২০/০৫/২০২০-যে নদীর স্রোতধারা থেমে যায়

Categories

মাঝে মাঝে আমার সাফল্যের দিকে তাকালে আমার নিজের ভাল লাগলেও কেনো জানি এটাও মনে হয়, আমার এই সাফল্যের দরকার ছিলো না। আমার আজকের দিনের সাফল্য না হলে সবাই একটা গন্ডির মধ্যে থাকতো। জীবন নিয়ে ভাবতো। চিন্তা করতো। অভাব মানুষকে একটা নির্দিষ্ট গন্ডির মধ্যে একত্রে বসবাস করতে বাধ্য করে। ওর আচরন ইদানিং আমার কাছে অনেক উদ্দত্যপূর্ন মনে হয়। কোনো কিছুই বলা যায় না। আর্গুমেন্ট আর যুক্তির যেনো কোনো শেষ নাই। আমি আসলে ওর উপরে আমার কমান্ড এক প্রকার হারিয়েই ফেলেছি বলা চলে। আমার কোনো সুখের কথা, ভালো লাগার কথা, আমার কোনো সাফল্যের কথা, আমার কোনো কষ্টের কথা আজকাল ওর সাথে শেয়ার করা খুব মুষ্কিল। তার এসব শোনার কোনো যেমন সময় নাই, তেমনি ইচ্ছাও নাই বলে মনে হয়। কবে শেষ আমি আমার জীবনের একান্ত কিছু কথা ওর সাথে শেয়ার করতে পেরেছি , সেটা আর মনে পড়ে না। এর জন্য দায়ী আমি নিজেও। কিন্তু আমার কোনো অনুশোচনা নাই। ও নিজেও আসলে আমার অনেক কিছুই জানে না। এটা ওর ব্যর্থতা। ধীরে ধীরে মানুষ যখন কারো কম্পেনিয়ন থেকে সরে যেতে থাকে, তখন, অনেক কাছে থেকেও সে অনেক দূর। এই কাছে থাকার কোনো মানে হয় না যখন অন্তরে অন্তর লাগিয়ে কোনো কথা হয় না। তার থেকে বিস্তর দূরে থাকা এক প্রকার শান্তনাও ভাল।

তবে একটা অভিজ্ঞতা বলছি যে, মহিলাদের আর্থিক সাধীনতা যখন পরিপূর্ন হয়ে যায়, তখন তারা অনেক দেমাগী হয়ে উঠে। আর্থিক সাবলম্বিতা একটা নারী স্পেসিসকে অনেক বেশী ইমব্যালান্স করে দেয়। নারী স্পেসিসরা অতক্ষন পর্যন্ত ক্রিয়েটিভ, যতক্ষন পর্যন্ত তার কাছে নিয়ন্ত্রিত কমান্ড, ফান্ড, এবং রিসোর্স থাকে। যখনই এই জিনিষগুলি অঢেল আকারে হাতে চলে আসে, তখনই সে খেই হারিয়ে ফেলে বলে আমার ধারনা। ওর বেলায়ও আমার কাছে তাই মনে হচ্ছে। একা থাকা যায়, আর সেই একা থাকার জন্য যা যা লাগে এটা যখন নিশ্চিত হয়ে যায়, দেখা যায় মহিলা স্পেসিসরা অনেক বেপরোয়া হয়ে উঠে। তারা সাধারনত একা থাকাকে ভয় পায় না। বরং কারো চাপ নাই এটা ভেবে এক প্রকার শান্তিতেই থাকে। ব্যাপারটা আমি মাঝে মাঝেই উপলব্দি করি। কিন্তু আমি আবার ভুলে যাই। যদিও ভুলে যাই, তারপরেও আমার মধ্যে একটা ট্রান্সফর্মেশন হচ্ছে। আমি ধীরে ধীরে পরিবর্তীত হচ্ছি। হয়তো আরো সময় লাগবে।

আমার কিছু কিছু দায়িত্ত ছিলো। বিশেষ করে সংসারের জন্য। আমার এই দায়িত্ত প্রায় শেষের পথে। আমি ওকে সাবলম্বি করে দিয়েছি, মেয়েকে ডাক্তারী পড়িয়েছি। ছোট মেয়ে এখনো পাইপ লাইনে। তারপরেও হিসাব করলে দেখা যায়, সিংহভাগ দায়িত্ত প্রায় শেষ। এখন কে কিভাবে তাদের লাইফ সেট করবে বা করা উচিত বলে মনে করবে, এটা তাদের নিজস্ব ব্যাপার। এইসব ব্যাপার নিয়ে বা তাদের লাইফকে নিয়ে আমার কোনোই দরকার নাই বেশী করে ভেবে ভেবে আমার মানসিকতায় আঘাত করা। তাদের কেউ মানষিকভাবে সুখি হতে পারলো না, তাতে আমি কি করতে পারি? কেউ তার পরবর্তী লাইফে সেট করতে পারল না, তাতে আমি কি করতে পারি? আমার কাজ রশদ জোগান দেয়া। আমি সেটা করেছি কিনা তার উপর আমার নিজের সেটিসফেকসন নির্ভর করবে। হ্যা, যদি তাদের সাফল্যও আমার চোখে পরে তাহলে আমার সেটিসফেকসন হবে ডাবল যে, আমার সমস্ত চেষ্টা সার্থক হয়েছে, আমার ভালো লাগবে। কিন্তু প্রয়োজনীয় সাপোর্ট দেয়ার পরেও যদি তারা কেউ সুখী না হয়, তাহলে আমার কি করার আছে? যদি কিছু করারই না থাকে, তাহলে উত্তম হচ্ছে, নিজেকে তার মধ্যে চুবিয়ে রেখে নিজের ক্ষতি না করা।  

