উচ্ছিষ্ঠ সময়ের রাজত্ব
২০২১
২০ জুলাই
ভরষা করা দোষের নয়। মানুষ যদি মানুষের উপর ভরষা না করে, তাহলে ধ্বংস বেশী দূরে নেই। কিন্তু কারো উপর ভরষা করার আগে সতর্ক থাকা খুবই জরুরী। ইচ্ছাকে ভালোবাসায়, আর ভালোবাসা থেকে সম্পর্ক তৈরী করার সময় এই সতর্ক থাকা ভীষনই প্রয়োজন। কিন্তু তুমি এসবের কোনো কিছুই না জেনে শুধু ইচ্ছাটাকে ভালোবাসা আর শ্রদ্ধায় তুমি সম্পরকটা করেছো যেখানে তুমি কোনো কিছুই ভাবো নাই। তুমি পরিশ্রমী, তুমি সাহসী যদি কেউ পাশে থাকে, তুমি সৎ সেটা নিজের কাছে এবং আর তোমার জীবনের হিসাব তুমি জানো। আর তোমার মনে যে সপ্ন ছিলো সেটা পুরন করার জন্যই তুমি একটা সমঝোতা করেছো নিজের সাথে নিজের। আর সেটা তুমি সততার সাথে পালনও করছো। তোমার জীবনে এই গুরুত্বপূর্ন সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় আসলে তোমার সামনে কেউ ছিলো না। আর থাকলেও কোনো লাভ হতো না সেটা তুমি হারে হারে জানো। কারন যারা থেকেও ছিলো, তারা আসলে কখনোই তোমাকে মুল্যায়ন করেনি, করতোও না। তুমি অথবা যার সাথে তুমি এমন একটা সম্পর্ক করেছো, তোমরা কখনোই এটাও ভুলে যেতে চাও নাই যে, এই সম্পর্কের সামাজিকভাবে আসলে কোনো স্বীকৃতিও নাই। কিন্তু তোমার চোখ বন্ধ করে ভরষা করার ফল আমি কখনোই সেটা বৃথা যেতে দিতে চাই না। কারন তুমি অন্তত তোমার সব কিছু দিয়েই আমাকে মেনে নিয়েছো। এখানে গাদ্দারী করার কোনো প্রকারের অবকাশ বা সাহস আমার ছিলোনা, নাই আর ভবিষ্যতে থাকবেও না। ভদ্রতার পিছনে আমার কোনো প্রকার মুখোস কিংবা শয়তানীও নাই। কারন আমি জানি, এই জগতে আমাকে ছাড়া তোমার আর কেউ নাই, হোক সেটা তোমার জন্মদাতা বাবা বা মা অথবা তোমার রক্তের কেউ। এই অবস্থায় আমি তোমাকে ফেলে গেলেও আমার চোখ বারবার ফিরে তাকাবে পিছনে যেখানে তুমি পড়ে আছো। আমি সেটা কখনোই করতে পারবো না। ভাবো তো একবার- আমি চলে যাচ্ছি, তুমি চেয়ে চেয়ে দেখছো আমার নিষ্ঠুরতা, আর তুমি ভাবছো, তোমার সারাটা দুনিয়া এখন অন্ধকার। তোমার মুখ বন্ধ হয়ে যাবে, তুমি ভাষাহীন হয়ে যাবে, তখন তোমার চোখ শুধু কথা বলবে। আর চোখের ভাষা তো একটাই। জল। এই জল দেখার জন্যে আমি কখনো প্রস্তুত নই।
এই প্রিথিবীতে কে আছে তোমার, আর কে নাই তাদের সবার শক্তি, ভালোবাসা আর ভরষা যোগ করলেও সেই ভরষার সাথে একদিকে শুধু আমি, এটাই তোমার কাছে পৃথিবীর সর্বোত্তম শক্তি। আর তুমি এতাই প্রমান করেছো এই পারুর কেসে। সারাটা গ্রাম, আইন, থানা, টাকা পয়সা, নেতা, মাদবরী, সন্ত্রাসী, চোখ রাংগানি একদিকে আর তুমি একাই একদিকে ছিলে। আর সেই শক্তিটাই তুমি প্রতিনিয়ত পেয়েছো এই ভরষার মানুষটার কাছে। কারন তুমি জানো, আর সবাই পালিয়ে গেলেও আমি অন্তত পালাবো না।
