১৮/০৮/২০১৬ আইনিস্টানিক আই কিউ

Categories

১১ বছরের একটি ছেলে তার আইনিস্টানিক আইকিউ এর মতো বুদ্ধিমত্তার কারনে সব স্কুল কলেজ বাদ দিয়ে সরাসরি ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হলো। বাচ্চা ছেলে, মা অনেক চিন্তিত ছেলেকে নিয়ে। দূরদেশ, কিভাবে থাকবে, কিভাবে খাবে, কিভাবে নিজের যত্ন নিবে, সবভেবে মা অনেক পেরেশানি।

মায়ের কাছ থেকে বিদায় নেওয়ার সময় মা অতি যত্ন করে ছেলের কোটের পকেটের ভিতরের দিকে একটা ২৫ সেন্টের মুদ্রা সেলাই করে দিয়ে বললেন, “বাবা, যদি ঐখানে গিয়ে তোমার ভালো না লাগে, মন খারাপ থাকে কিংবা তোমার আর পড়তে ইচ্ছে না হয়, আমার কথা মনে হয়, তাহলে এই ২৫ সেন্ট মুদ্রাটা বের করে ট্রেন ভাড়া দিয়ে আমার কাছে চলে এসো”। ট্রেনভারা ২৫ সেন্টই লাগে বলে মা ২৫ সেন্টই গোপন পকেটে সেলাই করে ছেলের জন্য দিয়ে দিলেন যাতে কোনো কারনে ছেলের মন খারাপ, কিংবা মায়ের কাছে আসতে চাইছে কিন্তু তার কাছে ভাড়া নাই, তাই তিনি ট্রেন ভাড়া হিসাবে অগ্রিম ২৫ সেন্ট গুজে দিলেন তার কোটের পকেটের ভিতরে।

কোনো এক শীতের মৌসুমে ছেলেটি ইউনিভার্সিটিতে চলে এলো। সবাই তাঁকে অনেক অনেক আদর করে, অতি কনিষ্ঠ একজন ছাত্র কিন্তু খুবই মেধাবী। সব শিক্ষকরাও তাঁকে পেয়ে অনেক খুশী এবং তারা সবাই ছেলেটিকে অনেক আদর করেন। তার কথা অনেকেই মনোযগ সহকারে শুনেন। তিনি অনেক কঠিন কঠিন সমস্যার অল্প সময়েই উত্তম সমাধান দিয়ে দিতে পারেন। এমনই মেধাবী সে। কিন্তু ব্যতিক্রম হলো এক স্যারের বেলায়। সে তার ক্লাস টিচার।

তার ক্লাশ টিচার তারসাথে এমনভাব করেন যে, এই ছাত্রটি তার ক্লাশের সবচেয়ে অপ্রিয় একজন ছাত্র এবং তার মতো আহাম্মক আর একটাও নাই, তার কোনো মেধাও নাই। যেই এসাইন্মেন্টই দেওয়া হোক না কেনো, সে যদি সবচেয়ে ভালোও লিখে, তাতেও ক্লাশ টিচারের মন ভড়ে না, গলেও না, তার মেজাজ যেনো সব সময় ছাত্রটির উপর চড়া। কখনো ক্লাশ টিচার তার খাতাপত্র ছিড়ে ফেলেন রাগে, কখনো আবার এসাইন্মেন্ট না পড়েই “কি লিখেছো এসব” বলে সবার সামনে ছুড়ে ফেলে দেন ইত্যাদি।

ক্লাশ টিচারের এইরকম একটা আচরনের কোনো কারন কেউ খুজে পান না। আবার ক্লাশ টিচারের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করবেন, তার সাহসও কারো নাই। ক্রমে ক্রমে দিনে দিনে এই নাবালক ছাত্রটি ইউনিভার্সিটির পড়াকে একটা দুঃসহ জীবনের অভিজ্ঞতার মতো মনে করতে লাগলো। তার মন খারাপ হতে থাকে, শরির খারাপ হতে থাকে, পড়াশুনার উপর তার বিতৃষ্ণা গড়ে উঠতে থাকে।

