Categories
সব ফুল ঈশ্বরের সেবায় কাজে লাগে না যেমন তেমনি একই বাগানের মালি সব ফুলের একই রকমের যত্নবানও নন। এরজন্য ফুলকে যেমন দোষী বলা যাবে না আবার মালিকেও অপরাধে দন্ডিত করা যাবে না। এটাই বাস্তবতা। কিছু ফুল বিকশিত হওয়ার আগেই ঝরে যায় আবার কিছু ফুল বিকশিত হয়েই এমন জায়গায় স্থান পায় যা ফুলের জীবনকে নিয়ে যায় স্মৃতির অমরতায়। এইসব নির্ভর করে ফুল কখন কার হাতে কিভাবে থাকে আর কে কিভাবে কোন ফুলকে বরন করে। ফুলের কোন ভাষা নেই বলে জানা যায় না যে, এক ফুল আরেক ফুলকে হিংসা করে কিনা। কিন্তু মানুষের বেলায় এর পরিনতি অনেক ভয়াবহ।
এই পৃথিবীতে জীবন হচ্ছে একটা জুয়া খেলার মত। একই টেবিলে খেলার একই নিয়মে একজন হারে এবং আরেকজন জিতে। যে হেরে যায় তার কাছে জুয়ার টেবিলের অভিজ্ঞতা, বর্ণনা, কষ্ট, অনুভুতি, প্রভাব কিংবা তার মনোভাব এক রকম কিন্তু যিনি জুয়ার টেবিলে জয়ী হয়েছেন, তার অভিজ্ঞতা, বর্ণনা, আনন্দ, প্রভাব কিংবা মনোভাব একেবারেই বিপরিত। অথচ খেলাটা একই, খেলার টেবিলটা একই, খেলার নিয়মটা একই। কার কাছ থেকে আপনি বুদ্ধি বা পরামর্শ নেবেন? হয়ত বলবেন, জুয়া খেলাটাই তো একটা রিস্ক এবং ভাল জিনিস নয়। জীবনটাও ঠিক তাই। এর মধ্যে ভাল খেলা আছে, খারাপ খেলা আছে, দুটুতেই রিস্ক আছে আবার দুটুতেই লাভ লোকসান আছে। আপনি কি চান, কোনটা চান সেটা এখন আপনার। ভগবানের হিসাব আরেক অধ্যায়। সেটা আরেক তাত্ত্বিক এবং আধ্যাত্মিক বিষয় যা এখানে আমি অন্তত মিন করছি না।
যদি অন্যভাবে বলি, মানুষ যে কাজটা করতে গিয়ে তার ভুলের কারনে হেরে গিয়ে থাকে, অন্য কেউ সে একই কাজ করে ভুল না করে জীবনে জয়ী হতে পারে। হেরে গিয়ে আপনি কাউকে সাবধান করতে পারেন বটে কিন্তু যদি সেই অন্য কেউ সার্থক হয়ে ফিরে আসে, হেরে যাওয়া আপনি মানুষটি হয় জিতে যাওয়া মানুষটির হিংসায় লিপ্ত হবেন নতুবা আপনি জিতে যাওয়া মানুষের পথ ধরে জয়ী হওয়ার একবার চেষ্টা করবেন। তারপরের নীতিটা নির্ভর করে হেরে যাওয়া মানুষটির অর্ধ গ্লাস পানির বর্ণনায়- হয় হাফ খালি না হয় হাফ ভর্তি তার মানসিকতার উপর। সবাই বক্সিং রিং এ জিতে না। যে জিতে না তার কাছে অনেক কৈফিয়ত থাকতেই পারে কিন্তু হেরে যাওয়া মানুষের কাছে কেউ গল্প শুনতে আসে না। আর এ কারনেই পৃথিবীতে হার জিতের কারনে বন্ধুর প্রতি বন্ধুর, পরিবারের প্রতি পরিবাবের, স্বজন এর উপর স্বজনের দিনদিন হিংসা আর বিরূপ প্রভাব বেড়েই চলে।
