু কথা বলে খুবই কম। সে নিজে অসত নয় এবং তাঁর চাহিদাও অনেক বেশী নয়। আমি যেভাবে মিটুলের অনুপস্থিতিতে ব্যাপারটা সামলাবো বলে ভাবছি সেতা হলো যে, আমি প্রতি সপ্তাহে ঢাকায় এসে নিত্য নৈমিত্তিক শুকনা বাজার গুলি করে দিয়ে যাবো। আর ডেইলী বাজার যদি লাগে, পাশেই দোকান পাট আছে, তাদের কে বলে দিলে ওরাই বাসায় পৌঁছে দেবে। দোকানদারদের সাথে আমার সম্পর্কটা আমি এমনভাবে তৈরী করেছিলাম যাতে আমার বাসা থেকে একটা চিরকুট দিলেও দোকানদারগন মালামাল বাসায় কাউকে দিয়ে পৌঁছে দেন। যদি বাকীতেও হয়, তাতেও যেনো সবাই মালামাল দিয়ে দেন এবং আমি ঢাকায় এসে সমস্ত টাকা পয়সা দিয়ে দেবো।

মিটুলের খুব মন খারাপ। কারন সে অনেকদিন থাকবে না, একটা মানসিক টেনসনে আছে বাচ্চাদের জন্য। এই টেনসনটা হয়তো থাকতো না যদি আমাদের বাসায় এমন কেউ থাকতো মুরুব্বি টাইপের যারা অন্তত বাচ্চাদেরকে আগলে রাখতে পারবে। আমার মন খারাপ নয়, আমি অনেক টেনসনেও নাই কারন আমি এভাবেই জীবনে বড় হয়েছি। যাদের জীবনে অনিশ্চয়তা সব সময়ই থাকে, তারা অনিশ্চয়তাকে জীবনের স্বাভাবিক দোসর হিসাবেই ধরে নিয়ে জীবন চালাতে থাকে। আমিও ঠিক সে রকমের একজন মানুষ।