১৯/০৫/২০১৯-আইএলবিএস হাসপাতালে গমন

মিটুলের শরীরটা মাঝে মাঝেই কেনো জানি খারাপ হয়ে যাচ্ছে। ওর শরীরের ইম্মিউন সিশটেমটা অনেক দূর্বল। মিটুল যখন শারীরিকভাবে কোনো সমস্যায় না থাকে, অনেক পরিশ্রম করার ক্ষমতা রাখে এবং করে। সকালে উঠে নামাজ পড়ে কাজ শুরু করে, তার পর থেকে কাজের বুয়ার জন্য নির্দেশনা, তার সাথে হাতে হাতে কাজ সেরে ফেলা, কলেজে যাওয়া, অফিস করা, সংসারের যাবতীয় দেখভাল, মেয়েদের দিকে খেয়াল রাখা, বাজার করা, বাড়ি ওয়ালী হিসাবে সব ভাড়াটিয়াদের সাথে সমন্নয় করা, বিদ্যুৎ বিল দেয়া, পানির বিল দেয়া, বাড়ি ওয়ালী হিসাবে বাড়ি রক্ষনাবেক্ষন করা, ছাত্রদের পরীক্ষার খাতা দেখা, সারাক্ষন আত্তীয়সজনের খেয়াল রাখা, কি করে না মিটুল!! সপব কাজেই সে আছে। আমি তো খালী অফিস করি আর বাসায় আসি। বাড়ির কোনো কাজই আমি করি না এক মাত্র বাগান করা ছাড়া। এই মিটুল যদি অসুস্থ্য হয়ে বিছানায় পড়ে যায়, আমি আর নাই। তাই ওর শরীর খারাপ হলে সবচেয়ে বেশী টেনশনে পড়ি আমি। রাগ ও করি যে, সারাক্ষন এতো কাজ, আর এতো দেখভাল করার দরকার কি? বিশেষ করে বাকী আত্মীয়স্বজনের জন্য? ওর বাড়ির সব আত্তীয় স্বজন মনে করে, কোনো সমস্যা? মিটুলের সাথে যোগাযগ করো, কোনো দরকারী তথ্য? মিটুলের সাথে যোগাযগ করো। কারো কোনো সাহাজ্য? মিটুলের সাথে যোগাযোগ করো। কেউ টাকা পাঠাবে বিদেশ থেকে? মিটুলের সাথে যোগাযোগ করো। কেউ টাকা নিয়ে যাবে বিদেশে? মিটুলের সাথে যোগাযোগ করো। এত বললাম ওদের আত্মীয়স্বজনের কথা। কিন্তু ওর কলেজের ছাত্র বা কল্গদের কথাই বলি!! একই অবস্থা। কারো কোনো ডকুমেন্ট গেজেটেড অফিসার দ্বারা সত্যায়িত করতে হবে? রাত বারোটা বাজলেও মিটুলের সাথে যোগাযোগ করো। কারো চাকুরী দরকার? মিটুলের সাথে যোগাযোগ করো। ভাড়াটিয়ার কোনো সমস্যা? ম্যাডামের সাথে যোগাযোগ করো। কি যে একটা অবস্থা। আমি কোনো কিছুতেই মিটুলকে বাধা দেই না। করুক। ভালো কাজই তো। কিন্তু এই সব কাজ করতে গিয়ে মিটুলের কোনো প্রকারের রেষ্ট হয় না। সকাল থেকে শুরু করে রাত ১ টা অবধি চলে এই যজ্ঞ। মাঝে মাঝে আমি ওকে ফান করে বলি- ভয়েস অফ আমেরিকা (ভিওএ)। একটা তথ্য ভান্ডার।