একরাতে, তার খুব মন খারাপ হয়, মায়ের কথা মনে পড়ে। মনে পড়ে মায়ের দেওয়া ওই ২৫ সেন্টের কথা। বাচ্চা ছেলে, হয়ত আইকিউ বেশি কিন্তু পরিপক্কতা তো আসে নাই। সে তার সব কাপর চোপড় গুছাতে থাকে, বইপত্র ব্যাগে ঢোকাতে থাকে। আজ রাতেই ট্রেন। ট্রেনে করে মায়ের কাছে চলে যাবে। আর ফিরবে না। কাউকেই সে এ কথা বল্লো না। সব গুছানো শেষ। এবার ট্রেনের উদ্দেশ্যে রুম থেকে বের হবার পালা।

যেই না ছেলেটি তার ব্যাগসমেত রুম থেকে বের হবে, ঠিক ওই মুহূর্তে তার ক্লাশ টিচার তার রুমের সামনে এসে হাজির। ক্লাশ টিচারকে দেখে তো ছেলেটির অন্তরাত্মা চমকে উঠলো। গায়ের রক্ত যেনো হিম হয়ে আসতে লাগলো। শীতের ওই রাতেও ছেলেটির মুখে বিন্দু বিন্দু ঘাম চিকচিক করতে লাগলো। ভয়ে তার মুখ দিয়ে কোন কথাই বের হচ্ছিলো না।

-“কি চলে যাচ্ছো নাকি? কোথায় যাচ্ছো? মায়ের কাছে?” ক্লাশ টিচার খুব সহজ করে প্রশ্ন করলেন ছেলেটিকে।

কোনো উত্তর না দিয়ে ছেলেটি শুধু কিছুটা ভয়ে, কিছুটা আবেগে শুধু মাথা নেড়ে “হ্যা সুচক” উত্তর দিলো।

-“চলো, ভিতরে চলো। তোমার সঙ্গে গল্প করি”। বলে ক্লাশ টিচার ছেলেটিকে অতি আদরের সহিত বুকে জড়িয়ে রুমে বসালেন। তারপর বল্লেনঃ

-তোমার কি খুব মন খারাপ? আমার উপর তোমার খুব রাগ? কিন্তু আমি তো তোমার উপর কখনো রাগ করি নাই। তাহলে শুন।

