২৬/০৯/২০২৪-বিপ্লব

একটি বিপ্লব সব সময়ই বড় কনো পরিবর্তন নিয়ে আসে। কিন্তু কখনো কি কারো মনে এই প্রশ্ন জেগেছে যে, এক সপ্তাহ, এক মাস কিংবা এক বছর ধরে চলা একটা বিপ্লব কি করে সমাজ কিংবা রাষ্ট্রের আগাগোড়া বদলে দেয়? আপাতদ্রিষ্টিতে কোন বিপ্লবের স্থায়ীত্তকাল যতোই হোক না কেনো, এর পিছনে থাকে শত বছরের পুরানো পটভূমি। একটু একটু করে জমতে থাকা মজলুম জনতার কষ্টের হাজারো কাহিনী।  

ইতিহাসের দিকে নজর দিলে এটাই দেখা যায় যে, রুশ বিপ্লব, শিল্প বিপ্লব, ফ্রান্স রেভুলিউশন, এদের প্রত্যেকের একেকটা রুপ ছিলো। রুশ বিপ্লবে জারদের অমানুসিক শাসন ব্যবস্থা, ভুমি দস্যুতা, নিম্নগামী জীবন ব্যবস্থা ইত্যাদির কারনে রাশিয়ার মানুষ গুলি জারদের বিরুদ্ধে এক সময় আন্দোলনে নামে।

 যদি শিল্প বিপ্লবের দিকে তাকাই, শিল্প বিপ্লবে মানুষের জীবন মাত্রায় কিছুটা উন্নতি হলেও শাসন ব্যবস্থায় ছিলো চরম নিষ্ঠুরতা। মানুষ যখন কোনো শাসকের বিরুদ্ধে কথা বলতে চায়, তখন সেই শাসকদের সবার একটাই পথ, সাধারন মানুষকে তোপের মুখে, বন্দুকের মুখে নিবারন করা। আর এই তোপের মধ্যে বসবাস করতে করতে  সাধারন জনগন ধীরে ধীরে আরো ফুসতে থাকে। মানুষ যখন ভিতরে ভিতরে ফুসে যেতে থাকে, তখন তারা একে অপরের কাছে চলে আসে, তখন ধর্ম, রাজনিতির মত পার্থক্য, বর্ন, জেন্ডার কিংবা শিক্ষিত অশিক্ষিতের মধ্যে কোনো তফাত থাকে না, তাদের মধ্যে একটা আনবিক বন্ধন তৈরী হয়। এই আনবিক বন্ধন থেকে আঞ্চলিক, সগোত্রীয় কিংবা ক্লাসভিত্তিক একটা নিউক্লিয়াসের মতো শক্ত বন্ধন ধীরে ধীরে এমনভাবে তৈরী হয় যেখানে যে কোনো একটি বন্ধনে যদি কেউ ওই পরিমান আঘাত হানতে সমর্থ হয়, যেখানে মাত্র একটা স্ফুলিঙ্গের কারন হতে পারে। তাহলেই বিপ্লব হতে বাধ্য। সেই ক্ষনিকের স্ফুলিংগটাই আসলে দরকার পড়ে পুরু ফুসতে থাকা অগ্নি গর্ভে বিস্ফোরন ঘটানোর জন্য।

বাংলাদেশেও ৫ ই আগষ্টের বিপ্লবটারও একতা বৈ শিষ্ঠ আছে। এটা বাহ্যিক চোখে যাইই দেখা যাক না কেনো, এটা আসলে শুধুমাত্র বৈষম্যমুলক কোটা আন্দোলের একচ্ছত্র ফসল ছিলো না।  এই কোটা আন্দোলন ছিলো ওই যে বললাম, একটা নিউক্লিয়াসের কোন একটা স্তরে আঘাত হানার জন্য ছোট একটা অঙ্গিস্ফুলিংগ। আর সেই স্ফুলিজ্ঞের স্পার্ক বিদ্যুৎগতিতে অন্য স্তরের ফুসে থাকা সমস্ত রাগ, অপশাসনের কারনে মানুশের দূর্ভোগের বহির্প্রকাশের একটা জন সমষ্টিগত যাগরন এবং প্রতিরোধ।

এরমানে আমরা এই বিপ্লবকে এভাবে সংগায়িত করতে পারি না যে, গুটিকয়েক ছাত্র, বা গুটিকতক রাজনৈতিক পরিচয়ধারী মানুষ কিংবা কিছু সংখ্যক মজলুমের কারনে সারা দেশব্যাপি আন্দোলন হয়েছে এবং তাদের কারনেই এটা সফল হয়েছে। এটা কখনই কারো একার কৃতীত্তের দাবিদার নন। এখানে কোন মাস্টারমাইন্ডও ছিল না। মাস্টারমাইন্ড থাকে যখন কোনো ক্যু হয়, গনবিপ্লবে কোনো মাষ্টার মাইন্ড থাকে না। এটা হয় সব মানুষের বিভিন্ন ক্ষোভ, অপশাসন আর পুঞ্জিভুত নির্যাতনের একসাথে বহিঃপ্রকাশের কারনে। বাংলাদেশের জনগনের মধ্যে ৫০% এর উপরে জনগনের কোটা নিয়ে আন্দোলন করার কোনো যৌক্তিক কারন ছিলো না, কিন্তু সেই ৫০% জনগনের উপর পরিচালিত জুলুমের কারনে তারা সোচ্চার হয়েছে। বাংলাদেশের প্রায় ৩৫% মানুষের রাজনইতিউক কোন কারন নাই যার কারনে তারা বিপ্লব করতে যাবেন কিন্তু সেই ৩৫% মানুষ সরকারের অপরাজনইতিকতার কারনে অসহ্য ছিলো। বাংলাদেশের মানুষের প্রায় ৭০% মানুষ তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত ছিলেন, তারা সেই অধিকারের পুনরোদ্ধারের জন্য আন্দোলনে গেছেন। বাংলাদেশের মানুষ বিচার বিভাগীয়, আইন বিভাগিয় সেকটর গুলি থেকে শুধু অন্যায় আর জুলুমই দেখেছেন, তারা সেই অন্যায়কে সমুলে উৎখাত করতে মাঠে নেমেছিলেন। এখানে কোনো মাস্টার মাইন্ড বলতে কিছু নাই।