২৬/১২/২০১৯- লিসা ফিরে গেছে

Categories

আজ থেকে সেই কয়েক বছর আগের কথাই বারবার আমার মনে পড়ছে। যা বুঝতেও পারি নাই, আমাকে বুঝতেও দেয় নাই। আমি বহুবার ভেবে দেখার চেষ্টা করেছিলাম, কেনো শেষ পর্যন্ত ওর সাথে সম্পর্কটা রইলোই না। খুব জোরালো কোনো যুক্তি খুজে পাই নাই বটে কিন্তু একটা ব্যাপার পরিষ্কার হচ্ছিলো। আর সেটা হচ্ছে নির্ভরতা। একজন বিদেশী, যা ছিল তার, তা হয়ত অনেক না, আবার আশেপাশের যারাই ওকে একটু ভরষা দিতে পারতো, তারাও তার গোত্রের মত কেউ না। একটা শুন্যতা, একটা শংকা, একটা ঘেন্না বোধ কাজ করেছিল ওর চাহিদার আর পাওয়ার মধ্যে। মানুষ তার নিজস্ব পথে তার হিসাব নিকাষ করে। হয়তবা সে চেক এন্ড ব্যালেন্স করে একটা হিসাবের খতিয়্যান বের করেছিল যে, জিবনে ভালভাবে বেচে থাকার জন্য শুধু ধর্ম, সংসার আর বর্তমান নিয়ে চলে না। নীতি আর পলিসি দিয়েও চলে না। তার জন্য দরকার একটা নিশ্চিত ভবিস্যতের গ্যারান্টি। এটা যেই দিক তাতে কিছু যায় আসেনা। এটা আমার জানা ছিলো না। কিন্তু কথা তো সত্য।

ক্ষুধা পেটে ভালো মানুষের সাথে ভালোবেসে রাস্তায় রাস্তায় বহুদুর যাওয়া যায় না। আবার নিজের যোগ্যতার চেয়ে শুধুমাত্র সংসার বা বন্ধনের নামে একজন অযোগ্য ব্যক্তির হাত ধরেও অনেক দূর যাওয়া যায় না। কারন সেখানে থাকে যোগ্যতা আর অযোগ্যতার প্রকান্ড এক বিভেদের দেয়াল যা যেমন যোগ্য ব্যক্তিও টপকাইতে পারেনা আবার  অযোগ্য ব্যক্তিও ব্যালেন্স করতে পারে না। কিন্তু ভরপেটে আরামদায়ক এসি গাড়িতে হাই স্পীডে প্রকৃতির দৃশ্য দেখতে দেখতে কোনো এক অসম অসুন্দর বিত্তবানের সাথেও জীবন আনন্দময় হয়ে উঠে। সেটা হোক না যে কোন বিনিময়ের মাধ্যম। যা একজন এম্নিতেই ছিনিয়ে নেবে বিনা পয়সায়, তাই যদি কেউ ছিনিয়ে নয় আপোষেই নিয়ে এক আয়েসীর জীবন দেয়, তো ক্ষতি কি? ঈশ্বরের সাথে বুঝাপরা ভিন্ন। ওগুলি আজকাল আর কেউ আমলে নেয় না। আর আমলে নেবার জন্য কেউ বসেও নাই। যদি তাইই হতো, তাহলে পৃথিবীতে এতো সুন্দর সুন্দর রমনীরা দেহবৃত্তি করতো না। এতো এতো শিক্ষিত জনপদ এইসব সুন্দুরী মেয়েদের তাদের জীবন সাথী পাবার জন্য অনেক বেগ পেতে হয় না, কিন্তু তারপরেও তারা সুন্দর নর বা ভালো নরকে নয়, তারা চায় সুন্দর জীবনের প্রতিশ্রুতি।

লিসা ফিরে গেছে সম্ভবত তার সেই ভাবনা থেকেই। সে ফিরে গেছে তার সেই পুরানো জায়গায় যেখানে ওর জন্য প্রস্তুত রয়েছে অফুরন্ত আয়েশের উৎস, রয়েছে নিরাপত্তার গ্যারান্টি, আর তার সাথে আছে নিজ দেশের মাটির সাথে বন্ধন। জীবন একটাই। তাকে আনন্দময় করে কাটানোর অধিকার সবার আছে।

ঘৃণা কার নাই? সংসার জিবনে কি ঘ্রিন্না নাই? দম্পতিদের জীবনে কি ঘৃণা নাই? আছে। তারপরেও সবাই যার যার মতো করে ঘৃণাটুকু বাদ দিয়েই যেটা দরকার সেটা নিয়েই আনন্দে বাচে। জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপেই মানুষ তার গতিপথ বদলাতে পারে। আর এই গতিপথ বদলানোর জন্য যে ক্ষমতা দরকার, আগে সেটাই খুব দরকার যার নাম- যোগ্যতা আর অর্থের প্ল্যাটফর্ম। লিসাকে কোনোভাবেই এখন আর দোষ দেইনা। কি দিতে পারতাম? পারতাম কি তাকে ওই সেন্ট লুইসের একটা সুইটে নিয়ে গিয়ে জাপানিজ এক্সপার্টদের সাথে বসিয়ে এক কাপ চা খাওয়াতে? কিংবা পারতাম কি লিসাকে ওই দুবাইয়ের বুরুজ রেস্টুরেন্টে একদিনের জন্য বেড়াতে নিতে যার ব্যয় ৫ বছরের এক্ত্রিত সঞ্চয় এর সমান? লিসা ঠিক বুঝেছিলো যে, স্বামী, সংসার, আর নিঘাত একটা দৃশ্যমান ভালোবাসায় আর যাই হোক, জীবনের সব চাওয়া পাওয়ার সাধ মিটে না। হিসাব তার পরিস্কার। আর সেই হিসাবে লিসা তার দিক থেকে ঠিক কাজটাই করেছে। আগে ভুল হয়েছিল, বা সরি হয়েছি এইটুকুর ওজন অনেক। যে সময় মত এর আবেদন করতে পারে, সেইই আবার জিতে যায় পরাজিত জীবনের কাছে। তখন আবার নতুন করে জীবনের খাতা শুরু হয় সেই পুরানো ধাচেই আর তখন আবার সপ্নের সব অট্টালিকা থেকে দেখতে পাওয়া যায় ওই দূরের আকাশের রাতের ঝিকিমিকি তারা গুলি, যেখানে মাঝখানে ঝরের মতো হারিয়ে যাওয়া কিছু সময়ের মুল্য আর চোখেই পড়ে না।

লিসা ফিরে গেছে এটাই বাস্তবতা।