২১/০৪/২০২১-রাত

Categories

সময়ের স্রোতে যখন দিনের আলো নিভে যায়, মানুষ দ্রুত নিস্তেজ হয়ে দ্রুত ঘরে ফেরার তাগিদ অনুভব করে, পাখীরা যখন আর কোথাও ঘুরতে চায় না, গাছেরা যখন নতুন খাবারের আস্বাদনে কার্বনের পরিবর্তে অক্সিজেনের জন্য উম্মুখ হয়ে থাকে, ঠিক সে সময়েই ধীরে ধীরে দিনের আলোকে নিভিয়ে রাতের প্রবেশ। যেমন ঈশ্বর বলেন, “আমি দিনকে সরিয়ে নেই, রাতকে আনার জন্যে”। তাহলে কি আছে এই রাতের অধীনে?

এই রাত সবাইকে পরিবর্তন করে দেয়। কেউ হতাশার রাজ্যে ভেসে যায়, কেউ সুখের রাজ্যে হামাগুড়ি দিয়ে নির্ঘুম জেগে থাকে, কেউ নিশাচর পাখীর মতো নিশাচরদের সাথে দিকবিদিক এদিক সেদিক ঘুরতে থাকে, কেউ পররবর্তী দিনের আলোর অপেক্ষায় বসে থাকে, কেউ আবার পরম ঈসশরকে নিকটে পাওয়ার জন্য অঘোর ঝরে চোখ ভাসিয়ে প্রার্থনা করে। যে দিনের আলোকে সহ্য করতে পারে না বলে দিনে বের হয় নাই, সে রাতের অন্ধকারে মাথা উচু করে দুনিয়াটাকে নিয়ন্ত্রণ করে, আবার যারা দিনের আলোতে ভীতু হয়ে চুপসে গিয়ে লুকিয়ে ছিলো, সে প্রানের স্পন্দনে সবার অলক্ষ্যে রাতের অন্ধকারকেই বেছে নিয়ে দিব্যি জীবন কাটিয়ে দেয়। অদ্ভুত একটা অধ্যায়।

এই রাতের সাথে মহাশ্মশানের কোথায় যেনো একটা মিল আছে। সবাই পাশাপাশি থেকেও সবাই একা। সবাই চুপ কিন্তু সবাই সরব। তাদের কারো কোনো কিছুর চাওয়া নাই, আবদার নাই, কারো কোনো অভিযোগ নাই, না আছে কোনো পার্থিব কোনো অহংকার বা লালসা। রাতের অন্ধকারে জোনাকীর আলোই যেন মহাপ্রদীপের মতো কাজ করে, আর অমাবশ্যা হলেও কোনো ক্ষতি নাই। অমবশ্যার রাতই হোক কিংবা অন্ধকার রাতই হোক, সব কিছুর এই রুপ আলাদা আলাদা। একে কি “কালো” বলা যায়? ব্ল্যাক কফি, ব্ল্যাক ফরেষ্ট কেক, ডার্ক চকোলেট, ঘন জংগল অন্ধকার রাত এদের প্রত্যেকের একটা নিজস্ব রুপ আছে। আর সেটা “কালো”। কালোর মতো কোনো রং নেই। কিন্তু কিছু কি আছে যা কালোকে সাদা করতে পারে? যদি অন্যভাবে দেখা যায় বা ভাবা যায়, দেখা যাবে যে, কোনো জিনিষ সাদা বা কালো হয় না। সবটাই আলোর খেলা। এই আলোটা সবাই দেখতে পায় না। তখনি সে শুধু দেখে অন্ধকার, দেখে অমাবশায়র রাত। সেই সুদূর জোজন দূরের কোনো নক্ষত্রের মীতমীটে আলো ও তখন আর চোখে পড়ে না।