২০/৭/২০২৪-কোটা আন্দোলন এবং দেশের অবস্থা

গত কয়েকদিন যাবত ছাত্রসমাজ কোটার বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে। কোটাটা আসলে কি? সেটা আগে দেখিঃ

বিসি এস কোটায় কোটা-

মুক্তিযোদ্ধার কোটা- ৩০%

নারী কোটায়-১০%

জেলা কোটায়-১০%

উপজাতী কোটায়-৫%

প্রতিবন্দি কোটায়-১%

মোট-৫৬%

বাকী ৪৪% কোটা সারা দেশের জন্য। যেখানে প্রায় ৮ থেকে ৯ কোটি সম্ভাব্য চাকুরীজীবির প্রত্যাশায় ছেলেরা পরীক্ষা দেয়।

১ম ও ২য় শ্রেনীর নন-ক্যাডার কোট-

মুক্তিযুদ্ধার কোটা-৩০%

নারী কোটা-১৫%

জেলা কোটা-১০%

উপজাতী কোটা-৫%

প্রতিবন্দী কোটা-১%

মোট-৬১%

বাকী ৩৯% কোটা সারা দেশের জন্য। যেখানে প্রায় ৮ থেকে ৯ কোটি সম্ভাব্য চাকুরীজীবির প্রত্যাশায় ছেলেরা পরীক্ষা দেয়।

৩য় ও ৪র্ত শ্রেনীর জব কোটায়- ৭০%

রেলওয়েতে কোটা-৮২%

প্রাথমিক শিক্ষক নিয়গে কোটা-

নারী কোটা-৬০%

মুক্তিযুদ্ধা কোটা-৩০%

পোষ্য কোটা-৫%

প্রতিবন্ধি কোটা-১%

মোট= ৯৬%

বাকী ৪% কোটা সারা দেশের জন্য। যেখানে প্রায় ৮ থেকে ৯ কোটি সম্ভাব্য চাকুরীজীবির প্রত্যাশায় ছেলেরা পরীক্ষা দেয়।

এর মানে কোটার কারনে যতো মেধাবীই আপনি হন না কেনো, আপনার ভাগ্যে চাকুরী জুটবে মাত্র কখনো ৪৪%, কখনো, ৩৯%, কখনো ৩০%, কখনো ১৮%, কখনো মাত্র ৪% এর মধ্যে।

২০১৮ সালে সরকার এই কোটার প্রথা বাতিল করেছিলো কিন্তু পরবর্তীতে আদালতের মাধ্যমে এই সরকারী প্রজ্ঞাপন বাতিল করে পুনরায় সেই আগের কোতায় ফিরে যায় যদিও আই ওয়াশ হিসাবে সরকার আদালতে আপিল করে। সেই আপিলের শুনানী আজ হয়, কাল হয় করতে করতে প্রায় ৬ বছর পার হয়ে যায়। ছাত্ররা এর মধ্যে আর কোনো প্রতিবাদ করেনি। এবার যখন শুরুতে ছাত্ররা আবারো আন্দোলন করতে থাকে তখন প্রধান মন্ত্রী সরাসরি কয়েকটা বাক্যবানে ছাত্রদের পুরু আন্দোলনটাকে অন্য খাতে ঘুরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন। তার সার সংগকেপ যদি বলি সেটা এ রকমের-

(ক)      প্রধান্মন্ত্রী বললেন- কোটা মুক্তিযুদ্ধের নায় নাতকুরকে না দিয়ে কি আমরা রাজাকারের নায় নাতকুরকে দেবো? অর্থাৎ তিনি বলতে চাইলেন, যারা কোটার বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে, তারা সবাই রাজাকারের বংশধর। ফলে ছাত্ররা এবার শ্লোগান দিল- তুমি কে আমি কে-রাজাকারা রাজাকার। কে বলেছে কে বলেছে-সইরাচার, সইরচার।

(খ)       প্রধান্মন্ত্রী আবারো বললেন- এই কোটাধারী আন্দলনকে প্রতিহত করতে আমার ছাত্রলীগই যথেষ্ঠ। অর্থাৎ তিনি তার ছাত্রলীগ, যুবলিগ এবং তাদের সাপোর্টে পুলিশ বাহিনীকে দিয়ে গোতা ছাত্র আন্দলনকে তিনি প্রতিহত করবেন। অথচ ছাত্রদের এই আন্দোলনটা ছিলো পুরুই অরাজনিতিক।

ছাত্রদের আন্দোলন যখন তীব্র থেকে তীব্র হতে শুরু করে, সারাদেশ যখন উত্তাল এবং ছাত্রলীগ, যুব্লীগ, পুলিশ, বিজিবি, সবাই যখন অপারগ এবং একটার পর একটা যখন ছাত্র মারা যেতে শুরু করল, ছাত্রদের অভিভাবক, আত্তীয়সজনরাও কিন্তু ধীরে ধীরে এই ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে শরীক হওয়া শুরু করছিলো। মানুষ এতোটাই আস্থার জায়গা হারিয়ে ফেলছিলো যে, তাদের পূর্ন সমর্থন এই অরাজনৈতিক ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে ছিলো।