-আজ থেকে বহু বছর আগে, তোমার থেকেও ছোট একটা বয়সে আমি একটা নামীদামী ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছিলাম। আমার আইকিউও তোমার থেকে বেশি ছিলো। আমিও তোমার মতো সব সমস্যা অনেক দ্রুত এবং সঠিকভাবে সমাধান করতে পারতাম। আমার ক্লাশ টিচার, আমার সহপাঠী সববন্ধুরা, আমার পরিবার, আমার আশেপাশে যারা ছিলেন, তারা আমাকে এতোটাই সমিহ করতেন যে, আমার ভিতরে একটা জড়তার মতো শক্তি কাজ করতে থাকলো। আমার যত ইনোভেটিভ আইডিয়া, আমার যতো মেধা এবং যতোটুকু আমার আরো দেবার দরকার ছিলো তাতে আলসেমির একটা ভাব চলে আসে। মনে হতো, আমি তো সবই জানি, সবই করতে পারি। ফলে আমার চিন্তাশক্তি, চিন্তার মননশীল প্রবাহ স্লথ হয়ে আসে। যতোটুকুন আমি এগিয়ে যেতে পারতাম, তার থেকে আমি অনেক গুন কম অগ্রসর হতে পেরেছি কারন আমার পাশে শুধু চাটুকারের মতো অবুঝ লোকজনই বেশি ছিলো। আমি যখন এটা বুঝতে পারি, তখন নিজের কাছে আমার নিজেকে খুব অপরাধী মনে হয়েছে এই কারনে যে, আমি আমার মেধার যথেষ্ট প্রতিফলন ঘটাতে পারি নাই, আমার মেধার চর্চা হয় নাই। এই সব লোকদের অহেতুক ভালোবাসা আর নির্বোধ স্নেহের কারনে আমি ধীরে ধীরে সাধারন একটা মানুষের সাড়িতে দাড়িয়ে ছিলাম। আজ যখন আমি তোমার দিকে তাকাই, তখন আমার কাছে মনে হয়েছে, তুমি নিজেও ওই সব চাটুকারদের ফাদে আটকে যাচ্ছো যেখান থেকে তুমি তোমার পুরু মেধার ফলাফল পাবে না। আমি ওইসব লোকদের কারনে ঠকেছি কিন্তু আমি তোমাকে ঠকতে দিতে চাই নাই। তাই আমি সবসময় আরো বেশী চাই, আরো বেশী করে তুমি তোমার মেধার শক্তি প্রয়োগ করো সেটাই চেয়েছি। ফলে আমি তোমাকে সবার মত তোমার কৃতকর্মের ফলাফলে তোষামোদি না করে, অহেতুক বাহবা না দিয়ে তোমার ভিতরের মেধাশীল আত্মাটাকে আরো নেড়ে দিতে চেয়েছিলাম। আমি আমার ওই ব্যবহারের মাধ্যমে এটা বুঝাতে চাই নাই যে, আমি তোমাকে স্নেহ করি না, ভালোবাসিনা কিংবা আমি তোমার উপর বিরক্ত। আমি তোমাকে সবার থেকে বেশী ভালোবাসি, এটা আমি তোমাকে বুঝতে দিতে চাই নাই। আমি চাই নাই, আমার অতি আদরের মতো একটা শিশু যে অসামান্য মেধা নিয়ে এই পৃথিবীতে এসেছে , সে অন্যসব লোকদের তোষামোদিতে গা ভাসিয়ে দিয়ে মেধার বিকাশ থামিয়ে দিক। আমি যা হতে পারি নাই, আমি তোমার মত একজন অসামান্য সন্তানের কাছ থেকে সেটাই পেতে চেয়েছি। এইটুকু বলে ক্লাশ টিচার থামলেন।

তারপর তিনি আবারো বলতে লাগলেন,

-আজ তোমাকে একটা বাস্তব উপদেশের কথা বলি। যা তুমি বাস্তবে দেখছো, তা তুমি সত্যি দেখছো না সবসময়। যে আজ তোমাকে নিয়ে অনেক গল্প করে, সেই কোনো একদিন তুমি খসে গেলে অন্য রকমের গল্প করবে। যে আজ তোমার অনেক কাছের বন্ধু বলে মনে হবে, সে আসলে তোমার বন্ধু নয়। এর মধ্যে অনেকে আছে যারা তোমার সত্যিকারের বন্ধু বটে কিন্তু তোমার মেধাকে জাগ্রত করতে তাদের মেধা নেই। হয়ত তারা তোমার কোনো ক্ষতি চায় না। কিন্তু তাদের অহেতুক বাহবা কিংবা তোমার মেধা যে বিকশিত হচ্ছে না এটাই হয়ত তারা বুঝতে পারে না। ফলে তাদের অতিরিক্ত স্নেহশীলতা, অতিরিক্ত ভালোবাসা তোমার মেধাশীল চিত্তের ক্ষতি নিশ্চয়ই হবে যা তারা নিজেরাও জানেন না। অন্যদিকে, যাকে তুমি আজ মনে মনে অপছন্দ করছো, হয়তবা সেই তোমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু যাকে তুমি চিনতে পারছো না। চোখ সবসময় সঠিক জিনিষ দেখে না, আর সঠিক জিনিষ না দেখার কারনে মুল্যায়নটাও সঠিক হবে না। তোমাকে আমার মত করে বড় করার জন্য কখনো তোমাকে আগুনের তাপের মত কষ্ট, আমার রাগের মত হিংস্রতা, আমার নির্দয় ব্যবহারের মত মানসিক কষ্ট সহ্য করতে হবে। যদি সহ্য করতে না পারো, তাহলে আমার দেখানো পথে তুমি কিভাবে আরো বড় হবে? তাহলে আমি আমার এই জ্ঞ্যানের সাম্রাজ্য কিভাবে তোমার কাধে দিয়ে যাবো? ওস্তাদের কাজ শাগরেদ গড়ে তোলা, আর সাগরেদের কাজ ওস্তাদের সব কিছুকে পজিটিভভাবে নেওয়া। ব্রুসলী একদিনে তৈরি হয় নাই, নবাব সিরাজ একদিনে সৃষ্টি হয় নাই, অলিম্পিকের একটা গোল্ড মেডাল একবার দৌর দিয়েই পাওয়া যায় না। দিনের পর দিন, রাতের পর রাত, মাসের পর মাস তাঁকে চর্চা করতে হয়েছে ঘাম, পরিশ্রম আর মেধা দিয়ে। সাফল্য চুপে চুপে এসেছে এই তথ্য কেউ কখনো দিতে পারবে না। তারজন্য অনেক ধৈর্য আর সঠিক গুরুর দরকার। এতো অল্পতেই হেরে গেলে চলবে? আমি তো আছি তোমার পাশে।   

