১৮/০৩/২০১২-রাশিয়ায় ব্যবসায়ীক ভ্রমন

উচ্ছিষ্ঠ সময়ের রাজত্ব 

মার্চ 

১৮ 

সেন্ট পিটার্সবার্গ থেকে স্টল গুছিয়ে ভাবলাম আবারেকবার রাশিয়া ঘুরে যাই। ফলে আমি, রাজীব ভাই (ওরফে সজীব ভাই) আর মূর্তজা ভাই তিনজনেই আমরা ট্রেনে সেন্ট পিটার্সবার্গ থেকে সরাসরি রাশিয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম। এমন একটা সময় যে, সেন্ট পিটার্সবার্গ থেকে রাশিয়ায় যাওয়ার জন্যে খুব ভালো ট্রেন সূচী তো নাইই, বরং মারাত্তক ট্রেন বিপর্যয় হয়েছে এই সময়। তারপরেও বিদেশী হিসাবে অনেক কষ্ট করে আমরা তিনটা টিকেট জোগাড় করতে পারলাম। এখানে একটা জিনিষ খুব নজরে পড়লো যে, এমন কি যারা রাশিয়ার নাগরীক, সবাই রাশিয়ায় যেতে পারেন না, আর পারলেও তারা কয়েকদিনের জন্য এমনভাবে সরকারী অনুমতি লাগে যে, তিন দিন বা চারদিনের জন্য। ফলে রাশিয়ায় প্রবেশ করার এবং বের হবার সময় এটা খুব কড়াকড়িভাবে সরকারী কর্মচারীরা চেক করেন যেনো কেউ অনির্দিষ্টকালের জন্য রাশিয়ায় থাকা চলবে না। এটা সম্ভবত রাশিয়ায় যাতে অন্য শহরের মানুষ এসে অযাচিত ভীর না করে এবং ঘন বসতির সৃষ্টি না করে সেজন্য। ব্যাপারটা আমার কাছে কিছু মন্দ লাগেনি। আমাদের ঢাকা শহরের জন্যেও এমন ব্যবস্থা হলে অন্তত ঢাকা একটা বসবাসের শহর হিসাবে গড়ে উঠতো।

যাই হোক, আমরা একটা হোটেল খুজতে গিয়ে খুবই বিড়ম্বনায় পড়লাম। ট্যাক্সি ড্রাইভার একবার এই হোটেলে, আরেকবার ওই হোটেলে নিয়ে যেতে লাগলো, কোথাও ভালো রুমের হদিস পাচ্ছিলাম না। অনেক পর্যটক সম্ভবত এই সময়, কোথাও খালি পাচ্ছিলাম না। অতঃপর একটা স্বাভাবিক মানের হোটেলেই উঠলাম। আমরা তিনজনেই একরুমে উঠলাম। রাত তখন প্রায় ৩টা। কিছু খাবার সাথেই ছিলো, সেটাই আমরা তিনজনে ভাগ করে খেয়ে নিলাম। তারপর ঘুম। আগামীকাল এই রাশিয়ান এয়ারপর্ট থেকেই আমরা ফিরে যাবো ঢাকায়, বিকেল ৪ টায় ফ্লাইট। এর মধ্যেই যতোটুকু রাশিয়ার আশেপাশে দেখা যায় সেটাই ভালো।

সকালে রাজীব ভাই অন্যত্র চলে গেলেন। আমি আর মূর্তজা ভাই পায়ে হেটে অদূরে ক্রেমলিন দেখতে যাবো। যেহেতু ভালো মতো চিনিনা, তাই একটা গাড়ি ভাড়া করলাম। পরে দেখলাম, আসলে আমাদের হোটেল থেকে ক্রেমলিন অতো কাছে নয়। আমরা যখন ক্রেমলিনের চত্তরে পৌঁছলাম, তখন মাত্র সকাল ১০ টা হবে। বিশাল চত্তর সামনে। অনেক নাম শুনেছিলাম এই ক্রেমলিনের, আজ নিজের চোখে দেখে মনে হলো, এটা পরাশক্তির একটা হেড কোয়ার্টার। জীবনে আল্লাহ অনেক কিছু দেখালেন। আমেরিকা দেখেছি, এবার রাশিয়ার ক্রেমলিনও দেখলাম।