মিটুল বেশ মাঝে মাঝেই কয়দিন যাবত ওর শরীর খালী দূর্বল লাগে এই অভিযোগটা আমাকে করছে। আমি নিজেও দেখতে পাচ্ছি- মিটুল অসুস্থ্য হয়ে যাচ্ছে। সি এম এইচে অনেকবার অনেক টেষ্ট করালাম, অনেক মেডিসিন দিলো, ডায়াবেটিস আছে, এসজিপিটি বেশী অর্থাৎ লিভারে একটু সমস্যা আছে কিন্তু খুব একটা যে কঠিন কিছু সেটা ডাক্তাররাও বলছে না। অথচ মিটুল আসলেই অসুস্থ্য হয়ে যাচ্ছে। তাই এবার ভাবলাম, আমাদের সিএমএইচে নয়, বাইরের কোনো প্রাইভেট হাসপাতালে কোনো বিশেষজ্ঞ ডাক্তারকে দেখাই। আমাদের বাসায় ভাড়া থাকেন পাপ্পু নামের এক টিচার। ভালো মানুষ। তার স্ত্রী আমার বউ কে জানালো যে, আজগর আলী হাসপাতালটা নাকি বেশ ভালো। ভাবলাম, আগে সেখানে যাই, দেখি ডাক্তার কি বলে।

আজগর আলী হাসপাতালের একজন ডাক্তার মিটুলের লিভারের টেষ্ট করিয়ে দেখলো যে, ওর লিভারে আসলে সমস্যা আছে যা কিনা স্টেজ-২ এর কাছাকাছি। এই অবস্থায় উনি ইন্ডিয়ার এসকে সারিনার শরনাপন্ন হতে বললেন কারন এই উপমহাদেশে এসকে সারিন নাকি অত্যান্ত নামকরা একজন লিভার সহ অন্যান্য রোগের বিশেষজ্ঞ। তিনি বসেন আইএলবিএস অর্থায় ইন্সটিটিউট অফ লিভার এন্ড বিলিয়ারী সায়েন্স হাসপাতালে।

দেরী করতে চাইনি। কারন আমি মিটুলের স্বাস্থ্য নিয়ে আসলেই চিন্তিত ছিলাম। ওর ভিসা লাগে না কারন সরকারী কর্মকর্তা। ওরই কলেজের আরেক মহিলা কলিগ সাবিহা আপার ও একই সমস্যা বহুদিন যাবত। ওনার সমস্যাটা মিটুলের থেকেও বেশী একিউট। তাই ওরা দুইজনেই আই এল বি এসে যাওয়ার পরিকল্পনা করলো। আমি যেতে চাচ্ছিলাম কিন্তু আমার ভিসা লাগবে, তাই ভিসা ফর্মালিটিজ না হ ওয়া অবধি আমি ইন্ডিয়ায় যেতে পারবো না। মিটুলরা ১৯ মে ২০১৯ তারিখে ইন্ডিয়ার জন্য রওয়ানা হয়ে গেলো। আমি ভিসার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

সকালে রওয়ানা দিয়ে ওরা প্রায় রাত ৮ টার দিকে দিল্লীর পাহাড়্গঞ্জের লক্ষী নারায়ন রোডে একটি হোটেলে উঠে গেলো। সাবিহা আপার মেয়েও সাথে ছিলো এবং সাবিহা আপার মেয়ের স্বামী ও তাদের সাথে আছেন। রাতে ওদের সাথে কথা বললাম। কিন্তু যে হোটেলে ওরা উঠেছে সেটা নাকি ততোটা স্বাস্থ্য সম্মত নয়। বললাম- তাড়াতাড়ি হোটেল পাল্টাও কারন আগে থাকার জায়গা হতে হবে নিরাপদ এবং হাইজিনিক। মিটুল আর সাবিহা আপার জন্য আসলে কোনো গাইড লাগে না, কারন তারা নিজেরাই দায়িত্তশীল এবং অফিসার বনাম বুঝে কোথায় কিভাবে কি ম্যানেজ করতে হবে। তাছাড়া ছেলে মানুষ হিসাবে সাবিহা আপার মেয়ের স্বামী তো সাথেই আছে। আমার দুশ্চিন্তা চিলো না। আমি ইন্ডিয়ার ভিসার জন্য চেষ্টা করে যতো দ্রুত ভিসা পাওয়া যায় সেটা করছি। মিটুল জানে আমি ইন্ডিয়ায় আসছি না কারন ফ্যাক্টরীতে বেশ কাজের চাপ। কিন্তু আমি জানি আমি যাচ্ছি যখনই ভিসা পাবো। আগে পরিবার, তারপর দেখা যাবে কোনটা কিভাবে সামাল দেয়া যায়। ফ্যাক্টরীর জন্য তো আমার পার্টনার আছেই। রোজা চলছে।