মাঝে মাঝেই আমার খুব আফসোস হয় কেনো এতো ছোট একটা আয়ুষ্কাল দিয়ে ঈশ্বর আমাদেরকে এমন সুন্দর একটা পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। জানি উদ্দেশ্য আছে ঈশ্বরের কিন্তু সেটাতে কি হাজার বছরের আয়ুষ্কাল আমার হতে পারতো না? কতই না অদেখা সুন্দর জিনিষ না দেখে আমাদেরকে এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হবে। পাহাড়ের সেই গহীন জংগলে কি অদ্ভুত সউন্দর্য্য লুকিয়ে রেখেছে, গভীর সমুদ্রের ভিতরে কারা কিভাবে বাস করে, তাদের সেই সাম্রাজ্য, আইন কানুন, ভালোবাসা কি কিংবা আকাশের মহাশুন্যে কতই না সৃষ্টি আমাদের নজরের বাইরে রয়ে গেলো, এর কিছুই দেখা হলো না। শুধু তাইই নয়, যতটুকু জেনেছি, আমরা যে সৌরজগতটায় বসবাস করি, সেই মিল্কীওয়ে ছায়াপথে আমাদের গ্যালাক্সির কতো আরো দুই কোটি লক্ষ নাকি গ্যালাক্সী আছে। আর সেই প্রতিটি মিল্কীওয়ে গ্যালাক্সিতে নাকি প্রায় চারশত বিলিয়ন নক্ষত্র বিদ্যমান। লক্ষ লক্ষ কোটি গ্যালাক্সির ভেতর একটি গ্যালাক্সির লক্ষ লক্ষ কোটির নক্ষত্রের ভেতর মিডিয়াম সাইজের একটা নক্ষত্র সূর্যের একটা সাধারণ গ্রহে ঘটনা চক্রে আমার জন্ম। তাহলে সেসব লুকানো সউন্দর্য কার জন্য ঈশ্বর সাজিয়ে রেখেছেন? কেইবা দেখছে সেসব অনাবিষ্কৃত রহস্য? সেসব না দেখেই আমাকে একদিন এই প্রিথিভ=বী ছেড়ে চলে যেতে হবে। ছোট এই পৃথিবীর সব ভালো আর সব খারাপের বস্তুগুলিও একে একে দেখা হলো না। আর সেই মহাসমুদ্রের গ্যালাক্সিই বা কি আর সমুদ্রের তলদেশের সাম্রাজ্যই বা কি, কিছুই আমার জন্যে হয়তো ঈশ্বর দেখার অনুমতি দেন নাই। তাহলে কার জন্যে সেসব সৃষ্টি?
ছোট একটা ডলফিন যখন তার থেকেও অনেক ছোট একটা মানুষের সাথে জলের ভিতর খেলা করে, বন্য কুকুরেরা যখন মানুষের বশ মেনে সব কথা শুনে, বাঘেরা যখন মানুষের পিছে পিছে হেটে হেটে তার সব হিংস্রতা একপাশে রেখে মানুষের সাথে খেলা করে, তখন কেনো জানি মনে হয়, কোথাও একটা কমন সম্পর্ক আছে আমাদের সব প্রানিদের মধ্যে। মানুষ যখন মানুষের শত্রু হয়ে যায়, সেখানে তাদের ভাষা এক, জাতী এক, দেশ এক অথচ একে অপরের উপর কতই না হিংস্রতা, অথচ বাঘের সাথে, ডলফিনের সাথে, হাংগরের সাথে এই মানুষেরই আবার নিসশর্ত বন্ধুত্ব হয়ে উঠে অথচ তাদের না ভাষা এক, না জাতী এক কিংবা না অভ্যাস এক। ব্যাপারটা অদ্ভুত না?
ব্যাপারটা আসলে অদ্ভুত না।
এই ব্যাপারটা ঘটে শুধুমাত্র একটা ন্যাচারাল কারনে। সেটা ভালোবাসা আর আনুগত্য। ভালোবাসার থেকে মারাত্মক কোনো অস্ত্র এই পৃথিবীতে আর কিছু নাই। সব প্রানী এই ভালোবাসা বুঝে, সব প্রানী ঘৃণা বুঝে, সব প্রানীর মধ্যে মমত্ববোধ এবং সার্থপরতা সমানভাবে বিদ্যমান। এই একটি কারনেই সব প্রানীরা একে অপরের কাছে বা দূরে সরে যায় অথবা একে অপরের উপর ভরষা হারায়। আরআনুগত্য? আনুগত্য পাহাড়ের চেয়ে ভারী এবং সর্ববৃহৎ দড়ির চেয়ে দীর্ঘ একটি শব্দ.. এর অর্থ নানাবিধ : ত্যাগ, আন্তরিকতা, দান, ভালবাসা........আরো অনেক কিছু।
আবার ঠিক এর উল্টোপিঠে সমানভাবে রয়েছে এতোটাই হিংস্রতা যা আমাদের ছোট এ জীবনের অন্তরে সব হিন্স্রতা সহ্য করার মতোও নয়। আমরা জীবন্ত মানুষকে চোখের সামনে হাতপা বেধে পুড়িয়ে ফেলি, ছোট ছোট ভুলের জন্য আমরা মানুষকে পাথর দিয়ে জীবন্ত আঘাত করে করে ক্ষত বিক্ষত করে একেবারে মেরেই ফেলি। কারো মনে কোনো দয়ার উদ্রেক হয় না। স্মার্ট বোম্ব, কন্টিনেন্টাল মিজাইল, এয়ার ক্র্যাস, পেট্রোল বোম্ব সব কিছু দিয়ে একে অপরের উপর এমনভাবে আঘাত করি, তাদের আয়ু থাকা সত্তেও আর বেচে যাওয়ার কোনো পথ থাকে না। কেনো এত রাগ, কেনো এতো দন্দ বা কিসের কারনে আমরা এতো কিছু করি?
ম্রিত্যুর পর সবার আকার এক, না সেখানে প্রান থাকে না থাকে কোনো শক্তি বা বাহাদুরী। সবচেয়ে শক্তিধর যিনি দাপটে ছড়ি ঘুরিয়ে বেরিয়েছন এই মেঠোপথে, অভনব কায়দায় বসেছেন সিঙ্ঘাসনে, তিনিও যা আর যাকে তিনি অত্যাচারে ছিন্নভিন্ন করে প্রান নাশ করেছে তার অবস্থাও তা। যদি কোনো কিছুই স্থায়ী করে নিজের করে রাখা না যায় তাহলে এতোসবের কি দরকার?
তারপরেও আমাদের মতো মানুষদের হোশ হয় না, জীবনের পরে মৃত্যুর কথা মনে পড়ে না, ক্ষমতা আর প্রতাপ দিয়েই চলি সবার চোখের সামনে।