২২/০৫/২০১৯-Cottage, Yes Please এ

কটেজ, ইয়েস প্লিজ

শেষ অবধি আমার ইন্ডিয়ার ভিসাটা খুব তাড়াতাড়িই হয়ে গেলো। মোট ৩ দিনে ভিসা পেলাম। রওয়ানা হয়ে গেলাম ইন্ডিয়াতে। বাসায় থাকলো উম্মিকা, কনিকা, নসিরন আর ওর মেয়েরা। সাথে অনেক ডলার নিয়ে গেলাম। যদিও আমি মিটুলের সাথে যতোটা দরকার ডলারের তার থেকে বেশীই সাথে করে দিয়েছিলাম, তারপরেও আমি আমার সাথে করেও বেশ কিছু ডলার নিয়ে গেলাম। ক্রেডিট কার্ডেও প্রায় হাজার আটেক ডলার ছিলো। টাকা পয়সা নিয়ে যাতে কোনো প্রকার টেনসনে থাকতে না হয় সেটা আমার দায়িত্ব ছিলো। কারন কখন মিটুলের জন্য কি লাগে আমার জানা ছিলো না। মিটুল আর সাবিহা আপা ইতিমধ্যে আই এল বি এস এ ডাক্তার এস কে সারিনের সাথে এপয়েন্টমেন্ট নিয়ে কথা বলে বেশ কিছু টেষ্ট ও করিয়ে ফেলেছে, রিপোর্ট পেতে এখনো সময় লাগবে। এর মধ্যে মিটুল আর সাবিহা আপা তাদের আগের হোটেলটা পরিবর্তন করে নতুন একটা হোটেলে উঠে গেছে আজি। নাম “কটেজ, ইয়েস প্লিজ” অদ্ভুত নাম মনে হলো। আমি যখন দিল্লিতে নামলাম (ডাইরেক্ট ফ্লাইট ছিলো বাংলাদেশ বিমানে) তখন রাত হয়ে গেছে। সেখান থেকে আমি সরাসরি একটা মাইক্রো গাড়ি নিয়ে পাহাড়্গঞ্জের উদ্দেশ্যে র ওয়ানা হয়ে গেলাম। ১ হাজার রুপী নিলো। ওরা নাকি আমার কাছ থেকে বেশীই নিয়েছে। সেটা আমার কাছে কোনো বিষয় ছিলো না। আগে তো মিটুলের কাছে যাই। প্রায় ১ ঘন্টা জার্নির পর আমি মিটুলের দেখা পাই। হোটেল “কটেজ, ইয়েস প্লিজ” টা খারাপ না। মেইন রাস্তার উপরেই। সাথে সাথেই হোটেলের একটা কার্ড নিয়ে নিলাম। ঠিকানাটা 1843, Lakshmi Narayan St, Aram Bagh, Paharganj, New Delhi, Delhi 110055, India।

দোতালায় দুটু রুম নেয়া আছে। একটা রুমে তিন জন থাকা যায়, আর আরেকটা রুমে দুজন। সাবিহা আপার মেয়ে এবং মেয়ের স্বামী এক রুমে আর আমি, সাবিহা আপা আর মিটুল এক রুমে থাকবো। আসলে বেশীরভাগ সময়ে তো আমরা বাইরে বাইরেই থাকবো, খালী রাতের বেলাতে ঘুমানোর জন্য রুমে থাকা।

মিটুল আর সাবিহা আপার মেডিক্যাল রিপোর্ট পেতে আরো দু একদিন দেরী হবে। তাই আমরা ভাবলাম, এই দুইদিনে ঐ অঞ্চলে কোথায় কি দর্শনীয় স্থান আছে দেখে ফেলি। আমার খুব একটা ইচ্ছা নাই এসবে কিন্তু মিটুল আর সাবিহা আপার কৌতূহলের শেষ নাই। হোটেলের ঠিক উলটা পাশেই এসব স্থান দেখানোর জন্য অনেক এজেন্ট আছে যারা গাড়ি সহ গাইড দিয়ে দেয়। খারাপ না। পরিকল্পনা হলো যে, আমরা হরিদ্বার, এবং আশেপাশের সব জায়গুলি দেখবো।  রোজার দিন ছিলো কিন্তু এখানে রোজা রাখা সম্ভব না। তাই প্রতিদিন সকালে পাশেই রেষ্টুরেন্টে আমরা খেতে যাই। একটা জিনিষ আমার কিছুতেই ভালো লাগছিলো না যে, ইন্ডিয়ানরা এতো বেশী মসল্লা খায় যে, যদি দাঁড়িপাল্লা দিয়ে গ্রাম করে মাপা যায় দেখা যাবে ৭০% হলো মসল্লা আর ৩০% তরকারী বা শব্জী। কিছুতেই খেতে পারছিলাম না। ফলে আমরা একটা প্ল্যান করলাম যে, শুধু ডাল, ডিম আর মসল্লা ছাড়া যে কোনো তরকারী খাবো। একটা নির্দিষ্ট হোটেলেই খাবো যাতে ওরা আমাদের ফুড হ্যাবিটটা বুঝতে পারে।

এই দিল্লীতে কেউ ভালো বাঙলা বলে না আবার আমরা হিন্দি বলতে পারি না। কিছু কিছু শব্দ যা বাঙলা আর হিন্দিতে প্রায় সমার্থক, সেটা দিয়েই ওদেরকে বুঝানোর চেষ্টা করছি। দারুন উপভোগ করছিলাম আমাদের এই অলিখিত মিশ্রি বান্দি বা বাঙলা +হিন্দি ভাষা। কিন্তু মিটুলের নাদি ভাষায় আমরা সবাই হাসতে হাসতে খুন। দোকানীও মজা পাচ্ছিলো বেশ। ভালো কর্ডিয়াল হিসাবেই ওরা নিচ্ছিলো আমাদের এই বান্দি ভাষাটা।

এই সময় ইন্ডিয়ার তাপমাত্রা প্রায় ৪৩ বা ৪৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস। পুরু শহর যেনো ওভেন। শরীরের উপর দিয়ে বাতাস গেলে মনে হয় চুলার পাশে দাঁড়িয়ে আছি। হোটেলে রুমের ভিতর এসি আছে বলে রুমে থাকলে খারাপ লাগে না কিন্তু যখনই গাড়িতে উঠি, ভীষন গরম। এসি গাড়ি সব সময় পাওয়া যায় না। আবার ইন্ডিয়ানরা এতো কিপ্টে যে, এসি থাকলেও এসি ছাড়তে চায় না। এসি গাড়ির ভাড়া বেশী হলেও এসি ছাড়লে আবার এক্সট্রা টাকা চায়। কি তাজ্জব। এদেশের মানুষেরা এখনো এক টুকরা ইলিশ মাছ কিংবা ৫০ গ্রাম আম কিনতে পারে। তারা পুরু আমটাও কিনে না। তো তাদের কাছ থেকে তো এটা আশা করাই যায়।

ইন্ডিয়ায় এখন নরেন্দ্র মুদীর ইলেকশন চলছে। খুব বিরক্ত মানুষ নরেন্দ্র মোদীর শাসনকাল নিয়ে। আসলে নরেন্দ্র মোদী নিজেও একটা কট্টর পন্থী মানুষ যারা কিনা বাংলা অথবা মুসলমানের বিরুদ্ধে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *