২৫/০৭/২০২৩-২য় বিশ্বযুদ্ধ আসলে শুরু হয়েছিলো ১ম

২য় বিশ্বযুদ্ধ আসলে শুরু হয়েছিলো ১ম বিশ্বযুদ্ধের মধ্যে করা ভার্সাই চুক্তির মাধ্যমে। কেউ যদি নিউট্রালি নিজেকে প্রশ্ন করে যে, একটা বিশ্বযুদ্ধ জার্মানী করলো, সে অনেক ক্ষতিগ্রস্থ হলো, আবার সে জেনেবুঝে আরেকটা বিশ্বযুদ্ধে কেনো লিপ্ত হলো? এর উত্তর খুব সোজা-১ম বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মান তো প্রায় মৃতই হয়ে পড়েছিল এবং সে জীবিত থেকেও মরা। খাবার নাই, সামরিক বাহিনী নাই, তাদের অরিজিনাল ভুখন্ড নাই, সবার থেকে একঘরে, অন্যদিকে এতো পরিমান যুদ্ধ-ক্ষতির কিস্তি পরিশোধ, মিত্রবাহিনীর দ্বারা নিগৃহীত ইত্যাদির ফলে তারা আসলে বেচে ছিলো না। তাই হয় আরেকটা বিশ্বযুদ্ধ করে বাচি, আর তানা হলে মরেই তো আছি। এটাই ছিলো সেই মনের ভিতরের ক্ষোভ যে কারনে জার্মানী আরেকটা যুদ্ধে লিপ্ত হতে বাধ্য হয়েছিলো। তাহলে এখন আসি, কিসের কারনে জার্মানীর ভিতরে এতো ক্ষোভ ছিলো। তাহলে কি ছিলো সেই ভার্সাই? চুক্তিতে কি ছিলো? চলুন একটু দেখি আসিঃ

(ক)      জার্মানীকে ১৩% ভুখন্ড ছাড় দিতে বাধ্য করা হয়েছে। আর সেগুলি হচ্ছেঃ

  • Alsace Lorraine (France)
  • Eupen and Malmedy (Belgium)
  • North Schleswig (Denmark)
  • Hulschin (Czechoslovakia)
  • West Prussia, Posen and Upper Silesia (Poland)
  • Saar, Danzig and Memel (League of Nations)
  • All gains from the Treaty of Brest Litovsk (Russia)
  • All colonies (League of Nations – given to France and Britain as ‘mandates’)

(খ)       যুদ্ধের ক্ষতি হিসাবে জার্মানীকে ৩২ বিলিয়ন ডলার ক্ষতিপুরন দিতে বাধ্য করা হয়, যা ২০২১ সালের হিসাবে হবে ২৮৪ বিলিয়ন পাউন্ড। জার্মানীকে এই ক্ষতিপুরন দিতে মোট সময় লেগেছে ৯২ বছর।

(গ)       ৭টি ইনফ্যান্ট্রি ডিভিশন, তিনটি ক্যাভালরি ডিভিশন নিয়ে মাত্র অনুর্ধ ১ লক্ষের বেশি জনবল রাখার সীমিতকরন করা হয়। কোনো প্রকারের কনস্ক্রিপশন করা নিষিদ্ধ করা হয়। জার্মানীর সামরিক বাহিনিতে কোনো জেনারেল পদবীতে উন্নিত করা যাবে না। কোনো প্রকারের মিলিটারী ড্রিল, এক্সারসাইজ হোক সেটা প্রাক্টিক্যাল বা থিউরিটিক্যাল করা যাবে না।

 (ঘ)    নেভীর লোক সংখ্যা ১৫০০০ এর অধিক হতে পারবে না। ৬টি মাত্র ব্যাটলশীপ রেখে বাকী সব ব্যাটলশিপ হয় অন্য দেশের অধীনে রিজার্ভে রাখতে হবে অথবা সেগুলি শুধুমাত্র কমার্শিয়াল ব্যবহারের জন্য জার্মানী রাখতে পারবে।

(চ)      জার্মানীর বিমান বাহিনীকে পুরু নিষিদ্ধ ঘোষনা করে দেয়া হয় এবং জার্মানী কোনো প্রকার বিমান বাহিনী থাকবে না। কোনো প্রকার এয়ার ক্রাফট বা যুদ্ধ ম্যাটেরিয়াল নিজেরা তৈরী করতে পারবে না।

