Categories
কথায় বলে, মিথ্যাও কখনো কখনো সত্যি হয়ে যায়। কোন একটা মিথ্যাকে হাজার বার বললে নাকি মিথ্যাটা সত্য হয়ে যায়। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে মানুষ একটা মিথ্যা বারবার এতোবার বলে যে, মিথ্যেটাই সত্যি হয়ে যেতে শুরু করে। বিশেষ করে এমন একটা মিথ্যে যা সত্য লুকুনোর জন্য বলা হচ্ছে। কিন্তু কথাটা কোনো কালেই সত্য নয়। যদিও সত্যি আর মিথ্যার মধ্যে পার্থক্য করা সবসময় সহজ হয় না। মিথ্যা হচ্ছে এক প্রকার ছলনা, মিথ্যে যে বলে সে নিজের সাথেই ছলনা করে থাকে। মিথ্যে হলো সেই জাল যা একটা মানুষ তার নিজের অজান্তেই সে নিজের জন্য বিছায়। কিন্তু সে ভাবে যে, সে সামনের মানুষটাকে ঠকাচ্ছে, বা বোকা বানাচ্ছে। যখন মানুস নিজের কিছু লুকায় তখনই তার সতর্ক হওয়া উচিত। কারন যখন সত্যির সীমানা পার হয়ে যায়, তখনই মিথ্যার জাল বিছানো হয়। সত্যিটা কখনো কল্পনা হয় না। আর কোনো কল্পনাকেও সত্যি বলা যায় না। সত্যি কখনো কারো এজেন্ডা হতে পারে না। সত্যি সেটাই যেটা বাস্তব। মেকী চোখের জল ফেলেও সত্য বেশীদিন লুকিয়ে রাখা যায় না। একটা সময় আসে, মিথ্যে চোখের জল আর কাজে লাগে না। সে সময় যেটা হয় সেতা হচ্ছে, মিথ্যা প্রকাশের ব্যক্তিকে মানুষ গিরগিটির চরিত্রের মতো বিশ্লেষন করে, বিচার করে। গিরগিটির উপর কেউ দয়া দেখায় না। সত্য লুকিয়ে মিথ্যাকে স্থাপন করার চেষ্টায় কারো বিশ্বাসের খুন যখন হয়, তখন শারীরিক খুনের আর কোনো প্রয়োজন পড়ে না।
মিথ্যা একটা প্রতারনাও। আর এই প্রতারনা- এটা মানুষের প্রকৃতি। কিন্তু এটা একজন মানুষ একা করতে পারে না। এই প্রতারনার সাথে অনেক কিছু জড়িয়ে থাকে, থাকে পূর্ব প্রস্তুতি, থাকে দলবদ্ধ একাত্ততা আর এক যোগে কার্যসম্পাদনের হিসাব নিকাশ। কোনো কোনো সময় এই প্রতারনার নিমিত্তে কিছু কিছু নাটক এমনভাবে বানানো হয় যাতে সাধারনের চোখে মনে হবে এটাই সব সত্যি কিন্তু এর পিছনের মুল উদ্দেশ্য অনেক গভীরে। শুধু ভরসার স্থান তৈরির জন্যই নাটক তৈরী করা হয়। যখন এই কৃত্রিম ভরসার স্থান উম্মোচিত হয়ে চোখের সামনে বড্ড ভয়ংকর এবং আসল চেহাড়াটা বেরিয়ে আসে, তখন নিজের কাছে নিজকে বড় বোকা মনে হয়। কারন মিথ্যে ভরসায় ভর করে কেউ যখন নিজের ইচ্ছায় সেই জায়গায় চলে আসে যেখান থেকে আর কেউ ফিরে না, তখন, বাকী ইতিহাস শুধু নীরব ইতিহাসই হয়ে থাকে। কখনো তা বাইরে আসে না।
এসব পরিস্থিতি আমাদের জীবনে প্রায়ই ঘটে থাকে। আমরা সত্য আর মিথ্যাকে অনেক সময় আলাদা করতে পারি না। ভিত্তিহীন আর অকারন গুরুত্তহীন কথা শুনবার সময়ে যদি নিজের বিবেচনায় সেটা বুঝে ফেলা যায়, তাহলে বুঝতে হবে তারা একটা গুনের অধিকারী তাদেরকে সতর্ক করে দেয় আর নিজের চেতনাকে বাচিয়ে দেয়। কিন্তু যদি মিথ্যের বোঝা বুদ্ধিমত্তার উপর চেপে বসে তাহলে মানুষ ধীরে ধীরে চোরাবালির বাকে আটকে পড়ে। সেখান থেকে সময় মত আর বেরিয়ে আসতে পারে না। তখন আফসোস ছাড়া আর কিছুই থাকে না। ঠিক এসময়েই ভোক্তভোগী মনে করে এটা তার জন্য ছিলো একটা ষড়যন্ত্র। ষড়যন্ত্র প্রতারনার চাইতেও ভয়াবহ আঘাত।
ষড়যন্ত্র যখন শুরু হয়, তখন এর ডান দিক, বাম দিক, সামনে পিছে সব জায়গা থেকেই কিছুটা নোংড়া গন্ধ আসতে থাকে। যারা এই দূর্গন্ধ সম্পর্কে একটু খেয়াল করেন তারা হয়তো ষড়যন্ত্রের আভাষটা বুঝতে পারেন। অনেক সময় এই গন্ধ কোনো বড় নাটকের ছোট অংশের আভাষ দেয়। অনেক সময় এই ষড়যন্ত্র হয় লোভের, ক্ষিদের, রাজনীতির অথবা অন্য কিছু। তখন দাবার গুটির মতো চেকমেটকেও চেকমেট করা হয়। এখানে তখন ইদুর বিড়ালের খেলাও বলা চলে। যদিও এই ইদূর বিডালের খেলায় অন্য রাঘব জানোয়ারগনও জড়িয়ে থাকে। ষড় যন্ত্রের এই অধ্যায়ে সবচেয়ে বেশী নজর থাকা উচিত নিজের নিরাপত্তার উপর। কারন, যখন কেউ প্রথমবার আঘাত করে, তখন সে অনেক পরে বুঝতে পারে যে, যাকে আঘাত করা হয়েছিলো, পালটা আঘাতটা সেও করবে। যন্ত্রনার বদলায় যন্ত্রনা, আঘাতের বদলায় আঘাত। এতদূর অবধি যদি কেউ না সতে চায়, তাহলে তাকে সবচেয়ে বেশী সতর্ক থাকতে হবে সেই সব জিনিশ থেকে যার নাম লুজ টক, কিংবা ভিত্তিহীন আড্ডার রাজত্ব। লুজ টক, গল্প সল্প, বা গুজব এসব চলতেই থাকবে, কিন্তু যে শুনে তাকে তার বুদ্ধি আর বিবেচনার মাধ্যমে সেই সব কথা এক কান দিয়ে শুনে অপর কান দিয়ে বের করে ফেলাই হচ্ছে সমাধান।