আমি সেটাই করছি এখন। আমি জানি, আমার জন্য এখন অনেকেরই আর আগের মত এতো মহব্বত থাকার কথা না। সময়ও নাই। সবাই সবাইকে নিয়েই ব্যস্ত। এখন লাইফ সবার জন্য আলাদা। এক ঘরে থেকেও সবাই আলাদা আলাদা। কারো জন্য কারো সময় নাই। তারমধ্যে আবার, সবাই খালি বলতে চায়, কেউ শুনতে চায় না। তাই আমিও আর বলি না। যতোক্ষন নিজের কাছে মাল আছে, ততোক্ষন তুমি রাজা। এটা হোক কোনো মহিলারা ক্ষেত্রে, বা হোক কোনো পুরুষের জন্যে। তাই নিজের আরামের জন্য, আনন্দের জন্য সব কিছু একেবারে বিলিয়ে দিয়ে নিজে দাতা হাতেম তাই হওয়া উচিত না। এটা নিজের বউই হোক, আর ছেলেমেয়েই হোক, বা অন্য যে কেউ।

আমি একটা জিনিশ খুব ভালোভাবে লক্ষ্য করছিলাম যে, তানির দাম্পত্য জীবনের ব্যার্থতার পর, ও নিজে তার পলিসি পালটেছে এইভেবে যে, যদি কখনো ওর জীবনেও এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় তাহলে? তাই, আগে থেকেই এর সাবধানতার অংশ হিসাবে নিজে সাবলম্বি হই, তারপর যা হবার হবে। আর সম্ভবত এই ধারনার পরিপ্রেক্ষিতে যেখান থেকে অর্থ আসুক, সেটা আগে নিজের জন্য সেভ করে বাকী সব খরচ হতে হবে আমার কাছ থেকে যাতে তার নিজের সাবলম্বিতা নষ্ট না হয়। এই ধারনাটা আমার কেনো হয়েছে আমি জানি না, কিন্তু আমার ভিতরে যেনো এটাই মনে হচ্ছে ওর ব্যবহারবিধিতে। অনেক কিছুই যেন আগের মতো নাই। আমার কোনো দুঃখ নাই। আমি তো চেয়েইছিলাম, সর্বাবস্থায় ওরা ভালো থাকুক। এমন কি আমার জন্য না , ওদের জন্যই ওরা ভালো থাকুক।

কিন্তু আমি তো আমি। আমি সর্বদা এমন একটা ডিফেন্স লাইনে থাকতে চাই, যাতে অন্তত আমিও সর্বাবস্থায় কারো কাছে হাত পাততে না হয়। আমি জানি আমার কিছু লোন রয়েছে সোনালি ব্যাংকে। এই টাকাটা নিয়ে আমি চিন্তিত না। কারন যা লোন আছে তার থেকে অনেক বেশী আছে আমার এসেটস। তাই আমি ভাবছি, ধীরে ধীরে আমি আমার লাইফটাকেও এমনভাবে পরিবর্তন করবো যাতে কারো কাছেই আমার কোনো কিছুর জন্যই মুখাপেক্ষি হতে না হয়। এমনকি ওর কাছেও না। একসাথে থাকার মধ্যেও দূরে থাকার ব্যাপারটা আমি অভ্যস্থ হয়ে গেছি প্রায়। এটাও ও পেরেছে বলে আমার ধারনা। কিন্তু এটা আমার জন্য যতোটা না খারাপ, তার থেকে অনেক বেশি খারাপ ওর জন্যে।  

একটা কথা কখনোই আমি ভুলি না যে, যে নদীর স্রোতধারা থেমে যায়, তার জলের বিশুদ্ধতাও নষ্ট হয়। আমি কখনোই থেমে থাকতে চাই না। যেখান থেকেই হোক, যেভাবেই হোক, আমি আমার জীবনকে আনন্দেই ভরে রাখতে চাই। এটা যার বিনিময়েই হোক। আমার মাথা নত করার কোনো কারন আগেও ছিলো না, এখনো নাই।