২৭/০৬/২০১৭-বিংশ শতাব্দির চেহাড়া

Categories

এই বিংশ শতাব্দির আইটির দ্বারপ্রান্তে বসে যখন আমরা ডিজিটাল পৃথিবীর কথা বলছি, তখন আসলে আমরা এই ডিজিটাল বিশ্ব বলতে কি বুঝতেছি সেটা কি আদৌ কেউ সঠিকভাবে উপলব্দি করতে পারছি? আমার ক্ষুদ্র জ্ঞ্যানে যা মনে হয় তা হচ্ছে, এই পৃথিবী আইটির বদৌলতে অনেক এগিয়ে যাবে ঠিকই কিন্তু মানুষকে সেই আগের দিনের অনেক সিস্টেমে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে। আগেরদিন বলতে আমি বলতে চাচ্ছি, ঠিক ঐ আগের দিনের কৃষকের চরিত্রে। (আমি এই কৃষক চরিত্রটি বলছি রূপক অর্থে প্রোডাকসন ইউনিটের মালিক হিসাবে)। সম্ভবত সমাজ ঐ দিকেই ধাবিত হচ্ছে। এবং বর্তমান আইটি সেটাই সংকেত দিচ্ছে।

ব্যাপারটা একটা উদাহরন দিয়ে যদি আরো খোলাসা করে বলি।

ব্যাপারটা এইরকম যে, আগেকার দিনে একজন কৃষক তার জমিতে সব ধরনের ফসল ফলিয়ে তাদের অধীনে কর্মরত কিছু লোকবল দিয়ে সরাসসি তার প্রোডাক্ট মার্কেটে অন্য ভোক্তার কাছে বিক্রি করতো। ফলে এই প্রোডাকসন ইউনিট (অর্থাৎ কৃষক আর ভোক্তাবর্গ সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে লেনদেন হয়েছে, কিছু কিছু মধ্যসত্ত্ব দালাল হয়ত এর মাঝে কাজ করেছে কিন্তু সেটা হয়ত একধাপ বা সর্বচ্চ দুইধাপ। অনেক ক্ষেত্রেই মধ্যসত্ত দালালী একেবারেই থাকতো না।) এর ফলে কি হয়েছে যে, কৃষক তার আইটেমের ন্যায্য মুল্যের কিছুটা বেশি হলেই ভোক্তার কাছে সরাসরি তুলে দিতে পারতেন। যদি মধ্যসত্ত্ব দালাল যোগ হতোও, তাহলে ভোক্তাকে কিছুটা হলেও বেশি দাম দিতে হতো কিন্তু সেটা সহনীয় পর্যায়েই ছিলো। কিন্তু যখন দালাল, মধ্যসত্ত্বভোগী কিছু সিন্ডিকেট এর মাঝে জড়িয়ে পরলো, ধাপে ধাপে পন্যের মুল্যও বাড়তে থাকলো এবং যত বেশি মধ্যসত্ত্ব দালাল, কিংবা যতো বেশি ইন্টারমিডিয়ারী কর্মচারী এই কৃষক আর ভোক্তার মাঝে যোগ হতে থাকলো, প্রতিটি আইটেমের মুল্য ক্রমেই বেড়ে চললো। আর ভোক্তাও বেশি চড়া দামে তা কিনতে বাধ্য হলো। এইসব সিন্ডিকেটের ফলে কোথাও মজুত এবং তারপরে চড়া দাম ভোক্তাকে গুনতে হলো। এর ফাকে আবার কোথাও কর্পোরেট অফিস স্থাপিত হলো যেখানে পন্যের মুল্য কোনো না কোনোভাবে বাড়ানোর পায়তাড়া শুরু হলো। কর্পোরেট অফিসের কারনে কেনো পন্যের দাম আরো বেড়ে গেলো? কারন কর্পোরেট অফিসের স্টাফদের পোষা অনেক খরচ। আর এই খরচতো ঐ ভোক্তাদের কাছ থেকেই আদায় হয়। কোনো কিছুতেই এই সব জাল, সিন্ডিকেট, গ্রুপ, কর্পোরেট কনসেপ্ট থামানো যাচ্ছিলো না। এখনো না।