এই বলে ক্লাস টিচার ছেলেটিকে বুকে নিয়ে কিছুক্ষন ধরে থাকলেন, তিনি শুনতে পেলেন, তার বুকে মাথা রাখা এক অবুঝ কিন্তু অসামান্য মেধাশীল বালকের ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্নার শব্দ। তিনি বুঝতে পারছিলেন, তার জামা ভিজে যাচ্ছে বালকের অশ্রুসিক্ত জলে। তিনি বুঝতে পারছিলেন যে, এই অসামান্য মেধাশীল বালককে আর নতুন করে কিছুই বলার নাই। মেধাই তাঁকে সব অজানা না বলা কথা তার অন্তরে অন্তরে গেথে দিচ্ছে।

ক্লাশ টিচার বালককে তার সমস্ত শক্তি দিয়ে বুকে আগলে ধরে রাখলেন চরম মমতা দিয়ে। হয়ত তারও এক ফোটা  জল গড়িয়ে পড়ছিল বালকের ক্ষুদ্র কেশবি মাথায়। রাতের ক্ষিন আলোছায়ায় হয়ত তার কিছুই দেখা গেলো না।

সিনেমাটা এখানেই শেষ হয়ে গিয়েছিলো।

মোরালঃ মেধাশীল হলেই সাফল্য পাওয়া যাবে তা সঠিক নয়। মেধাশীলদের মেধা চাটুকারদের কিংবা অবুঝদের ফাদে পড়ে সাফল্য বাধাগ্রস্থ হয়, সেটাই সঠিক। কিন্তু যোগ্যব্যক্তির সব ব্যবহার বুঝতে না পাড়লেও কিংবা পছন্দ না হলেও তার আশেপাশে থাকাই হচ্ছে সাফল্যের সোপান। দেখুন, শিখুন এবং বুঝুন কোন ব্যবহার কি কারনে সাফল্যধারি মেধাশীল ব্যক্তি করেন। আর এর মধ্যেই নিহিত রয়েছে অভিজ্ঞতার ভান্ডার। নিতে পারলে ভালো, আর না নিতে পারলে ক্ষতি তার, যে নিতে পারে নাই।

(এইরুপ একটা জ্ঞ্যানি ব্যক্তি কে তার কাহিনি আমাদের পবিত্রগ্রন্থ “আহজাবে কাহাফ” (সম্ভবত) নামক সুরায়ও বর্ণিত আছে সেখানে হযরত মুসা (আঃ) অবলোকন করেছেন কোনো এক জ্ঞ্যানি ব্যক্তির অনেকগুলি ব্যবহার দেখে, যেখান থেকে তিনি পরবর্তীতে বুঝেছিলেন যে, ওই জ্ঞ্যানি ব্যাক্তি সবগুলি কাজ ভালো নিয়তেই করেছিলেন কিন্তু হযরত মুসা তার মেধার ভিত্তিতে বুঝতে পারেন নাই। পরবর্তীতে তিনি অধৈর্য হয়ে যাওয়াতে ওই জ্ঞ্যানি লোকের সহচর্জ ছাড়তে হয়েছিলো তাঁকে)