কেনো তুমি অন্য কারো চোখে চোখ রাখতে পারো না, কেনো তোমার মনে অন্য কারো স্থান হয় না, কখনো কি এটা খুব মনোযোগ সহকারে নিজেকে প্রশ্ন করেছো? ধর্মের কথা আলাদা, আল্লাহর দোহাই আলাদা ব্যাপার। কিন্তু এর বাইরেও তো অনেক লজিক আছে। সেই লজিক দিয়েও কি কখনো ভেবেছো কেনো হয় না সেগুলি? এর উত্তর একটাই- টোটাল সারেন্ডার। মানে সম্পুর্ন আত্তসমর্পন। যখন কোনো মানুষ তার নিজের মন তৃপ্তিতে থাকে, যখন চোখ ভালো ঘুম পায়, যখন শরীরের চাহিদা পূর্ন হয়, তখন শরীর, দেহ, মন, কিংবা আত্তা কারো দিকে ছুটে যেতে চায় না। যেমন ছুটে যায় না চাঁদ পৃথিবীর বলয় থেকে, কিংবা প্রিথিবী সূর্যের বলয় থেকে। তাদের যতোটুকু শক্ত্র প্রয়োজন তাদের নিজ নিজ অক্ষে চলার, ঠিক ততোটাই তারা পায়। তাহলে আর অন্য কোনো গ্রহের কিংবা নক্ষত্রের দারস্থ হবার কি প্রয়োজন?
মানুষ তখনি ছুটে যায় এক ঘাট থেকে আরেক ঘাটে যখন সে তার সঠিক তরী খুজে না পায়। আর সঠিক ঘাটের সন্ধান যখন একবার কেউ পায়, তার আর অন্য ঘাটে যাওয়ার অর্থ ভুল ঘাটে চলে যাওয়া। ভুল ঘাট মানুষকে ভুল পথেই নিয়া যায়। আর কেউ যখন একবার ভুল পথে যাত্রা শুরু করে, সেখান থেকে ফিরে আসার অন্য কোনো বিকল্প রাস্তা হয়তো তার জানাই নাই। যদি সেই অচেনা রাস্তায় একবার কেউ পড়ে যায়, সেখানে প্রতিটি মানুষ তার অচেনা। অচেনা মানুষের কাছে চোখের জলের কোনো মুল্য থাকে না।
আর মুল্যহীন জীবনে সপ্ন তো দূরের কথা, বেচে থাকাই কষ্টের। কষ্টে ভরা জীবন যখন সামনে চলতে থাকে, তখন মানুষের এই জীবনের প্রতি মায়া হারিয়ে ফেলে, ভগবানের উপর আস্থা হারিয়ে ফেলে। ঈশর আছে এটাই তখন আর বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে না। তারপরেও দূর্বল চিত্তের মানুষেরা যাদের কোনো কুল কিনারা আর থাকে না, যেমন লামিয়া বা শারমিন, তারা ওই অচেনা, অসুন্দর জীবনকেই মানিয়ে নিতে শুরু করে। সেখানে তখন আর ভগবানের কোনো অস্তিত্ত থাকে না বা তারা ভগবানকে মানেই না। ধর্ম পালন তো দুরের কথা।
তোমার দুষ্টুমি যেমন পাগলামী, আমার কাছে তোমার পাগলামীও তেমন মিষ্টি, তোমার কান্নাও আমার কাছে ঠিক ওই রকমের। তোমাকে ভালো রাখাই আমার কাজ। আর সেই ভালো থাকাটা নির্ভর করে তোমার আত্তার উপর তুমি কতোটা তৃপ্ত। এই প্রিথিবী থেকে চাঁদ যতো সুন্দর মনে হয়, নীল আকাসের সাথে চাদকে যেমন কোনো এক যুবতীর কপালের টীপ মনে হয়, অথবা অনেক দূরের কাশবন যখন সাদা মেঘের মতো