যে যেই জীবন চায়, সে সেটাই পায়। কেউ জেনে শুনে পায়, কেউ না জেনেই পায়। তোমার লাইফ আমার কাছে যতোটা মুল্যবান, সেই জিবনটা তোমার কাছে কততা মুল্যবান, তার উপর নির্ভর করবে তুমি তোমার জীবনকে তুমি কতোটা ভালোবাসো। জীবনকে বুঝতে বুঝতে মানুষের প্রায় বেশীরভাগ সময়ই পার হয়ে যায়। ফলে যখন সে সত্যিকার অর্থে জীবনকে বুঝতে শিখে তখন সে তার রিসোর্সের প্রায় শতভাগ ব্যবহার করে ফেলে। যদি পরিকল্পিত পরিকল্পনায় জীবন গড়ে উঠে সে আনন্দের সাথে নিসচিন্তে বাকীটা সময় কাটিয়ে দেয়। কিন্তু যদি অপরিকল্পিতভাবে জীবনকে একতরফা এগিয়ে নিয়ে যায়, সে শেষ জীবনে এসে বুঝতে পারে-ফিরে যাবার আর উপায় নাই। তখন সে নিজের উপরেই নিজে রাগ করে, সবার উপরে অভিমান করে আর ভাবে-কোনো কিছুরই প্রয়োজন ছিলো না।
আমি আমার এই ছোট জীবনে একটা বিষয় খুব ভালভাবে বুঝতে শিখেছিলাম যে, আমার আশেপাশে আমি ছাড়া আর কেউ ছিলো না, থাকবেও না এবং এখনো নাই। স্বাধীন আছি কিন্তু আমি পরাধীন আমার নিজের কাছে। নিজ পরাধীনতা আমাকে এটাই শিখিয়েছে যে, মাথা উচু করে, কারো উপর নির্ভরশীল না হয়ে বাচার নামই আসলে পূর্ন স্বাধীনতা। আর এই পূর্ন স্বাধীনতা যখন পূর্নতায় ভরে উঠে তখন নিজের কাছেও আর কেউ পরাধীন থাকে না। আমি আমার সেই স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেই আমি আজীবন ঠিক সেভাবেই নিজেকে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি যাতে আমি একা, আমি স্বাধীন এবং কারো উপরে আমার নির্ভরশীলতা না থাকে তা নিশ্চিত করা।
আমার সাথে যারা থাকে বা আমার বলয়ে আমাকে ঘিরেই তাদের পরিকল্পনা করে বেচে থাকতে চায়, আমি আমার পুরো পরিকল্পনায় তাদেরকেও প্যাকেজে বেধে ফেলি। ভাবি, সেটাও আমার দায়িত্ব। তাই আমি আমার থেকে তাদেরকে শতভাগ দেয়ার চেষ্টা করি। কেউ আমাকে এই অপবাদটা দিতে পারার কথা নয় যে, আমি স সব মানুষকে কোনো না কোনো কারনে ব্যবহার করেছি বা কাউকে আমি নিজের সার্থে ঠকিয়েছি। আমি ঠকেছি কিন্তু তাদেরকে আমি ঠকাইনি।
তোমার বয়স যখন মাত্র ১৮ কিংবা ১৯, তখন তুমি আমার দরজায় এসেছিলে। ঠিক এই সময়ে তোমার যা ছিলো তা অবাক করার মতো এক বিষয়। অপরিপক্ক এক জীবন্ত মানুষ। নিজের সম্পর্কে তোমার কোনো জ্ঞান নাই, নিজের জেন্ডার সম্পর্কে তোমার কোনো ধারনা নাই। তোমার ক্ষমতা সম্পর্কেও তোমার কোনো আইডিয়া নাই। চারপাশ তোমার চলে যায় একেবারে অর্থহীনভাবে। কে