২৪/০৮/২০২৩-প্রিগোজিন সংবাদ-১

 

রাশিয়ার টিভিয়ার রিজিয়নে ভাগনার গ্রুপ প্রধান প্রিগোজিনের  প্রাইভেট জেট ১৩৫ বিজে লিগেসি ৬০০ মস্কো থেকে সেন্ট পিটার্সবার্গে যাওয়ার প্রাক্কালে ক্রাশ করে এবং অনবোর্ড সাতজন আরোহী এবং তিনজন ক্রু মোট ১০ জনই নিহত হয়েছে বলে খবরে বলা হয়েছে। এই সাতজন আরোহীর মধ্যে ভাগনার গ্রুপ প্রধানের নাম লিষ্টেড ছিলো। খুব স্বাভাবিক চিন্তায় এটাই ভাবার কথা যে, ভাগনার গ্রুপ চীফ আর বেচে নেই। কিন্তু কোনো রাশিয়ান টিভি নিউজ, কিংবা গোয়েন্দা তথ্যে তাঁর মৃত্যুখবরের সত্যতা নিশ্চিত করছেনা। খবরে আরো প্রকাশ করেছে যে, প্রিগোজিনের দুটু জেট পরপর উড্ডয়ন করেছিলো যার একটির টেইল লেজ আরএ-০২৭৯৫ এবং অন্যটি আরএ-০২৮৭৮। প্রথমটিতেই ভাগনার চীফের নাম প্যাসেঞ্জার লিষ্টে ছিলো যেটা ক্রাশ করেছে কিন্তু ২য়টি সেফ ল্যান্ডিং করেছে। ইতিমধ্যে ১০ জন নিহতের মধ্যে ৮ জনের বডি পাওয়া গেছে আর দুইজনের পাওয়া যায়নি। এই আটজনের মধ্যে প্রিগোজিনের বডি নাই।

উপরের খবরগুলিই এ পর্যন্তই সবসুত্র থেকে পাওয়া যাচ্ছে।

এর পরিপ্রেক্ষিতে আমার কিছু এনালাইসিস আছে। যা নিম্নরূপঃ

(ক)       এমন একটা জেট ক্রাশিং এর জলন্ত অগ্নীর বিভিষিকায় কারোরই বডি কিছুটা হলেও অক্ষত থাকতে পারেনা। অন্তত মুখ দেখে তাদেরকে সনাক্ত করার উপায় থাকার কথা না। ডি এন এ টেষ্ট করার মতোও কোনো উপযোগী তথ্য পাওয়া যাওয়ার কথা না অথচ আটজনকে খুব সহজেই শনাক্ত করা গেলো। ব্যাপারটা খুব একটা কনভিন্সিং না আমার কাছে।

(খ)        আজকাল বডি ডাবল করা খুব কঠিন কাজ নয়। বডি ডাবল করে আজকাল বিখ্যাত লোকেরা যে কোনো নামীদামী হোটেলেও তাদের নামে হোটেল বুকিং করে দেখা যায় অন্যত্র অরিজিনাল ব্যক্তি অন্য কাজ করছে। আর এটা তো মাত্র একটা প্রাইভেট জেট, আর প্যাসেঞ্জার লিষ্টে নাম তোলাও খুব একটা আহামরি কিছু না। তাহলে কি এটা একেবারেই উড়িয়ে দেয়া যায় যে, প্রিগোজিন নিহত হবার ব্যাপারটা একটা নাটক বা ভিন্ন কৌশল? হয়তো বডি ডাবল? হতে পারে প্রিগোজিনের এই নাটক দিয়ে প্রিগোজিন আবার নিরাপদ জীবন যাপনে স্বাভাবিক লাইফ লিড করবেন কিনা।  