বিএনপি কিংবা জামাত হয়তো এর মধ্যে একটা সুযোগ খোজার চেষ্টা করছিলো কিন্তু আওয়ামীলীগ কোনোভাবেই একটা সহজ রাজনৈতিক দল নয় যে, তারা কুট চালে হেরে যাবে। দেশের বিভিন্ন কেপিআই গুলি যেমন সেতু ভবন, বিটিভি, মেট্রোরেল কারাগার ভাংগা ইত্যাদি যখন একটার পর একটা ধংশ হচ্ছিলো, আমার কাছে কেনো জানি অন্য রকম একটা কুট চাল মনে হচ্ছিলো। এমন কি হতে পারে যে, এগুলি সরকারই করেছে কিন্তু ছাপটা পড়ছে অন্য দলগুলির উপর? এদেশের হাজার কোটি টাকার দূর্নীতি করে পার পেয়ে যাওয়া বেনজির, মতিউর, সালমান এফ রমনা, আকবর সোবহান, রাজস্ব বোর্ডের অফিসার, পিএসসি র কর্মকর্তাগন, পুলিশ আইনজীবি সবাই যখন বিচারের সুম্মুখীন হয় না, তখন আমার তো একটা সন্দেহ থেকেই যায় যে, সরকার দেশপ্রেমিক নয়। একদিকে ডলার সংকট, অন্যদিকে ডলার পাচারের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নাই। কোথায় সরকারের দূর্বলতা? ফলে আমার কাছে এই কয়েক হাজার কোটি টাকার স্থাপনা ধংশ করাও কোন ব্যাপার না। যেমনটা প্রবাদে আছে-নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভংগ করা। নিজের নাক, মানে কত কষ্টের একটা ব্যাপার, সেটাও যখন কেউ কেটে এটা সফল হতে চায় যে, কারো যাত্রা ত ভংগ হোক। তাহলে এই কয়েক হাজার কোটির টাকার স্থাপনা ভাংলেই বা কি।  সরকারের এতো এতো গোয়েন্দা বিভাগ, ইন্টিলেন্স, এন এস আই, ডিজি এফ আই, পুলিশের গুপ্তচর, আরো অন্যান্য সংস্থা কারো কাছেই কি কোনো আগাম তথ্য ছিলো না যে, এতো এতো কে পি আই গুলিতে হামলা হতে পারে? এটা গ্রহনযোগ্য হতে পারেনা। তাহলে এটা কি ধরেই নেয়া যায় যে, এটা পুর্বপরিকল্পিত খোদ সরকারের পক্ষ থেকেই যেভাবে বি ডি আর কিলিং তাও সরকারী পেট্রোনাইজেশনে হয়েছিলো?

ছাত্রদের প্রাথমিক আন্দোলনকে সরকার কিছুই করতে পারবে না, এটা আদালতের বিচারাধীন ইত্যাদি বলে যখন হাত মুছে দিল, সেই একই সরকার কিভাবে তাহলে আদালতকে প্রভাবিত করে হাইকোর্টের রায় বাতিল করে, আদালতের সময়সীমা আগাইয়া এনে দুইদিনের মধ্যে তাও আবার ছুটির দিনে পুর্নাংগ এপিলেট ডিভিশন বসিয়ে ছাত্রদের পক্ষে রায় আনে? অথচ এই একই সরকার ছাত্রদেরকে রাজাকার উল্লেখ করে তাদের কোমলমতি হৃদয়ে রক্তক্ষরন, সরকারের রাজনৈতিক শাখা ছাত্রলীগই যথেষ্ঠ এসব ছাত্রদেরকে দমন করার জন্য ইত্যাদি বলে হুমকি দিলো। প্রথম আক্রমনতো সরকারের ছাত্রলীগই করেছিলো হলে হলে সাধারন ছাত্র-ছাত্রীদেরকে।

অত্যান্ত অপরিপক্ষ সরকারের সব সিদ্ধান্ত। এর আরেকটা কারন আছে- আর সেটা হল-সরকার গত ৪টি নির্বাচন জনগনের কোনো ভোটে নির্বাচিত হয়নি। তারা এই ছাত্রলিগ, পুলিশ, যুবলীগের মাধ্যমেই ভোট নিয়ন্ত্রন করে সরকারে বসেছে। তারা মনে করে-জনগনের কোনো প্রইয়োজনই নাই।

আজ প্রায় ৫ দিন যাবত ইন্টারনেট বন্ধ, কারফিউ, সেনাবাহিনী মোতায়েন ইত্যাদি করা হয়েছে। শিল্প কারখানা বন্ধ, গার্মেন্টস বন্ধ, কাচামাল সরবরাহ বন্ধ, মানুষের প্রিপেইড মিটারগুলিতে কারেন্ত বিল না দিতে পারায় ঘরে ঘরে আলো নাই, গ্যাস নাই, পানি নাই, এটা কোনো কথা? একটা যুদ্ধভিত্তিক দেশেও কারেন্ট থাকে, গ্যাস থাকে ইন্টারনেট থাকে, অথচ স্বাধীন দেশে এসবের এখন কোনো কিছুই নাই। সাধারন মানুষ এখন অতিষ্ঠ, কিছুই বলা যাচ্ছে না কখন আরেকটা মিছিল জানি বের হয়।

আমি আরেকতা জিনিষ সন্দেহ করছি বা আচ করছি যে, এই কয়দিনে ইন্টারনেট না থাকায় মানুষ কারো সাথেই কোন যোগাযোগ করতে পারছে না, সোস্যাল মিডিয়ায় কোনো সংবাদ আদান প্রদান করতে পারছে না। কিন্তু যখন ইন্তারনেট সচল করা হবে, সব তথ্য, সব ঘটনা যখন একের পর এক সোস্যাল মিডিয়ায় জাহির হতে থাকবে, তখন কি আরেকটা আন্দোলন অপেক্ষা করছে?