২৩/৫/২০২৪-স্ত্রী রম্যরচনা

শুক্রবার। সাধারনত আমি বাসায় থাকি। আমার বউ মাঝে মাঝে বাসায় থাকে কারন বেশিরভাগ সময়েই তার অফিশিয়াল কাজে কলেজে থাকতে হয়। বউকে বললাম, আমার জন্য শুক্রবারটা একটা কঠিন দিন। বড় মেয়ে তার নিজের বাসায় থাকে, ছোট মেয়ে বিদেশ, বউ কলেজে আর আমি বাসায়। বাসায় একা থাকায় দুপুরে খেতেও ইচ্ছে করেনা। খালার পাক করা খাবার খেতে খেতে এখন আমি মুটামুটি জানি এর সাধ কি আর কি আইটেম। কিন্তু আমি আমার অফিসে থাকলে অন্তত সময়টা কেটে যায়, কাজে ব্যস্ত থাকি, খাওয়া দাওয়াও সমস্যা না।

তো আজ শুক্রবার। সম্ভবত আমাকে খুশী করার জন্য তার একটা পরিকল্পনা আছে। সকালে উঠেই বলল, আজ দুপুরে সে বাসায় আছে। নিজের হাতে রান্না করবে। বেশ কিছু আইটেমও করবে। আমি আবার খাবারের বেলায় একেবারেই নাদান। বউ মাঝে মাঝেই বলে, আমি নাকি “আখাওড়া”। কিছুই খাইতে জানি না। আমিও বউকে বলি-তুমি হইলা গিয়া “চৌধুরী বাড়ির মাইয়া” খাইয়াই বড় হইছো, আমি তো মাদবর বাড়ির পোলা, মাইনষেরে খালী খাওয়াইছি। আমার কি দোষ।

যাক, সকালে এসেই বউ বলল-শোনো, ছোট মাছের চচ্চরী পাকাবো? খাইবা?

বললাম- করো। অসুবিধা নাই। খাওয়ার সময় খাইতে মন চাইলে খাইতেও পারি।

বউ বল্লো-জানি তো খাইবা না। টেবিলেই পড়ে থাকবে। থাক তাহলে ছোট মাছের চচ্চরি বাদ। তাহলে রুই মাছ পাক করি? রুই এর মাথাটা খাইও।

বল্লাম-এত বড় রুই এর মাথা খাইতে গেলেও জ্বালা। তারপরেও করো। খাওয়ার সময় দেখা যাবে।

বউ বলে উঠল- জানি তো, খাইবা না, শেষে আমারেই খাইতে হবে। থাক তাহলে রুই পাক না করে তাহলে মুরগী বা গরুর মাংশ পাক করি। গরম গরম খাইতে ভালো লাগবে। কি বলো?

আমি বললাম-করো। তবে আজকাল তো আর মাংশ টাংশ খেতেই চাই না। বয়স হয়ে গেছে। তারপরেও করো, দেখা যাক, ঝোলটোল দিয়ে খাওয়া হয়তো খারাপ লাগবে না।

বউ বলেই ফেলল- আমি জানতাম, তুমি এটাই বল্বা। সাধে কি আর তোমারে “আখাওড়া” বলি? ঠিক আছে, তাহলে খালাকে বলি কাঠালের বিচি দিয়া চিংড়ি মাছের একটা তরকারী করতে। কাঠালের বিচি দিয়া চিংড়ি মাছ খুব মজা।

বললাম, এটা আবার কি? ঠিক আছে করো। কখনো খাই নাই, খাওয়ার সময় টেষ্ট করে দেখবোনে কেমন লাগে। আজকাল কাঠাল মিয়াও সব্জীর কাতারে আইয়া পড়ছে। অথচ রাষ্ট্রীয় ফল কাঠাল। কতো অধোপতন, না?

এবার বউ বল্লো- খাইবা না তো জানি। শেষে সব আমারই খাওয়া লাগবে, না হয় খালাকে দিয়া রক্ষা পাইতে হবে। থাক তাহলে।

এরপর বউ বল্লো- ছাদে কলমীশাক আছে আর পুইও আছে। ওগুলি করি?

কিছু বললাম না।

এখন আমি একা কলমী শাক দিয়া পুই খাচ্ছি।