১৯/০৯/১৯৮৬-ভগবানের প্রতি

 

হে ভগবান, তোমাকে কিছু বলার আমার সাহস নেই, তোমাকে আমার বুকের অফুরন্ত যন্ত্রনাগুলু দিয়ে প্রতিবাদ করারও শক্তি আমার নেই। কিন্তু তোমাকে ভালবাসা দিয়ে বেঁধে রাখবার ক্ষমতা বা অদম্য ইচ্ছেও আমার নেই। অথচ আমি অনেকবার সব দিক ভেবেছি, চিন্তা করেছি, কল্পনা করেছি, এই জগতে সবচেয়ে কে বেশী আমার আপন, আর সবচেয়ে কার উপর আমার রাগ। যতবারই আমি চারিদিক বিশ্লেষণ করেছি, আমি দেখেছি দু দিকেই তুমি। তোমাকে আমি সবচেয়ে বেশি ভালবাসি। আবার তোমার উপরই আমার রাগ বা গোস্যা সবচেয়ে বেশী। ভালবাসি এ কারনে যে, তোমাকে অস্বীকার করার ইচ্ছে তুমি আমাকে দিয়েছ। ঘৃণার শক্তিও তুমি আমাকে দিয়েছ।  আমি ইচ্ছে করলে তোমাকে অস্বীকার করতেও পারি আবার মেনেও নিতে পারি। তাতে তুমি আমাকে কিছুই বলবে না। আর এ জন্য তোমাকে আমি ঘৃণা করার আগেই আমি তোমাকে পূজা দেই, অন্তর থেকে ভালো বাসি। আবার যখন খুব মন খারাপ হয়, তখন ভাবি, তুমি কেমন গো? চারিদিকের মানুষগুলির মতো আমাকে কেনো তুমি এটা দিলে না, ওটা দিলে না, একতা পরিবার দিলেনা, একটা খেলার ভাই দিলে না, ছলনা করার জন্য মিষ্টি একটা বোন দিলেনা, রাগ করার পিতামাতা দিলে না। কিছুই দিলে না। আবার ভাবি, তুমি তো আমাকে দুটো চমৎকার চোখ দিয়েছো, হাত দিয়েছো, পা দিয়েছো, সুস্থ্য শরীর দিয়েছো। আমি চোখ দিয়ে মন খারাপ হলে তোমার বিশাল নীলাকাশ দেখতে পাই, কোঠাও যাওয়ার প্রয়োজনে আমি সেই হিমালয়ের মতো পাহাড়ের চূড়ায় উথে উচ্চকণ্ঠে চিৎকার করে আমাই আমার কষ্টের বেদনাগুলি ঐ চঞ্চলা সাগরের বুকে ছুড়ে দিতে পারি। আমার থেকেও তো অনেক হতভাগা মানুষ তুমি স্রিষ্টি করেছো যাদের তুমি এ গুলাও দাও নাই। রাগ থেমে যায়, কষ্ট কমে যায়, চোখ ভিজে আসে কোনো এক মায়াজালে। বাচিয়ে তো রেখেছো অন্তত। এটা তোমার বিশ্ব, এটা তোমার রাজত্ব, যাহ কিছু ঘটবে এখানে, সব তোমার আইন। খনিকের তরে যখন তুমি আমাকে তোমার এই মহাবিশ্বে নিয়ে যাও তখন আমি বুঝতে পারি তুমি কতটা বিশাল।

কবি নজরুলের ঐ গানটায় কবি একদম সত্যি কথাগুলিই বলেছেন-

খেলিছো, তুমি বিশ্ব লয়ে, হে বিরাট শিশু। ক্ষনেক্ষনে তুমি ভাংছো আবার ক্ষনেক্ষনেই তুমি আবার নতুন কিছু গড়ছো। রাশি রাশি রবি, সসী, গ্রহ নক্ষত্র সব কিছু তোমার পায়ের তলায় খেলনার মতো লুটুপুটি খায়, তোমার কোনো কিছুতেই কিছু যায় আসে না। অথচ এই আমরা প্রতিনিয়ত কতই না কস্ট, কতইনা দুক্ষে আবার কতই না অহেতুক আনন্দে ফেটে পড়ছি। 

কোনো একদিন তোমার সাথে যেদিন আমার দেখা হবে, আমি শুধু একটা প্রশ্নই আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করবো। 

সবই যদি তুমি ঠিক করে রাখলে, সবই যদি তুমি নিয়ন্ত্রন করলে, তাহলে আমাকে এতো ভালোবাসা আর আখাংখা দিয়ে এই পৃথিবীতে পাঠালে কেনো? তাহলে ওইসব আখাংকা, ভালোবাসা, প্রত্যাশা কি নিছক মায়াজাল?