হাওয়ায় দুলে দুলে মনকে দোলায়িত করে, যখন ওই চাদে গিয়ে পা রাখা যায়, কিংবা কাশবনের মাঝে হাজির হওয়া যায়, তখন তার আসল রুপ দেখে দম বন্ধ হয়ে আসে। সেই চাঁদ আর কাশবন কেনো জানি মনে হয় এটা একটা খারাপ সপ্ন ছিলো। আমরা সেখানে বসবাস করতে পারি না। আবার ছুটে আসতে চাই এই গাছ গাছালী ভর্তি নোনা সেঁতসেঁতে সোদা গন্ধের মাটিতে যেখানে বর্ষায় গাছের পাতা বেয়ে বেয়ে টিপ টিপ করে ফোটা ফোটা পানি আমাদের নাকের ডগা দিয়ে বুকের ভিতরে এসে অন্তর শীতল করে দেয়।
একটা মানুষের শান্তিতে আর সুখে বসবাসের জন্য এই পৃথিবীর অনেক কিছু লাগে না। প্রিন্সেস ডায়ানার একেকটা নেকলেসের দাম ছিলো কোটি কোটি টাকার। তার একেকটা ড্রেসের দাম ছিলো হাজার হাজার ডলার। সাথে ছিলো রাজ প্রাসাদ। কি ছিলো না তার। ছিলো সবুজ চোখের মনি, ঈশ্বর যেনো তাকে একাই রুপবতী করে পাঠিয়েছিলো। অথচ মনে তার কোনো শান্তিই ছিলো না। সেই শান্তির খোজে শেষতক রাজ প্রাসাদ ছাড়তে হয়েছে। অন্যের হাত ধরতে হয়েছে। আর মাত্র ৩২ বছর বয়সেই তাকে এই প্রিথিবী ছাড়তে হয়েছে। যদি বাড়ি, গাড়ি, জুয়েলারী, আর টাকা পয়সাই হতো সব সুখের মুল চাবিকাঠি, তাহলে ডায়নার থেকে সুখী মানুষ আর এই প্রিথিবীতে কেউ ছিলো না। কিন্তু সেটা কি আসলেই সুখী ছিলো?
একটা তরকারীতে নুন কম হতে পারে, একটা পরোটা পুড়ে যেতে পারে, তার স্বাদ কিংবা মজা হয়তো একটু হেরফের হতেই পারে কিন্তু সেটা হয়তো একদিন বা দুইদিন। কিন্তু ভালোবাসা আর মহব্বতে যখন নুনের কমতি হয়, পুড়ে যায়, তখন জীবনের মজাটাই শেষ হয়ে যায়। আর জীবনের মজা যখন শেষ হয়ে যায়, তখন এসি রুমেও ভালো ঘুম হয় না। নীল আকাশ দেখেও কবিতা লিখতে ইচ্ছে করে না। তখন যেটা মনে হয় তা হচ্ছে বিষাদময় রুচী। সেই রুচীতে আর যাই হোক পেট ভরে না। আর পেটে ক্ষুধা রেখে কোনোদিন কারো ভালো ঘুম হয়েছে তার কোনো প্রমান নাই।
আমি তোমার জীবনে সেই রকমের একটা অলিখিত ভরষা। এই ভরষার কোনো ডেফিনিশন নাই। এই ভরষার কোনো আইন গত দিক নাই বটে কিন্তু আমার নিজের অনেক দায়িত্তশীলতা আছে যেখানে আমিই আইনপ্রনেতা, আর আমিই সবচেয়ে বড় বিচারক। হয়তো সমাজকে আমি তুরি দিয়ে উড়িয়ে দিতে পারবো না, কিন্তু আমি সেটাই করততে পারি যাতে তুমি তুড়ি দিয়ে সবাইকে এটাই করতে পারো যে, তুমি নিজেও একটা শক্তি।
