২১/০৫/২০২৩-পরিবার থেকে নিজে বড়

কোনো মতবাদ কিংবা প্রচলিত প্রবাদের বাইরে গিয়েই বলছি- দেশের থেকে সম্ভবত সমাজ বড়, সমাজের থেকে পরিবার আর পরিবারের থেকে বড় নিজে। এটাই সত্য। যখন একাই এসেছি এই দুনিয়ায় তখন আমি দেশ নিয়ে আসিনি, আমি সমাজ নিয়ে আসিনি, না আমি পরিবার সাথে করে নিয়ে এসেছি। আমি সম্পুর্ন একা এবং কোনো কিছু ছাড়াই এই দুনিয়ায় এসেছি। এই দুনিয়ায় এসে আমি যা পেয়েছি- তা হলো, দেশ, সমাজ আর পরিবার। এটা সম্ভবত শুধু মানুষের বেলায়ই প্রযোজ্য।

তাকিয়ে দেখুন একটা বন্য প্রানীর দিকে। তার সমাজ থাকলেও সে সেই সমাজের কোনো আইনের মধ্যে নিবন্দিত নয়। যখন তার যা খুশী সেদিকেই তার বিচরন। ক্ষুধায় তাকে অন্য কোনো প্রানী খাদ্য জোগায় না, শীতে অন্য কোনো প্রানী তাকে গরমে আচ্ছাদিত করে না। সে মরে গেলেও কেউ আফসোস করে না। কিছু কিছু প্রানী হয়তো দল বেধে চলে বটে কিন্তু সেই দলের জন্য কেউ কোনো দায়িত্ত নিয়ে এটা করে না যে, সবাইকে বাচিয়ে নিজে বাচবো। তারা সবাই যার যার জীবন নিয়ে দলবদ্ধভাবে একাই চলে। তারা এটা করতে পারে কারন, তাদের চাহিদা শুধু খেয়ে বেচে থাকার। ওদের পেট ভরে গেলে অতিরিক্ত আর কিছুই সঞ্চয়ের চিন্তা থাকে না, তারা অট্টালিকা, গাড়ি বাড়ি ব্যাংক ব্যালেন্স কিংবা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য কিছুই রেখে যায় না। এ জন্যই ওরা সর্বদা সুখী। ওরা কারো আক্রমন মনে রাখে না, কাউকে আক্রমন করলেও সেটা নিয়ে আর ভাবে না। ব্যাপারটা সেখানেই মিটে যায় যেখানে শুরু এবং শেষ হয়েছিলো।

আমরা প্রত্যেকেই একা, আর এই একাকীত্ব আমরা বুঝতে পারি বয়সের ভাড়ে যখন আমরা নেতিয়ে যাই। সারাজীবন পরিবারের জন্য আমরন কষ্ট করেও আমরা সেই মানুষ গুলির নাগাল পাই না যাদের জন্য আমরা আমাদের সব সুখ জলাঞ্জলী দিয়ে ভেবেছিলাম-“একদিন আমি সুখী হবো”/ একদিন আমি সুখী হবো-এই মিথ মানুষের জীবনে কখনোই আসে না। আসবেও না। তাহলে কেনো এই মিথ? এটা একটা প্রহসন ছাড়া আর কিছুই না।

আমি আজকের দিনের সমাজের কাছে কিংবা পরিবারের কাছে আমার এই মিথ প্রকাশ করা মানে আমি সবার কাছেই একটা নেগেটিভ মাইন্ডেড মানুষের পরিচয় বহন করবো, এটাই এই সমাজের মিথ। কিন্তু একবার ভাবুন তো? আমি সারাজীবন কষ্ট করে আমি একটা সাম্রাজ্য তৈরী করবো, আর সেই সাম্রাজ্যে আমার কিছু পরিবারের সদস্য আমার সমস্ত মিথ ধুলোয় নষ্ট করে দিতে একটু সময় ও কার্পন্য করবে না, তাহলে কেনো আমাকে এই মিথ বিশ্বাস করতে হবে? তাই আমি সব সময় আমার পরিবারের সদস্যদের বলি- আমার মতো করে চলতে না পারলে আমাকে নিয়ে টানাহেচড়া করো না। তোমরা তোমাদের ভাগ্যকে বদলে দাও। আমার ভাগ্যের কোনো কিছুই তোমাদেরকে পাল্টাতে হবে না। না তোমরা আমার ইজ্জতকে বিনা কারনে এতোটুকু নীচে নামিয়ে আনো যেখানে আমি কখনো যেতে চাই না। তোমাদের এই সমাজে আমি যতটুকু নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছি, আমাকে সেই ততটুকুতেই থাকতে দাও। তোমাদেরকে সাথে নিতে গিয়ে আমাকে যেনো সেই অর্জিত ইজ্জতটুকু আমাকে ক্ষয় করতে না হয় শুধু এটুকু রহম করো। আর যদি সেটাও করতে না পারো- তাহলে তুমি বা তোমরা যেইই হও, আমাকে ছেড়ে দাও। আমি একা এসেছি, একাই থাকতে অভ্যস্থ হয়েছি।একাই থাকতে পারবো।