ক্রেমলিনের সামনেক্রেমলিনের সামনে অনেক সিকিউরিটির লোক থাকে, কিন্তু তারা কাউকে কিছুই বলেনা। যারা দর্শানার্থী, তারা নির্বিঘ্নে ক্রেমলিনের বাইরের বিশাল চত্তরে আনাগোনা করছে। মনে মনে ভাবলাম, এদের অনেকেই আছে গুপ্তচর যাদের হয়তো আমরা চিনি না কিন্তু তাদের কাজের ব্যাপার স্যাপারই আলাদা।

অনেকক্ষন থাকলাম, দেখলাম, ছবি নিতে কোনো বাধা নাই তবে মাঝে মাঝেই লেখা আছে, 'এই এলাকায় ছবি তোলা নিষেধ"। খুব গোপনেই কয়েকটা ছবি নিলাম, বলা যায় না কোথায় কোন ক্যামেরা ফিট করা আছে, আবার কেউ আমাদের সন্দেহ করে ধরেও নিয়ে যেতে পারে এই ছবি তোলার জন্য। আশেপাশে কোনো দোকান পাট নাই, ভীষন পানির পিপাসা লেগেছিলো, সাথে অল্প একটু পানি ছিলো, তাতেই পানির পিপাসা মিটাতে হলো।

ক্রেমলিন থেকে আমরা পায়ে হেটে আশেপাশে বেশ দূরে কিছু শপিংমল আছে। সেখানে গেলাম। মূর্তজা ভাই একটা স্পোর্টস দোকানে ঢোকলেন, তাঁর বাচ্চাদের জন্য কিছু স্পোর্টস গিয়ার কিনবেন। আমিও ভাবলাম কিছু কিনি। ওরে ভাই, এতো দাম? তারপরেও পকেটে ডলার ছিলো বেশ, আর এগুলি ঢাকায় ফিরিয়ে নেবার ইচ্ছা ছিলো না। তাই প্রায় ১৫০০ ডলার দিয়ে আমিও কিছু স্পোর্টস গিয়ার কিনলাম মুর্তজা ভাইয়ের দেখাদেখি। হয়তো আমার পরিবার এগুলি ব্যবহার করে কিনা জানি না, আবার করতেও পারে। ব্যবহার করলে ভালো লাগবে আর না করলে পুরা টাকাটাই গচ্চা।

একটা রেষ্টুরেন্টে ঢোকে আমরা কিছু খেয়ে নিলাম। বিকাল ৩ তাঁর দিকে এয়ারপোর্টে গেলেই হবে। ওই সময় রাজীব ভাইও আমাদের সাথেই ঢাকায় ফিরবেন। আমরা খাওয়া দাওয়া করে বিকাল তিনটার আগেই এয়ারপোর্টে চলে এলাম, বিশাল এয়ারপোর্ট। চমৎকার জায়গা। খুব ভালো লাগলো। অনেক দেশ ঘুরে একটা জিনিষ বুঝেছি যে, আমাদের দেশের এয়ারপর্ট বিদেশের লোকাল এয়ারপোর্টের থেকেও খারাপ। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতায়, ডেকোরেশনে, সুযোগ সুবিধা সবকিছু মিলিয়ে আমাদের ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপর্ট কোনো অবস্থাতেই ইন্তারন্যাশনাল পর্যায়ে পড়ে না। যাইহোক, আমরা চেকিং করে ফেললাম। আমাদের সাথে যে স্যাম্পলগুলি সেন্ট পিটার্সবার্গে নিয়ে এসেছিলাম, সেগুলি আমরা সেন্ট পিটার্সবার্গেই দান করে এসেছিলাম। ওগুলি আর দেশে ফিরিয়ে আনার কোনো মানে হয় না। কারন তাতে আমাদের অনেক লাগেজ খরচ বহন করতে হতো।

একটা কথা না বললেই নয় যে, আমরা যে উদ্দেশ্যে এই সেন্ট পিটার্সবার্গে স্টল খুলেছিলাম, আসলে এটার কোনো সাফল্য আসে নাই। আমরা ভেবেছিলাম যে, এখানে বায়াররাও আসে। ফলে আমরা অনেক অর্ডার পাবো দেশ বিদেশ থেকে। কিন্তু এখানে এসে দেখলাম যে, আসলে এখানে খুচরা ক্রেতা বেশী। অর্থাৎ এক পিস দুই পিচ কেনার ক্রেতা। আমরা তো এটা চাই নাই। পুরুটাই আসলে একটা অসফল ফেয়ার ছিলো। আমি মুর্তজা ভাইকে বললাম, যে, এরপরে এভাবে আর আমরা কোনো স্টল দেয়া উচিত না। তাতে খুব লাভ হয় না।

আমরা ঢাকায় ফিরে এলাম।