আজ তুমি সেই বিগত বছরগুলির দিকে তাকিয়ে দেখো? তুমি দেখতে পাবে যে, সেইসব বছরগুলিতে অনেক ঝং ধরা ছিলো। আগাছায় ভরা একটা কঠিন পথ ছিলো। কিন্তু আজ থেকে ৫ বছর পরেরদিন গুলি দেখো, সেখানে প্রতিদিন তোমার জীবন মোড় নিয়েছে। বাকেবাকে সমস্যা ছিলো কারন সমস্যা গুলি হয়তো আমার নজরে ছিলো না। কিন্তু আজ তোমার সেই বছরগুলির সাথে তুলনা করলে স্পষ্ট দেখতে পাবে, আকাশের মেঘ তোমার ঘরেই রংধনু হয়ে একটা বাগান তৈরী করেছে। সেই বাগানে তুমি যখন খুসী যেভাবে খুসী বিচরন করতে পারো। এই বাগানের একচ্ছত্র মালিকানা তোমার নিজের। এখানে একটা আম খেলেও শরীর চাংগা হয়ে উঠে, এখানে একটা ডিম খেলেও শতভাগ কাজ করে। অথচ আজ থেকে ৫ বছর আগে সেই একটি আম কিংবা একটি ডিম এমন করে খেলেও শতভাগ কাজ করতো না। কারন তখন ভরষার জায়গাটা ছিলো একেবারেই অনিশ্চিত। যা এখন পুরুটাই উলটা। আর এটাই খাটি ভরষা।
এখানে শুধু একটা ব্যাপারই চিন্তার বিষয় যে, যে মানুষটার কারনে কখনো নিজেদেরকে অসহায় মনে হয় নাই, কোনো দুশ্চিন্তা গ্রাস করে নাই, যখন সেই মানুষটা চলে যায়, তখন সেইই দিয়ে যায় যতো অসহায়ত্ব আর দুশ্চিন্তা। আর এটা আমার মাথায় সব সময় কাজ করে। এর জন্যে সমাধান একটাই- যা আমি অন্যদের বেলায় করেছি। সাবলম্বিতা। এবং দ্রুত। তোমাদের কাজ ভরষা করা আর আমার কাজ সেই ভরষার স্থানটা স্থায়ী করা।
যেদিন মনে হবে তুমি সাবলম্বি, তুমি নিজে নিজে একাই চলার ক্ষমতা রাখো, তোমার সমাজ তোমাকে স্পর্শ পর্যন্ত করতে দিধা বোধ করবে, সেদিন আসলে আমার দায়িত্ত প্রায় শেষ হয়েছে বলে আমি মনে করবো যেটা এখন প্রায়ই ভাবি আমার এই পক্ষের মানুষগুলির জন্য। তখন যেটা হবে- তুমি স্বাধীন পাখীর মতো এক ঢাল থেকে একাই উড়ে গিয়ে আরেক ঢালে বসতে পারবে। কিন্তু পাখীরা যখন একবার নিরাপদ গাছে বাসা বেধে ফেলে, যতোদিন ওই গাছটা থাকে, কেউ আর কেটে ফেলে না, কিংবা আচমকা কোনো ঝড়ে যখন গাছটা আর ভেংগে পড়ে না, ততোক্ষন অবধি সেই ভাষাহীন অবুঝ পাখীরাও তাদের নীড় পরিবর্তনে মনোযোগ দেয় না না। তারা সেখানে অভয়ারন্য তৈরী করে সেই জংগল সাম্রাজ্যের অধিকর্তা হিসাবেই জীবন পাড় করে দেয়।
ওই গাছটাই তখন তার ভরষা। ওই গাছ জায়গা দেয় বাসা করার, ওই গাছ ঢাল পেতে দেয় নিবিড় করে বসার। ওই পাখী চলে গেলেও গাছের না হয় কোনো ক্ষতি, না হয় তার ফলনে কোনো বিঘ্নতা। ঠিক সময়ে সেই গাছ ফুল দেয়, ফল দেয়, আর দেয় ছায়া। ঝড়ের দিনেও সে হয়তো অন্য আরো অনেক পাখীর জন্যে অভয়ারন্য স্রিষ্টি করে বটে কিন্তু সেই গাছ কোনোদিন অভিযোগ করে নাই, কেনো অন্য আর কিছু পাখী তার ঢাল ছেড়ে অন্যত্র চলে গেলো। তবে যদি আবারো সে ফিরে আসে, গাছের কোনো অভিযোগ থাকে না। কিন্তু যদি কোনো ঢালই আর খালী না থাকে, সেটা তো আর গাছের দোষ নয়।
ভরষার স্থান কেউ ত্যাগ করলে গাছের কি দোষ!!