তোমার আপন, কে তোমার আপন নয়, কে তোমার ভালো চায়, কে তোমার ভালো চায় না, কে তোমাকে ভালোবাসে, আর কে তোমাকে ভালোই বাসে না, কি তোমার অধিকার বা কথায় তোমার অধিকার কিংবা কি তোমার আছে বা কি তোমার নাই এসব নিয়ে তুমি কখনো ভাবোও নাই, না তুমি এসবের মধ্যে কখনো ছিলা। সপ্তাহের কোন দিনই তোমার জন্য কোনো চমক নিয়ে আসে নাই, অথবা কোনো ঋতুই তোমাকে এমন এক ভাবনায় নিয়ে যায় নাই যা একজন স্বাভাবিক মানুষের জীবনে প্রতিনিয়ত ঘটে। সকাল হয়, সন্ধ্যা হয়, ঝড় হয়, বৃষ্টি হয়, বন্যা বা শীত যাইই হোক না কেনো, সব কাল তোমার জন্য একই। অথচ এটা কোনো প্রানির বেলাতেও হয় না কিন্তু তোমার বেলায় এটাই হচ্ছিলো। তোমার কাছে কে ছেলে, কে মেয়ে, কে বালিকা বা কে বালক এর কোনো জেন্ডার পার্থক্য ছিলো না। পাখীদের মতো সকাল হয়েছে, আবার পাখীদের মতোই দিনের শেষে রাত নেমেছে তোমার জীবনে। একটা শুধু জায়গা হলেই হয় ঘুমানোর, সেটা মাটি নাকি খাট, নাকি ঘর না বারান্দা কিংবা রান্নাঘর এর মধ্যে কোনো বালাই ছিলো না। যখন ঘুমিয়েছো, ঘুমিয়েছ যেন ঠিক সেভাবে যে, পৃথিবীটা একেবারে নিরাপদ। অথচ তোমার জানা ছিলো না, এই পৃথিবীতে বাস করে হায়েনারা, বাস করে চোরেরা, বাস করে খুনীরা। এটা কোনো মনুষ্য জীবন নয়।
প্রথম যখন আমি তোমাকে দেখেছিলাম, আমি ঠিক এটাআই দেখেছিলাম তোমার জীবনে। কিন্তু অবাক করার বিষয় ছিল যে, আমার এই ধারনা পুরুই ভুল ছিলো। কেনো বললাম, ভুল ছিলো? সেটা বলছি।
সামাজিক প্রেক্ষাপটে আজো আমাদের সমাজে সব প্রানিরা তাদের সন্তানদের উপর একটা নজরদারি করে। হোক সেটা মানুষ কিংবা কুকুর, অথবা মুরগী। সব প্রানীরাই তাদের সন্তানদেরকে তারা একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অতোতাই সময় ব্যয় করে যতোদিন না সেই সন্তান সাবলম্বি হয়। এই সময় পর্যন্ত সব প্রানিরা তাদের সন্তানদেরকে চোখে চোখে রাআখে যেন হটাত করে অন্য কারো শিকারে পরিনত না হয়। তারা তাদের সন্তানদেরকে খাবারের যোগান দেয়, কাছাকাছি রাখে, বিপদ কি জিনিষ সেতার শিক্ষা দেয়। মুরগীর বাচ্চা যেমন কাক দেখলে পালিয়ে যায়, মুরগী যেমন শিয়াল দেখলে লুকিয়ে যায়, সাপ যেমন গর্তে লুকিয়ে থাকে ইত্যাদি। কিন্তু আমি তোমার বেলায় পরবর্তীতে যা দেখেছি সেটা লোমহর্ষক। তোমাকে তোমার পিতামাতা এ ব্যাপারে এতোটাই উদাসীন ছিলো যে, তুমি বেড়ে উঠেছো ঠিকই কিন্তু তোমাকে এই পৃথিবীর