আসলে খুব হাপিয়ে উঠেছিলাম ৬ ফিল্ড রেজিমেন্টে। উপ-অধিনায়ক মেজর রফিকের ধুর্ততা যে কত গভীরের, সেটা যে না ভুক্তভোগী, সে বুঝবে না। খুবই চালাক একজন বান্দা। ৬ ফিল্ড আসলে প্রথম থেকেই বেশ বুদ্ধিদীপ্ত এবং জ্ঞানী সিও বা উপ অধিনায়ক পায় নাই। কিন্তু যারা সিও হিসাবে বা উপ অধিনায়ক হিসাবে এই ইউনিটে পোষ্টিং হয়েছেন, তারা কিন্তু কোনোভাবেই বোদাইও ছিলেন না। যেমন, রেইজিং সিও ছিলেন, লেঃ কর্নেল দাউদ, লেঃ কর্নেল আহসান উল্লাহ, লেঃ কর্নেল খাইরুল, আরো অনেকে। এই ক্ষুদ্র একটি ইউনিটে আমার ক্ষুদ্র সময়ে ৬ ফিল্ডে অনেক কিছু ঘটে গেছে। আমার জীবনের অনেক নতুন কিছু ঘটেছে। কোনোটা খুবই আনন্দের, আবার কোনোটা জীবনের জন্য খুবই মর্মান্তিক। কে জানে, ভবিষ্যত কি বা কোথায় যাচ্ছি।
গত পহেলা জানুয়ারীতে ৬ ফিল্ড রেজিমেন্ট থেকে আমার পোষ্টিং হয়ে গেছে। নতুন ইউনিট ২৯ ডিভ লোকেটিং। বগুড়া সেনানিবাস। বগুড়া এলাকায় দুটু সেনানিবাস আছে, একটার নাম মাঝিরা সেনানীবাস এবং আরেকটা জাহাংগিরাবাদ সেনানিবাস। ২৯ ডিভ লোকেটিং ইউনিট জাহাংগিরাবাদ ক্যান্টনমেন্টে।
মাইনর ইউনিট। মেজর ইকবাল ইউনিটের ওসি। বেশ ভদ্র মানুষ। হাসি খুসী মানুষ। থার্ড লং এর উনি। পাশেই ১ ফিল্ড রেজিমেন্ট, তার পাশে ৬ ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটালিয়ান এবং ৩২ এসটি ব্যাটালিয়ান। এখানে একটা ফিল্ড এম্বুলেন্স আছে। এই মিলিয়ে আসলে জাহাংগিরাবাদ সেনানীবাস। ১১ আর্টিলারী ব্রিগেড, ১ ফিল্ড এবং আমাদের ইউনিট একদম লাগোয়া।
১ ফিল্ডের সি ও লেঃ কর্নেল মাহবুব স্যার। আমার বেসিক কোর্ষের আই জি ছিলেন। তাকে সবাই পন্ডিত বলেই চিনে। আমার ২৯ ডিভ লোকেটিং ইউনিটে আমার সবচেয়ে আনন্দের ব্যাপার হচ্ছে যে, আমারই কোর্ষ্মেট ক্যাপ্টেন আলমাস আছে। আমরা মোট তিন জন অফিসার ইউনিটে। ইকবাল স্যার, আলমাস আর আমি।
আমরা সবাই মেসে থাকি। সময়টা ভালোই কাটে। বেশ ঘরোয়া পরিবেশের মধ্যে জাহাংগিরাবাদ সেনানিবাস। শহরের কাছাকাছি। বগূড়া শহরে যেতে মাত্র সময় লাগে ১৫ মিনিট। বগুড়ায় আমার আরো একটি ভালো জিনিষ ছিলো যে, এই শহরেই মিতুলের এক বোন বাস করে। উনার সাথে আমার কখনো দেখা হয় নাই। আমি না উনাকে চিনি, না উনার জামাইকে চিনি , না উনার কোনো পরিবারের সদস্যকে চিনি। তবে শুনেছি উনি নাকি এখানে বেশ ভালো ব্যবসা করেন।
যে কারনে মিতুলের এই আত্তীয় আমার জন্য সুখবর হয়েছিলো সেটা হচ্ছে, মাঝে মাঝে যদি মিতুলকে বগুড়ায় আনার দরকার পড়ে তাহলে মিতুল ওর বোনের বাসায় থাকতে পারবে, আর আমিও ওখানে গিয়ে একটু ভালো সময় কাটাইতে পারবো।
দেখা যাক, জাহাংগিরাবাদ আমার জীবনে কতটা সমৃদ্ধি আনতে পারে। এখানকার জিওসি হিসাবে আছেন মেজর জেনারেল সাদিক। সিলেটী মানুষ। এডিসি হিসাবে কাজ করে লেঃ দেলোয়ার। সে এস টি ব্যাটালিয়ান থেকেই গেছে এই মাত্র কয়েকদিন আগে। দেলোয়ার আমার রুমের পাশি থাকতো, আমরা দুজনেই ভালো আর্ট করতে ভালোবাসতাম।
দেলোয়ার এডিসি হয়েই এসটি ব্যাটালিয়ান থেকে চেঞ্জ করে ইনফ্যান্ট্রিতে চেঞ্জ করলো। বুঝতেছি যে, সম্ভবত জেনারেল সাদিকের মেয়ের সাথে দেলোয়ার কনো সম্পর্ক করতে যাচ্ছে।