২০/০৮/২০২৩-প্রেডিকশন-২

গতবছর এপ্রিল মাসে আমার একটা লিখায় আমি মন্তব্য করেছিলাম যে, “একটা সময় আসবে যখন ইউক্রেনবাসী প্রেসিডেন্ট জেলেনেস্কীকে ইউক্রেনকে ধ্বংসের কারনে কাঠগড়ায় দাড় করাবে। যদি তাকে আর নাও পাওয়া যায়, চলমান সময়ের ইতিহাসের জন্য ইউক্রেন আজীবন আফসোস করবে যে, এতো সুন্দর সাজানো গোছানো একটা রিচ কান্ট্রি এভাবে শেষ হয়ে গিয়েছিলো শুধুমাত্র একটি মানুষের কারনে। আর সেটা জেলেনেস্কী”। আমরা ইতিহাসকে যেভাবেই লিখি না কেনো, কেউ তো থাকবে যারা আজকের দিনের প্রতিটি প্রেক্ষাপট, ইভেন্ট, ঘটনা মুখেমুখে হলেও এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মের কাছে স্থানান্তর করবে যেমন সর্বদাই দেখা যায়। সময়ের বিবর্তনে হয়তো কিছুটা ইতিহাস উলটা পাল্টাভবে প্রচারিত হয় বটে কিন্তু অলিখিত ইতিহাসের পাতাই বেশী থাকে লিখিত পাতার চেয়ে। ইতিহাসের অমোঘ নিয়ম হচ্ছে-কলোনিয়ালিজম কোনো না কোনো সময়ে শেষ হয়ই। আফগানিস্থান, ভিয়েতনাম, আফ্রিকার প্রায় সবদেশ, ভারতবর্ষ, আরো শতশত দেশের ইতিহাস এমনই। চুড়ান্ত ফলাফলে আধিপত্যবাহীরা শেষ পর্যন্ত অধিকৃত দেশ ছাড়তে সবসময়ই বাধ্য হয়েছে। কিন্তু এই আধিপত্য নেয়া এবং ছেড়ে দেয়ার মধ্যে পার হয়ে যায় হয়তো কয়েক প্রজন্ম। ধ্বংস হয়ে যায় কালচার, কৃষ্টি, সমাজব্যবস্থা এবং সাথে দেশের অর্থনীতি।

ইউক্রেনের কোনো প্রয়োজন ছিলো না তাদের নিজের দেশের রাশিয়ান ভাষাভাষি মানুষগুলিকে এতো অত্যাচার করার, প্রয়োজন ছিলো না অযথা ইউরোপিয়ান হবার, প্রয়োজন ছিলো না ন্যাটোর মতো একটা জোটে যুক্ত হয়ে রাশিয়ার মতো একটা ভেটো অধিকারী, নিউক্লিয়ার সমৃদ্ধ দেশের বিরুদ্ধে পা ফেলার। যাদের শক্তিতে বলিয়ান হয়ে যুদ্ধের দামদা করা হলো সেই তারা কিন্তু বহুদূরের এক শক্তি। আর তারা নিজেরা কিছুতেই আক্রান্ত নয়। নিজের শশ্যক্ষেত জ্বালিয়ে কেউ হিরো হতে চায় না। আর যারা সেটা করে তারা বোকা। কেনো বললাম কথাগুলি জানেন?

কারন, ইউক্রেনের পূর্ববর্তী প্রেসিডেন্টের এইডস অলেগ সসকিন তাঁর ইউটিউবে একটা বার্তা রেখেছেন ইউক্রেনবাসী এবং ইউক্রেনের এমপিদের উদ্দেশ্যে। আর সেটা হলো এমন, “প্রেসিডেন্ট জেলেনেস্কী একজন অতিশয় অপরিপক্ক (Inadequate) লিডার যে কিনা ইউক্রেনকে সম্পুর্ন ধ্বংস করে দিচ্ছে। এই যুদ্ধে ইউক্রেনের কোনো খবরই সত্য নয় এবং রিটায়ার্ড কর্নেলদের কোনো এনালাইসিস বা তথ্য সঠিক তো নয়ই বরং পুরুই মিথ্যা। ইউক্রেনের জন্য রাশিয়া যতোটা না বিপদজনক, তাঁর থেকে অনেক বেশী বিপদজনক প্রেসিডেন্ট জেলেনেস্কী। ইউক্রেনের মানুষের ভোগান্তির কোনো শেষ নাই, দেশের অর্থনীতি শুধু তলানীতেই না বরং ঋণে জর্জরিত হয়ে আরো কয়েক শত বছর পিছিয়ে দিয়ে গেলো এই যুদ্ধ। ফলে এখনই সময় আপ্নারা যারা এমপি আছেন, তারা এবং ইউক্রেনের ভিতর বাহিরে যারা সচেতন জনগন আছেন, তাদের কিছু একটা করা দরকার যাতে অন্তত ইউক্রেন নামক দেশটি পৃথিবীর বুক থেকে একেবারে শেষ না হয়ে যায়”।

আজকে সসকিন এটা বলেছে, হয়তো আগামীকাল সাধারন জনগন নিজেরাই মাঠে নেমে পড়বেন, হয়তো পরশু নিজের দেশের ভিতরেই নিজেদের অপশক্তিকে রুখে দাড়াবার জন্য যুদ্ধে নেমে যেতে পারেন। ডনবাস, খেরশন, জাপোরিজজিয়া, খারকিভ, ওডেসায় তো ইউক্রেনের অধিবাসিই বাস করতো, হয়তো তারা রাশিয়ান ভাষাভাষি বলে ইউক্রেনের প্রশাসন তাদেরকে রিফুজির মতো ব্যবহার করতো। তাদেরকে খতম করে কি ইউক্রেন সে সব এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করা সম্ভব যাদের বসবাদ সেখানে শত শত বছর ধরে? এখনো তো তাদের উপরেই আক্রমন হচ্ছে। তাহলে তারা যে ভাষাভাষিই হোক না কেনো, যারা তাদেরকে রক্ষা করতে আসবে তাদেরকেই তো তারা সাপোর্ট করবে। ইউক্রেনকে তো নয়। আর ঠিক এ কারনেই এসব শহরগুলি খুব দ্রুত চলে গেছে ইউক্রেনের হাতের বাইরে এবং রাশিয়ার পক্ষে।

প্রয়োজন ছিলো না এসব মানুষগুলিকে এক সাইড করে অতঃপর নিজেরাই ইউক্রেনবাসী হবার। তারাও জন্মগত কিংবা বাপ দাদার উত্তরসুরী হিসাবে ইউক্রেনেরই একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিলো। কোনো এক সময় ইতিহাসবিদগন এটাই বলবে যে, প্রেসিডেন্ট জেলেনেস্কী সঠিকপথে ছিলো না। আজকে যে ইউরোপ তাঁর প্রতিবেশী রাশিয়াকে শত্রু মনে করছে, হয়তো খুব শীঘ্রই সেই একই ইউরোপ হয়তো রাশিয়ার দ্বারপ্রান্তে বসবাস করে তাদের ছাড়া চলবেই না। ফলে একটা সময় খুব বেশী দূরে নয় যে, এই ইউরোপ আবার রাশিয়ার সাথেই একাত্ত হবে, একাত্ত হতে বাধ্য হবে। প্রতিবেশীকে বেশিদিন একঘরে করে রাখা যায় না। তারমধ্যে যে প্রতিবেশী এতো ক্ষমতাবান।