বিপদ, আপদ কিংবা ভালো খারাপের কন কিছুই শিক্ষা দেয় নাই। যতোটুকু তুমি শিখেছো তা শুধুমাত্র নিজে নিজে। তোমার এই শিক্ষাতা ছিলো তোমার নিজের। এটা আসলেই আমাকে অবাক করেছে। তুমি নষ্ট হয়ে যেতে পারতে নিজের অজান্তে, তুমি পচে যেতে পারতে পরিস্থিতির কারনে, তুমি হারিয়ে যেতে পারতে পথ না চেনার কারনে। কিন্তু আমার এখন মনে হচ্ছে- কেউ তোমাকে অনেক আগলে রেখেছে খুব সজতনে। আর সেটা ঈশ্বর। তোমাকে ঈশ্বর পথ পিছলে পাহাড়ের নীচে পড়তে দেয়নি, তোমাকে ঈশ্বর অচেনা পথে চালিত করেনি। তোমাকে ঈশ্বর নিজে গাইড করেছে সারাক্ষন।
ঈশ্বরের সেই গাইড থেকেই হয়তো তুমি ছিটকে বেরিয়ে এসেছো আমার দরজার সামনে। হয়তো সেইই তোমাকে আমার দরজার সামনে নিয়ে এসেছে।
তোমাকে আমার কোনোই প্রয়োজন ছিলো না। না তোমার মেয়েলী কিছু, না তোমার রুপ, না তোমার ভালোবাসা। আমার এসবের কোনো কিছুই প্রয়োজন ছিলো না। কারন আমার আশেপাশে তোমার যা আছে এ সবেরই ছিলো অঢেল বা ছরাছরি। তুমি আমাকে যা দিতে পারো তা আমি অনায়াশেই পাই হাত বাড়ালে। তাও আবার নিত্য নতুন পন্যের মতো আমার ইচ্ছায় সব কিছুওই এসে হাজির হতে পারে আমার দরজায়। তোমার কাছে নতুন এমন কিছু ছিলো না যা আমার আশেপাশে নাই।
কিন্তু একটা জিনিষ আমি তোমার জীবনে দেখেছি যা আমার কাছে একেবারেই নতুন মনে হয়েছে। আর সেটা হচ্ছে-আমাদের সমাজে এখনো সেই সব মানুষ বিদ্যমান যারা তাদের সন্তানদেরকে সন্তান হিসাবে দেখে না, দেখে একটা জীবন্ত নরাচড়া প্রানী হিসাবে। এদের জন্য কোনো করনীয় নাই, এদের জন্য কোনো পরিকল্পনা নাই, এদের জন্য আলাদা করে কোনো ভালোবাসাও নাই। জগত সংসারে এসব সন্তান হুট করে চলে এসছে তাই ফেলে দেয়া যায় না, তাই মাঝে মধ্যে কিছু খাবার দিয়ে শুধুমাত্র জিইয়ে রাখা। তুমি ছিলে ঠিক সেই পরিস্থিতিতে। কিন্তু এটা কি সম্ভব? তোমাকে কেউ জোর করে হরন করে মনের সুখে আনন্দ করে নিয়ে গেলেও যতোটা কষ্ট একটা পিতামাতার হওয়া উচিত, সেটাও হয়তো হবে না। তোমার শারিরীক অসুস্থ্য কাউকে বিড়ম্বনায় ফেলে না। যেন অসুখ কোন চিন্তার ব্যাপার নয়। আবদার, আহলাদ, নিজের ইচ্ছা, পছন্দ এগুলির তো কোনো জায়গায়ই নাই। তোমার চোখের জলের কোনো মুল্য নাই।
