Categories
বাস্তবতা গল্পের থেকেও ভয়ংকর। এ যাবতকাল যতো আইন বহির্ভুত হত্যাকান্ড ঘটেছে, গল্প হয়তো একটা ছিলোই কিন্তু গল্পটা কেউ বিশ্বাস করলো কিনা সেটা যিনি গল্প বানালেন, না তিনি বিশ্বাস করেন, না যাকে বললেন, তিনিও বিশ্বাস করেন। গল্প লেখক নিজেও জানেন, গল্পটা কেউ বিশ্বাস করে না। তারপরেও সেই একই গল্প বলতেই থাকেন, এইভেবে যে, তাদের অপরাধের কোনো খবর কেউ জানে না। তারা ভুলে যান যে, আজ হয়তো কোনো ইনফর্মেশন হাতে নাই, কিন্তু কাল যে ইনফর্মেশন থাকবে না সেটা কি হয়? অপরাধকারী সবসময় ভুলে যায় যে, আইন অপরাধের গন্ধ পায়, আবার অপরাধীরও। কোনো অপরাধে কারো ইচ্ছা থাকুক আর নাই বা থাকুক, যখন সেই অপরাধের সাথে কেউ যুক্ত হয়, সেও অপরাধের সমান ভাগীদার। আইনের চোখে সেও সমান অপরাধী।
সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো যে, অপরাধীর পাপের ভার যখন অনেক বেশী হয়ে যায়, তখনই তার রেশ টেনে ধরার লক্ষ্যে পাপ সেই পাপীর জীবনকে অনেকগুলি ভাগে বিভক্ত করে ফেলে। আর এই বিভক্তি ভাগগুলি একটার সাথে আরেকটা এমন কিছু স্তরে নিয়ে যায় যেখানে অপরাধী নিজের অজান্তেই সীমাহীন জটিলতার পথ প্রশস্থ করে দেয়। তখন অপরাধীর পক্ষে অপরাধের সেগমেন্ট গুলিকে জোড়া লাগানো জটিল না শুধু সম্ভবও হয় না। ফলে এদের যে কোনো একটা ভাগ যখন সঠিক আইনের পাল্লায় পড়ে যায়, তখন প্রতিটি সেগমেন্টে করা অপরাধের সঠিক বিচারের মুখুমুখি হয়। এই সময়ে অপরাধী তাঁর গল্প অন্যদিকে মোড় ঘুরিয়ে দেবার জন্য নতুন কোনো গল্প বল্লেও কাজ হয় না। কারন অপরাধী যতো পা ই এগিয়ে থাকুক আইন তাঁর থেকেও দুই পা এগিয়েই থাকে। শেষ অবধি অপরাধী একটা শান্তনার দিকেই চেয়ে থাকে, কপালের লেখা বা ভাগ্য। কিন্তু আইন কপালের লেখা বা ভাগ্যকে মানেই না। অপরাধীর তখন একটু একটু করে বোধোদয় হতে থাকে যে, অপরাধের পরিনাম অপরাধী যা ভেবেছিলো সেটা তার ভাবনার থেকেও অনেক বেশী ভয়ংকর।
যখন কোনো কেসে বিখ্যাত লোক ফেসে যান, তখন সেই কেস খুব সহজেই নিজের থেকে মিডিয়া, কিংবা জনমন বা জনগন নজর কেড়ে নেয়। এ রকম কেসে শোনানো রায়ে মানুষ চুলচেড়া বিশ্লেষণ করে থাকে। তখন এইসব রায় আর কেস পুরু দেশকে নাড়িয়ে দেয়। এইসব কেসে যেমন গ্লামার থাকে, হরর থাকে তেমনি থাকে আক্রোশ। তখন পাবলিকের কাছে রায় এমনভাবে চুলচেড়া বিস্লেষনে মনে হয়, এই কেসের রায় ন্যায় হয় নি বা হয়েছে। আদালত যেই রায়ই দিক না কেনো।
মেজর সিনহার কেসটা এখন সেই পর্যায়ের একটা স্তর পার করছে দেশের প্রতিটি মানুষের কাছে। এখানে শুধু কিছু আসামীর ব্যাপারেই সারা দেশ বিস্লেষন করছে না, তারা তদন্ত প্রোসেস, বিচার বিভাগের ন্যায় পরায়নতা , আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নিরপেক্ষতা এইসব কিছুর দিকেই সুনিপুন মনোযোগ দিয়ে পর্যবেক্ষন করছে। ফলে সব বিভাগের জন্য এটা একটা অগ্নি পরীক্ষা বটে। হয়তো এটা সর্বোচ্চ প্রশাসনের জন্যেও একটা অগ্নি পরীক্ষা। এই পরীক্ষায় যদি আমরা হেরে যাই, হেরে যাবে সমগ্র দেশ।
আমার বিশ্বাস বাংলাদেশ কখনোই হারে নাই, এবারো হারবে না।