পৃথিবীতে মানুষের রুচি ভেদে তার পরিবর্তন হয়। কেউ মদ বেচে দুধ খায় আবার কেউ দুধ বেচে মদ খায়। রুচি এমন একটা জিনিস যা একজনের সঙ্গে আরেকজনের খুব মিল থাকে না হয়ত তবে মাঝে মাঝে তার মিলের সাদৃশ্য থাকে। আপনি জীবন থেকে কি পেতে চান সেটা যেমন জরুরি, আপনি জীবনে কাকে কি দিতে চান সেটাও খুব জরুরি। জীবনটা একমুখি নয়। দেওয়া আর নেওয়ার মধ্যে এর লাভ লোকসান। আপনি বোয়াল ধরবেন, পুটি মাছের আহার দেবেন, এটা যেমন হবে না, তেমনি চাঁদে যাবেন নৌকায় চরবেন তাও হবে না। ঠিক সময়ে ঠিক ইন্সট্রমেন্ট, ঠিক সময়ে ঠিক যানবাহনে উঠতে হবে। আপনি ঠিক সময় ঠিক কাজটি করেন নাই মানে এই নয় যে ঠিক সময়ে ঐ কাজটি করে সার্থক হল তাকে আপনি আপনার হেরে যাওয়ার অভিজ্ঞতার কথা বলে পিছিয়ে আনবেন। আপনি অসময়ে সব কাজ করে ফেলবেন, কেন আপনি মনে করেন আপনি সার্থক হবেন? আপনি একসময় সবার কাছ থেকে পিছিয়েই থাকবেন এবং আপনার জন্য কেউ অপেক্ষা করবে না। আপনি যত বুদ্ধিমান আর যত পারফেক্টই হন না কেন। কখনো দেখেছেন বা শুনেছেন যে একই জলের এক বিন্দু ফোঁটা কোন এক ব্রিজের তল দিয়ে দুবার প্রবাহিত হয়েছে? আপনি যদি একবার এক ব্রিজের তল অতিবাহিত করে চলে যান, আপনার জন্য ফেরার কোন সুযোগ নেই। আপনি ভুল করেছেন না ঠিক করেছেন তা দেখার জন্য কেউ অপেক্ষা করে নেই। আপনি অবরুদ্ধ, আপনার মুল্য ঐ ব্রিজের কাছে শুন্য। আর আপনি যখন অবরুদ্ধ হবেন, তখন পৃথিবীটা প্রতি নিয়ত মুহূর্তে মুহূর্তে আপনার থেকে অনেক দূর সরে যাবে। হেরে যাওয়ার গল্প কেউ শুনতে চায় না। মানুষ স্বপ্ন দেখতে ভালবাসে আর স্বপ্ন পূরণে ব্রতি হয়।
পৃথিবীর আসেপাশে তাকিয়ে দেখুন, এটাই নিয়ম। লিকলিকে গাছ সবল গাছকে ধরে আকাশের দিকে বেড়ে উঠে, দুর্বল সবলকে ধরে হেটে চলে, অন্ধ আরেকজনকে অবলম্বন করে ঠিক পথ ধরে হেতে এগিয়ে যায়। আপনি কাকে ধরবেন, আর কাকে ছারবেন সেটা তো আপনার সপ্নের উপর নির্ভর করে। আপনি ভুল স্বপ্ন দেখেছেন বলে আরেক জন কে আপনি তার স্বপ্ন দেখাকে ভুল বলতে পারেন না। তার স্বপ্ন দেখা আর সেই সপ্নকে সফল করার কৌশল তার, আপনি হয়ত সেই কৌশল কখনোই শিখেননি।
আপনি নিজেকে দেখুন, যদি কখনো বিশ্বাস হারিয়ে থাকেন, অথবা কেউ আপনার উপর বিশ্বাস হারিয়ে থাকে, এর মানে হল, আপনি নিজেও কারো বিশ্বাস নিয়ে খেলা করেছেন। নিজেকে বিশ্বাস করুন আর নিজের বিশ্বাসের উপর কাউকে বিশ্বাস করতে দিন। আর এটাই হবে বিজয়ের জন্য প্রথম সোপান। যদি ভাবেন, শেষ হয়ে গেছেন, তাহলে আপনি সত্যি শেষ হয়ে গেছেন। আর যদি ভাবেন, না আপনি পারবেন, আবার শুরু করুন তাকে দিয়ে যে জিততে শুরু করেছে। সব দই চুন নয়, একবার দই মনে করে চুন খেয়েছেন বলে সেটাই যে সব তা কিন্তু নয়। আপোষ করুন, জীতবেন, তবে এবার ধীরে ধীরে। তাহলেই দিন বদল হবে, আর আপনার মুল্য ফিরে আসবে।