তোমার এমন একটা পরিস্থিতি আমাকে ভীষণভাবে নাড়া দিয়েছিলো। তোমার এ রকমের একটা পরিস্থিতি তোমার আশেপাশে বিরাজমান, সেটা তুমি নিজেও জানো না ভেবে আমার আরো অবাক হতে হয়েছে। তুমি কতটুকু অসহায়, তুমি কতটুকু বিপদের মধ্যে আছো। তুমি কতটা অবহেলায় আছো, সেটা তুমি নিজেও জানো না। আর যদি জেনেও থাক, তার কোনো প্রতিকার তোমার কাছে নাই। তুমি তোমার পরিস্থিতি সঠিকভাবে জানলেও তোমার এর বিরুদ্ধে কি করা উচিত বা কিভাবে করা উচিত সেই ক্ষমতাও তোমার নাই। ফলে আমার কাছে বারবার মনে হয়েছে-তুমি তোমার নিয়তির কাছে শতভাগ আত্তসমর্পন করেই বেচে আচজো যা যে কোনো সময়ে আরো অনেক খারাপের দিকে যেতে বাধ্য।
প্রচন্ড মায়া লেগেছে আমার। যদি তুমি কখনোই আমার সামনে না আসতে, আমি তোমাকে নিয়ে এই মায়ায় কখনোই জাড়াতাম না। তোমাকে মায়া করার জন্য আমি নিজেও প্রস্তুত ছিলাম না। না আমার কোন দরকার ছিলো। দরকারটা ছিলো তোমার। আর সেই দরকারটা তোমার ঈশ্বর আমার দরজায় নিক্ষেপ করে আমার অন্তরে একটা আবেগের ঢেঊ তোলে দিয়েছিলো। তুমি হয়তো সেটা জানোই না।
এখানে আরো একটা আবেগের কথা না বললেই নয় যে, একই ছাদের তলায় বসবাস করে, একই হাড়ির খাবার খেয়ে, কিংবা একই পরিবারে বাস করেও তোমার অধিকারটা ছিলো সর্বনিম্ন। ঈদের চাকচিক্য দিনে কিংবা হাড়কাপুনি শিতে যখন অন্যদের গায়ে নতুন কিছু জুড়ে যায়, তখনো তোমার জন্য কিছুই জোটতো বলে মনে হয় না। তুমি হয়তো এতা কখন উপলব্ধিও করো নাই যে, তুমি আসলে সবার মাঝে বসবাআস করেও একটা আলাদা মানুষ। সবার জন্য ঘুমানর নির্দিষ্ট জায়গা থাকলেও তোমার জায়গার কোনো নির্ধারিত স্থান নাই। সবার প্লেট আলাদা হলেও তোমার প্লেট যেনো সার্বোজনিন, একটা হলেই হলো। তোমার কোনো আইডেন্টিটি নাই। অবাক না?
হ্যা, অবাক করারই বিষয়। আর ঠিক যেদিন আমি এই ঘটনাগুলি বুঝতে পারলাম, সেদিন মনে হয়েছে, তুমি মানুষের চেহারায় আসলে একটা অন্য কিছু হয়ে বড় হচ্ছো। ঈশ্বরের কোনো না কোন পরিকল্পনা তো আছেই তোমাকে নিয়ে। আর সেই পরিকল্পনাটা সম্ভবত তিনি বরাদ্ধ করে রেখেছেন-আমার কাছে তোমার রিজিক।
যখন তুমি আমার কাছে একেবারে চলে এলে, আমি আমার সব পরিকল্পনা আমি পালটে দিলাম তোমার জন্যে। এটা ভালবাস বা কোনো লোভে না। এটা-মায়া। এটা ভালবাসা নয়। এই পৃথিবীতে ভালবাসার থেকে অনেক বেশি ক্ষমতাশীল আবেগ হচ্ছে-মায়া। ভালোবাসা একসময় ঘৃণায় পরিবর্তন হতে পারে, একজনের ভালোবাসা অন্য কারো আরো বেশি ভালবাসায় একসময় একজন থেকে আরেকজনের কাছে সরে যেতে পারে। কিন্তু মায়া এমন এক জিনিষ, যা কখনোই পরিবর্তন হয় না। সময় পেরিয়ে গেলেও মানুষ মায়ার কারনে আবার সব ভুলে বুকের কাছে টেনে নেয়। যার কাছে মায়া আছে, তার ভালবাসার দরকার পড়ে না। তার শরীর দরকার পড়ে না, তার কোনো কিছুরই প্রয়োজন পড়ে না। আর এই মায়ার কারনেই মানুষ চিরস্থায়িভাবে একই জায়গায় পড়ে থাকে।