(গ)       প্রিগোজিনের জেট ক্রাশ করার সময় সিংগেল হ্যান্ডে ইউক্রেনের একটা আর্মারড ব্রিগেডকে ধংশকারী রাশিয়ার ট্যাংক সদস্যকে মেডাল পুরুষ্কার দিচ্ছিলেন প্রেসিডেন্ট পুতিন এবং এ যাবত সময় পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট পুতিন প্রিগোজিনের নিহত হবার ব্যাপারে বা অন্যান্য সদস্যদের নিহত হবার ব্যাপারে কোনো প্রকার মন্তব্য করেন নাই। তিনি পুরুই নীরব। ব্যাপারটা একটু অদ্ভুত লাগছে।

(ঘ)        প্রিগোজিনের মৃত্যুর সংবাদ এর আগেও অনেকবার খবরের মধ্যে ব্রেকিং নিউজ হিসাবে এসেছিলো। ১ম বার এসেছিলো তাও আবার অফিশিয়ালভাবে ২০১৯ সালে আফ্রিকায়। অতঃপর সে জীবিত অবস্থায় ডনবাসের ফ্রন্টলাইনে আবার যুদ্ধ করেছে।

(ঙ)       যদি প্রিগোজিন আসলেই নিহত হয়ে থাকে যা এখনো কেউ নিশ্চিত করছেনা, তাহলে হতে পারে কি যে, প্রেসিডেন্ট পুতিন প্রিগোজিনের তথাকথিত অভ্যুথানের কারনে পূর্বের সাধারন ক্ষমা ঘোষনায় লোক দেখানো একটা নাটক করেছিলো কিন্তু এই ক্রাশের মাধ্যমে তাকে সরিয়ে দেয়াই ছিলো মুল পরিকল্পনার একটা গোপন পর্ব যাতে প্রেসিডেন্টের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন না হয়? কিন্তু এখানে আরো একটা বড় প্রশ্ন থেকে যায় তখন, আর সেটা হলো নিষ্পত্তিমূলক একটা বিতর্কিত ভুল বুঝাবুঝির অবসানের পর প্রিগোজিনকে সরিয়ে দিয়ে পুতিনের লাভ কতটুকু। অথবা পুতিনের থেকেও কি অন্য কারো আরো বেশী লাভ হয়েছে প্রিগোজিনকে সরিয়ে দিয়ে? এখানে বলে রাখা ভালো যে, প্রিগোজিন সেই অভ্যুথানের পরে রাশিয়াকে গ্রেট এগেইন করার একটা প্রতিশ্রুতি এবং আফ্রিকাকে আরো মুক্ত করার ঘোষনা দিয়েছিলো।   পুতিনের থেকে তাহলে আর কাদের বেশী লাভ হতে পারে প্রিগীজিন নিহত হলে? প্রিগোজিন আফ্রিকার নিজারে কোনো প্রকার হস্থক্ষেপ করুক এটা পশ্চিমা বিশ্ব, ফ্রান্স, ব্রিটিশ এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের কেউ চায়নি বরং তারা প্রিগোজিনের ব্যাপারে অনেক দুশ্চিন্তায় ছিলেন। অন্যদিকে পোল্যান্ড বেলারুশে ভাগনার গ্রুপ এবং তাঁর চীফ প্রিগোজিন অবস্থান করবে এটা জেনে যথেষ্ঠ দুসচিন্তায় ছিলো এবং ইতিমধ্যে পোল্যান্ড সেখানে প্রায় ৩০ হাজার সৈন্য মোতায়েন করেছে। এটাও হতে পারে যে, রাশিয়া নয়, অন্য কেউ এই স্যাবোটাজ করেছে?

অনেক প্রশ্নের উত্তর আমরা এখুনি হয়তো জানতে পারবো না, হয়তো কখনোই জানতে পারবো না। “সময়” সব সময় এর সঠিক উত্তর জানে।

 

বিশ্ব শান্তিতে থাকুক, যুদ্ধ বন্ধ হোক, সাধারন মানুষের জীবনযাত্রা আরো নিরাপদ হোক, আসলে আমাদের মতো আম জনতা এটাই চায়।