(ছ)       জার্মানীর কয়লারখনি সমৃদ্ধ এলাকা The Saar সেটা ফ্রান্সকে ১৫ বছরের জন্য হস্তান্তর করা হয়।

(জ)       রেইনল্যান্ড এবং এর আশেপাশে ৩১ মেইল পুর্বের দিকে নদী পর্যন্ত ডি-মিলিটারাইজড জোন হিসাবে ঘোষনা করা হয় এবং এই ডি-মিলিটারাইজড এলাকায় জার্মানীর কোনো প্রকার কনস্ট্রাক্সন নিষিদ্ধ করা হয়। শুধু তাইই নয়, উক্ত অঞ্চলে এর পরের ১৫ বছর অবধি মিত্র বাহিনীর উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়।

(ঝ)       অষ্ট্রিয়ার সাথে একত্রিত হওয়া জার্মানীর নিষিদ্ধ ঘোষনা করা হয়েছিলো।

(ট)       নবগঠিত লীগ অফ ন্যাশন্সের মধ্যে জার্মানীকে নিষিদ্ধ ঘোষনা করা হয়।

 (ঠ)     জার্মানীকে রাষ্ট্রীয়ভাবে যুদ্ধের সব ব্লেইম নিতে বাধ্য করা হয় এবং জার্মানী এই যুদ্ধাপরাধির ব্লেইম একা নিতে নারাজ ছিলো।

১৯২৩ সালের অক্টোবরে এসে জার্মানীর অর্থনীতি এমন একটা স্তরে পৌঁছেছিলো যে, সারা জার্মানিতে দুর্ভিক্ষ এবং ইনফ্লেশনে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছিলো। নভেম্বর ১৯২৩ তে দেখা যায় যে, জার্মানীর ৪২ বিলিয়ন মার্কের দাম হয় মাত্র আমেরিকান ১ সেন্টের সমান। অর্থনৈতিক দুরাবস্থার কারনে গনমানুষের জন্য লঙ্গরখানা স্থাপন করে শুধুমাত্র গনখিচুরির মতো খাবার সার্ভ করা ছাড়া আর কোনো বিকল্প ছিলো না। ভার্সাই চুক্তির এরুপ শর্তের কারনে পুরু জার্মান জাতী রাগান্নিত ছিলো এবং সেই কমন রাগ আর ক্ষোভ থেকে মানুষের মধ্যে একটা ইউনিটি তৈরী হয়েছিলো। আর ঠিক এই সময়ে হিটলার জার্মানীর চ্যান্সেলর হিসাবে দায়িত্ব গ্রহন করে।

হিটলার দায়িত্ব গ্রহন করার পরেই সে ভার্সাই চুক্তির এসব যুদ্ধের ক্ষতিপুরনের অর্থ দিতে অসম্মতি জানায় এবং বন্ধ করে দেয়। হিটলারের এমন আচরনে জার্মানবাসী যেনো সর্গের কোনো দেবতা হাজির হয়েছে এমন জনপ্রিয়তা লাভ করে। তার এই জনপ্রিয়তায় এমন একটা পর্যায়ে হিটলারকে নিয়ে গিয়েছিলো যে, হিটলার যা চেয়েছে সেটাই তার জনগন সতস্ফুর্ত ভাবে আমল করেছে। হিটলার তার দেশবাশীকে এটা বুঝাতে সক্ষম হয়েছিলো যে, ভার্সাই চুক্তির কোনো কিছুই তারা মানে না এবং তার কোনো কিছুই তারা পে করবে না। এবং তার সাথে জার্মানী যেসব জায়গা, সম্পত্তি, হারিয়েছিলো, তা আবার পুনরোদ্ধার করা হবে। হিটলার জার্মানীকে রি-মিলিটারাইজড করা শুরু করে।

জার্মানীর প্রতিটি সর্বস্তরের মানুষ তাদের দুর্ভিক্ষ অর্থনৈতিক সংকট, মানবেতর জীবন এবং বিশ্ব দরবারে এরুপ মান হানীকর লজ্জার কারনে হিটলারের পিছনে সারিবদ্ধ হয়েছিলো পরবর্তী যুদ্ধের জন্য। আর সেটা ২য় বিশ্বযুদ্ধ। ২য় বিশ্ব যুদ্ধের প্রাক্বালে জার্মানীর ভুমিতে দাঁড়িয়ে জার্মানীর অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আরেকটা যুদ্ধকে সমর্থন না করা সম্ভব ছিলো নয়।