তোমার আগেও কেউ ছিলো না, আমার পরে তোমার আর কেউ নাইও। এটাই সবচেয়ে বড় বাস্তবতা। কেউ কেউ বলে-যাদের জীবনে এমন একটা অনিশ্চয়তা আছে তারা সংসার করলেই সব দুঃখ, সব অনিশ্চয়তা কেটে যাবে। আজ আমার এই ৫৮ বছর বয়সে এসে আমি যেতা বুঝেছি সেতা হল-সংসার একটা পুরুদস্তর মরিচিকা। আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় মানুষ সংসার করে অনেক গুলি কারনে যা পশ্চিমা দেশগুলিতে নাই।
পশ্চিমা দেশ গুলিতে একটা ছেলে আর একটা মেয়ের মধ্যে অবাধ মেলামেশার কারনে তারা যেমন অবাধে শারিরীক চাহিদা মিটাতে পারে, সেখানে কেউ কোনো প্রশ্ন তোলে না। অবিবাহিত দুটু ছেলেমেয়ের মেলামেশায় কেউ খারাপ মন্তব্য করে না। তারা যুগের পর যুগ লিভ টুগেদার করেই সংসার না করে একাই স্বাধীন থাকে। ওরা কখনোই একা থাকে না। আজ যাকে নিয়ে লিভ টুগেদার করছে, তাকে আর ভাল না লাগলে কাল আবার আরেক সংগী নিয়ে দিন কাতায়। তাই ওদের একাকীত্ব বলে কিছু থাকে না। ওরা নিজেরা নিজেরা সাবলম্বি হয়, কেউ কারো উপরে নির্ভর করে না। ফলে কোনো সংগী যদি মাত্রার অতিরিক্ত মানসিক চাপে রাখতে চায় কিংবা মোড়ল্পনা করতে চায়, ওরা একে অপরের থেকে বেরিয়ে যায়। কিন্তু আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় এগুলি সম্ভব না। লুকিয়ে সেক্স করা হলে এটা কোন না কোন সময়ে প্রকাশ পেলে হাজার বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। বিয়ে না করলে আজীবন একাকীত্বকে বরন করতে হয়। মেয়েরা খুব কমই নিজেরা সাবলম্বি হয়, ভাবে তার স্বামীই তাকে সব ভরন পোষন করাবে ইত্যাদি। ফলে এদেশে বিবাহ ব্যবস্থাতাই একমাত্র সেই চাহিদার খোরাক। আমাদের সমাজেও যদি পশ্চিমা দেশের মতো এই সিস্টেম চালু হতো, আমাদের সমাজ ব্যবস্থায়তেও বিবাহ নামক এই প্রথা অনেক আগেই বন্ধ হয়ে যেতো। আমাদের সমাজে এই সংসার করার মুল কারন-(১) সেক্সের প্রয়োজনিতা (২) একাকীত্বকে দূর করা। (৩) কারো না কারো উপরে নির্ভর করা।
