১৮/০৯/১৯৯৮-আমি অসহায় একজন মানুষ

মাঝিরা ক্যান্টনমেন্ট,  Friday,

কেনো বললাম আমি অসহায় একজন মানুষ? আমরা বলি যখন কোনো মানুষের হাত তাহকে না, পা থাকে না, চোখে দেখে না, কিংবা কোনো না কোনো ভাবে সে নিজের কাজ কর্মের কাছে অসহায়। তাঁকে অন্য কারো সাহাজ্যে চলতে হয়। এদেরকে বলা হয় আসলে শরাঈরিক প্রতিবন্ধী। আমি সে রকমের কেউ নই। আমার হাত আছে, আমার পা আছে, আমার কোনো অসুবিধা নাই। আমি দৌড়াতে পারি, আমি গান গাইতে পারি, আমি হাসতে পারি, আমার দুচোখ ভরে খুশীতে কান্নায় অশ্রু আসে। তাহলে আমি কেনো নিজেকে অসহায় মনে করছি?

আসলে অসহায়ত্ব এমনি এক বেদনার নাম যা নিজের চোখের সামনে প্রিয়জনের সর্বনাশ হতে দেখেও যখন কেউ তাঁকে রক্ষা করতে পারে না, তার নাম। নদীর ওপারে যখন নিজের পোষা কোনো আদরের কুকুরটি কিংবা মানুষটি কারো হাতে নাজেহাল হয় আর তখন নিজে সাতার না জানার কারনে নৌকার অভাবেও তার কাছে পৌঁছানো না যায় আর দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তাদের আকুতি শুনতে হয়, তার নাম “অসহায়ত্ব”।

আমি যখন আমার চোখ বন্ধ করি, আমি পরিষ্কার দেখতে পাই , আমার বর্তমান পরিস্থিতিতে আমার প্রিয় মানুষ গুলির পাশে কিংবা বিপদের পাশে কেউ নাই। এমন কি আমিও যদি কোনো বিপদে আর্তনাদ করি, আমার জন্য কেউ হয়তো দৌড়ে সাহাজ্যের হাত বাড়িয়ে কাছে আসবে না। কারন সে রকমের কোনো বন্ড, মায়া, মহব্বত কিংবা দায়িত্তশীল কোনো মানবের সাথে আমার যোগাযোগ হয় নাই। আমি যাদেরকে আমার চোখের সামনে দেখছি, যেমন বদি ভাই, কিংবা হাবীব ভাই, তারা কেমন যেনো সেলফ কেন্দ্রিক কিছু মানুষ। যে পরিস্থিতির ভয়ে আমি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে চান্স পেয়েও পড়তে চাই নাই, যে ভয়ে বুয়েটে চান্স পেয়েও পড়তে চাই নাই, যে পরিস্থিতির ভয়ে আমি নিজেকে আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধেও এই সেনাবাহিনীতে এসেছিলাম, সেই রকমের ভরষার স্থান আজো আমি তৈরী করতে পারিনি মনে হচ্ছে। তাই যখন আমার অকাল মৃত্যুর কথা মনে পড়ে, যখন মনে পড়ে আমার কিছু প্রিয়জন আছে, যেমন তুমি (মিটুল) অথবা উম্মিকা এদের পাশে হটাত কোনো আকষ্মিক সাহাজ্য এসে হাজির হবে কারো কাছ থেকে এটা আমার মনে হয় নাই। তারা আছে, থাকবে আবার নাইও। আমার মা আমাকে ভালোবাসেন কিন্তু তার সামর্থ নাই যেখানে নিজের জীবন দিয়েও কিছু করতে পারে। আমার বোনেরা তো আরো অসহায়। কাউকেই আমি কোনো প্রকারের দোষারুপ করতে পারি না। আসলে সম্ভবত আমরা সবাই অসহায়।

তবে কেনো জানি আমার শুধু একটা কথা প্রায়ই মনে হয়, কোনো একদিন, আবার বলছি, কোনো একদিন হয়তো আমার এই দুশ্চিন্তার অবসান হবে, আমি আর নিজেকে অসহায় মনে করবো না এবং আমার নিজের উপর নিজেরই কনফিডেন্স থাকবে একাই সব সামাল দেয়ার। কিন্তু কেনো মনে হয়, বা কিভাবে এটা হবে আমার জানা নাই। ইন্টিউশন থেকেই এটা মাঝে মাঝে আসে। হয়তো ঠিক তখন আমার প্রিয়জনগুলিও জানবে না আজকের দিনের এই সময়ে এই পরিস্থিতিতে আমার বুকের ভিতর কতটা রক্ত ক্ষরন হয়ে সেইখানে দাড়াতে পেরেছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *