এই যে উপরের গাছটা দেখছি, এটা একটা নির্জন জলঘেরা ছোট টিলার উপর দাঁড়িয়ে আছে বহুদিন যাবত। চারিদিকে জল, আশেপাশে কোথাও কোনো বাড়িঘর নাই। অথচ এমন নয় যে, এই গাছটার নীচে কেউ পদার্পন করেনি, কেউ এর ছায়ার তলে বসেনি। কে কখন বসেছে এর হিসাব আমার আপনার কাছে না থাকলেও হয়তো এই গাছটার কাছে আছে কিন্তু তাদের কথা ওর মনে রাখারও দরকার নাই। কখনো যদি আবার সেই পুরানো পথিক আরেকবার এসে তার নীচে বসে, হয়তো নিঃশব্দে নীরবে মুচকী হেসে দিয়ে বলতেও পারে-অনেকদিন পরে এলে। আমিও একবারই এখানে এসেছিলাম। আবার কখনো সেখানে যাওয়া হয় কিনা কে জানে? আমি গাছের কথা শুনি না, না কিন্তু অনেক গাছের কথা আমি বুঝি। আমার বাগানের গাছের কথা।
এই একেলা গাছের জীবনের মত, অনেক আরো কথা আমার মনে হয় আর আমি বারবার ব্যথিত হই। জীবনটাকে কেনো জানি ভীষন একা মনে হয়। আনন্দ করতে চাই আরো হাজার বছর, বাচতে ইচ্ছে করে আরো অনেক অনেক বছর। এতো অল্প একটা সময় নিয়ে কেনো যে আমাকে আমার ঈশ্বর এখানে পাঠালো? কে জানে? আমি যে ঘরটায় থাকি, এখানে এক সময় বিশাল গর্ত ছিলো, সেই গর্তে অনেক পানি ছিলো, পানিতে অনেক মাছ, শ্যাওলা, কচুরীপনা, অনেক পোকামাকড়ও ছিলো। আজ এখানে কোন জল নাই, কোনো মাছ নাই, কোনো পোকামাকড়ও নাই। আমি আছি বিশাল একটা সাততলা অট্টালিকা বানিয়ে। এমনো তো হতে পারে, আমি যখন থাকবো না, তখন এটা অন্য কারো দখলে অন্য কারো আবাসস্থলে পরিবর্তন হবে। হবে তো অবশ্যই, এতে আবার মনে করার কোনো কারন নাই। আমি যেখানে খাট পেতে ঘুমাই, হতে পারে সেখানে আরেকজন, আমি যাকে চিনি না, সে ঘুমুচ্ছে। এমনতো হতে পারে সে আমার বংশের কেহই নয় অথচ এই বাড়িটা আমি করেছি, আমার হাতের শতভাগ ছোয়ায় প্রতিটি ইট দাঁড়িয়ে আছে।
আবার এমনো তো হতে পারে, কোনো এক সময়ের বিবর্তনে আবার সেই মাছেরা, সেই জলের ধারা, আবার সেই পোকামাকড়ের বংশধরেরা ফিরে এসছে আমার এই স্থাপনার উপরে!! জীবন কতটা বৈচিত্র্যময় নাহ? যে ঘরটায় বসে, শুয়ে আমি কল্পনার রাজ্যে ভেসে যেতাম, সেখানে আমার আগে হয়তো যেমন কোনো প্রানি রাজত্ব করেছে, মাঝে আমি করেছি, আমার পরে হয়তো কেউ করবে। আমরা আসি, যাই, কেউ আবার এর জায়গা দখল করে, তারাও চলে যায়, আবার নতুন কেউ আসে।
কি অদ্ভুত জীবনের চক্র।