আমি এসব নবিবেচনা করেই শেষ অবধি তোমার জন্য আমার পুরু পরিকল্পনা পালটে দিয়েছি। এই পাল্টানোর পিছনে আমার কোন দুর্বলতা কাজ করে নাই। এটা কখনোই আমার মনে আসে নাই যে, এতো কিছু করার পরে যদি তুমি তোমার পরিকল্পনা পালতাও, তাহলে? আমি সেখানেও অনড়। অসুবিধা কোথায়? অন্তত কেউ তো ছিলো তোমার জীবনকে একটা নিশ্চিত গন্তব্যে পরিচালিত করা। সেটা না হয় আমিই হলাম। আমি সুখী এবং খুশি।
আমি তোমাকে ১০০% স্বাধীনতায় বাচিয়ে রাখতে চেয়েছি এবং চাই। তুমি জানো তুমি এই মুহুর্তে তুমি কতটা স্বাধীনতায় আছো। আর কতটা মনের জোরে আছো। তুমি এটাও জানো আমাদের সমাজ ব্যবস্থার নিরিখে তুমি কতটা কষ্টেও আছো। এটা শুধু জানো তুমি। কিন্তু আমি জানি, আমি তোমার কতটা নিরাপত্তা দিতে চাই আর কতোটা কি করলে তোমার বেচে থাকতে ভালো লাগবে। বাকীটা তোমার মন আর অন্তর জানে। আমি তোমাকে মাঝে মাঝে ফান করে বলি যদিও যে, ভাইগা যাইবা কিনা। সেটা আসলেই ফান। কিন্তু কখনো যদি এই ফানটাই বাস্তব হয়, আমি কিন্তু তারপরেও খুসি থাকবো এই কারনে যে, অন্তত তুমি ভালো আছো। আর কিছু না।
আর এই ফানটা বাস্তবে সম্ভব হলেও, যেদিন সম্ভব হবে, তার ঠিক একমাস পরে তোমার মন, তোমার প্রান, তোমার সারাটা অন্তর ঠিক আমার মৃত ড্রাইভার রুস্তমের মতো হয়ে যাবে। রুস্তম মরার ঠিক আগে আবার আমার কাছে ফিরতে চেয়েছিলো। আমার কাছে রুস্তমের ফেরার পথ জানা থাকলেও আর ফেরা হয় নাই। কারন তার তখন পা আমার দিকে এগুতে পারে নাই। মন তাকে বারবার আমার দিকে পুশ করলেও মনের জোরের বিপরীতে কা করে নাই। ভয় করেছে ওর। ফলে একদিন-একদিন রুস্তম সমস্ত আশা হারিয়ে হতাশার উজ্জ্বল দিবালোকে নিজেকে শেষ করে দেয়া ছাড়া আর কোনো পথ সে খুজে পায় নাই।
রুস্তম আমার বাসা চিনতো, আমার অফিস চিনতো, আমার সব কিছু চিনতো। কিন্তু এই চেনা পথেও রুস্তম আর ফিরে আসতে পারে নাই। যেমন তুমিও চিনতা আজকের এই বাসাটা। ইচ্ছে করলেই আমাকে বলে ১ দিন পর আবার চলে আসতে পারতা যখন তুমি পালিয়েছিলে। কিন্তু পারো নাই।
আর এটাকেই বলে জীবনের কাছে মানুষের পরাজয়।
বড় বড় ঝড়ে মানুষ হয় দালান খোজে, আর যদি দালান না পায়, বড় বড় গাছ খোজে। বড় গাছের নীচে ঝড় কম। হ্যাপির ঘটনাটা তার একটা বড় উদাহরন। তোমাদের সমস্ত পরিবারের উপর একটা ঝড় ছিলো। তছনছের আভাস কিন্তু পেয়েছ হ্যাপির যাওয়ার ২ দিন পর থেকেই। যেভাবে সবাই তোমাদেরকে আস্টে পিষ্টে ধরতেছিলো, কোনো অবস্থাতেই তোমরা আর ঐ গ্রামে থাকতে পারতা না। কিন্তু হয়তো আমি ছিলাম বলে রক্ষা পেয়ে গেছো। কিন্তু যদি না থাকতাম? আজ যতোটা শান্তিতে আর বুকের বল নিইয়ে ঘুরতে পারো, যদি না থাকতাম, তাহলে অতোটা নীচু হয়েই বাস করতে হতো বংশ পরম্পরায়। আর এই কষ্ট দেখতে নিজের চোখে। মাঝে মাঝে মনে হইতো, জীবনের পরাজয় মনে হয় এভাবেই হয়।
আমি এগুলি দেখেছি আমার এই ৫৮ বছর বয়সেই। তাই, আমি কাউকে ঠকাই না, কিন্তু আমি ঠকার জন্য রেডি থাকি। কারন আমার ঠকার মতো ক্ষমতা আছে। এটা টাকার জন্য না। এটা একটা মনের বল। নিজের মনের শক্তি।
আজমীও সোহেলের কাছ থেকে পালাইতে চায়। মাত্র ১০ লাখ তাকা হলেই নাকি আজমী সোহেলকে লাথি মেরে চলে যেত। কিন্তু আজমির সেটা নাই আর পালাইতেও পারে না। ও নিজেও এখন আর পালাইতে চায় না। তাই আমি সব সময় মানুষকে বলি, পারলে পালিয়ে যাও। আমি ধরে রাখি না। আমি কাউকেই ধরে রাখি না। মানুষ আমাকে ধরে রাখে। কিন্তু তোমার বেলায়, আমি তোমাকে ধরে রাখতে চাই কারন তোমার পালানোর কোন জায়গাও নাই।
খেয়াল করে দেখো- যেদিন তুমি পালিয়েছিলে, ঐ সময় ২ লাখ টাকা তোমার কাছে শত কোটির মতো মনে হয়েছে। সেই টাকাটা তোমার কাছে ছিলো একটা শক্তি। কিন্তু আজকে তোমার কাছে প্রায় ৬০ লাখ টাকাও মনে হয় না যে, এটা শক্তি। কারন তোমার লাইফ স্টাইল বদলে গেছে। তুমি এখন ইচ্ছে করলেই বন্যার ছেলের জন্য কিংবা বন্যা বা সুমী বা আরবি টিচার টাকা চাইলে না দিয়ে পারবা না। আর যদি না দাও, তুমিও বন্যার, সুমির কাছে কিংবা তোমার পরিবারের কাছেও একটা অসামর্থবান অকাজের অনর্থক এক পাবলিক। একটা সময় আসবে তোমার, মাসে ১ লাখ টাকা কামাই করলেও মনে হবে এটা এনাফ না।
তখন দরকার লাখ লাখ টাকা। কে দেবে তোমাকে সেই ভরসা? সব সময় টাকাই ভরসা না। একজন মানুষই কোটি টাকার ভরসা। চোখ বন্ধ করো, মনে মনে পালিয়ে যাও, দেখো কার হাতের মধ্যে সবচেয়ে বেশী নিরাপদ। কার কাছে গেলে ভালো ঘুম হয়। দুসচিন্তা না থাকে। সেই লোক পাওয়া বড় কঠিন। বন্যাকে তুমি হাজার হাজার টাকা দাও না। কিন্তু তুমি বন্যাদের কাছে লাখ টাকার ভরসা। অন্যদিকে সুমীর সেই ভরসাটাও আর নাই। অথচ তুমি একদম কাছেই আছো।
কথাগুলি কঠিন। কিন্তু এই কথাগুলি এতোটাই বাস্তব যে, আজমী এখন বুঝে এটা। সেফালী বুঝে, লিয়াকত বুঝে, খালেদা বুঝে, সুমী বুঝে, লামিয়া বুঝে, চইতী এখনো বুঝে নাই কারন চৈতী এখনো বাপের বিল্ডিং এ ভালো আছে। কিন্তু একটা সময় ছিলো, তখন বুঝে নাই। ঐ যে বললাম- “যদি আর একবার” এটা একটা অনুশোচনার নাম। হয়তো “যদি আর একবার” এই সুযোগটা কখনোই কারো জীবনে আসে না।