কর্পোরেট অফিসগুলি কিভাবে কাজ করে? তারা অতি এক্সপার্ট কিছু জানেওয়ালা স্টাফ নিয়োগ করেন ধাপে ধাপে বা স্তরে স্তরে। একজনের থেকে আরেকজন, আরেকজনের থেকে আরেকজনের ধাপ। শ্রমিককে কন্ট্রোল করার জন্য ম্যানেজার, ম্যানেজারকে কন্ট্রোল করার জন্য এজিএম, এজিএমকে কন্ট্রোল করার জন্য ডিজিএম, ডিজিএম এর উপর আবার ইডি, ইডির উপরে ডিএমডি, এছাড়া তো কমারশিয়াল, মার্কেটিং, হিউম্যান রিসোর্স, কমপ্লায়েন্স, ট্রেড ইউনিয়ন ইত্যাদি আছেই। ফলে প্রতিটি ধাপের স্টাফদের ভরন পোষণ তো ঐ পন্যের মুল্য থেকেই আসে। ভোক্তা যখন পন্যটি হাতে পান তখন কৃষকের উদপাদন মুল্য কিংবা তার দ্বারা বিক্রিত মুল্যের অনেক বেশি পরিশোধ করতে হয় ভোক্তাকে। আমের বাগান থেকে শুরু করে কসমেটিক্স সব কিছুতেই এখন কর্পোরেট ফর্মুলা চালু রয়েছে। কোনো সরকারপ্রধান ইচ্ছে করলেও এই পুরু সিন্ডিকেটটিকে চাপের মধ্যে রাখতে পারছেন না। দামও কমাতে পারছেন না। 

কিন্তু আইটির জগতে এই কাজটি একেবারে সহজভাবেই সমাধান হচ্ছে বলে আমার ধারনা। আর এই আইটি এই সিন্ডিকেটটিকে হাত কড়া পড়িয়ে তাদের একচ্ছত্র মনোপলি ব্যবসা থেকে বের করে দিতে পারছে বলে আমার ধারনা। যদিও ব্যাপারটা ঘটছে খুব ধিরে ধিরে কিন্তু প্রতিনিয়তই ঘটছে। এক সময় এটাই হবে সিস্টেম।

বর্তমানে আইটির কারনে এই প্রোডাকসন ইউনিটের মালিকগন সরাসরি ভোক্তার সাথে যোগাযোগ করতে পারছেন যেটা এর আগে সম্ভব হচ্ছিলো না। মজার ব্যাপার হলো, যখনই প্রোডাকসন ইউনিটের মালিকগন সরাসরি ভোক্তার সাথে যোগাযোগ হয়, তখন প্রতিটি পন্যের মুল্য অবধারিত ভাবে কমে যায়। সেটা কিভাবে, আমি আরো সাধারন উদাহরন দিয়ে ব্যাপারটা বলি।

একটা সময় ছিলো(ছিলো বলছি কেনো, এখনো আছে),  আমাদের সমাজে ট্যাক্সি ক্যাব চালানোর জন্য অনেক অনেক এজেন্ট নিয়োগ থাকতো যারা মানুষের ব্যবহারের জন্য ট্যাক্সি ক্যাবের ব্যবসা করতো। ভোক্তা একটি গাড়ী ভাড়া করবেন, তো প্রথমে ট্যাক্সি ক্যাবের এজেন্টের কাছে তাদের ডিম্যান্ড প্লেস করবেন। এজেন্ট কিছু গাড়িওয়ালাদেরকে একত্রি করে একটা এসোসিয়েসন করবেন, সেই এসোসিয়েসনের লোকেরা আবার তাদের দ্বারা নিয়োজিত কিছু কর্মচারী নিয়োগ দেবেন ইত্যাদি। ফলে যার ট্যাক্সি, তিনি যা পাবেন, তার থেকে আরো বেশি হয়তো পাবেন এই মধ্যসত্ত্ব দালা বাহিনি বা এজেন্টগন। কিন্তু পরিশেষে কিন্তু এই সার্ভিসের পুরু মুল্যটা জোগান দিচ্ছে ভোক্তা নিজে। কিন্তু এই আইটির যুগে এসে “ঊবার” একেবারে অনলাইনে এইসব ট্যাক্সি ক্যাবের কন্সেপ্ট বা ব্যবসায় নিদারুন ধশ নামিয়ে দিলো। উবার হচ্ছে আইটির বদৌলতে একটি অন লাইন ট্রান্সপোর্ট সরবরাহকারী সিস্টেম। উবারের মালিক নিজেও জানেন না কে বা কারা এই সব গাড়ির মালিক। কিন্তু তারা এক্তি সিস্টেম। পুরুটাই অনলাইন ভিত্তক। যারা উবার সম্পর্কে জানেন, তারা আজকাল আর কোন ট্যাক্সি ক্যাবের জন্য কোন ভোক্তা এজেন্ট খোজ করার চেষ্টা করছেন না। শুধু ঊবারের নাম্বারটা থাকলেই হলো। গাড়ীওয়ালা আর ব্যবহারকারী সরাসরি যোগাযোগ। মাঝখানে অনেক এজেন্ট না থাকায়, অনেক স্টাফ নিয়োজিত না থাকায় শুধুমাত্র ঊবার এর তৈরী একটা আইটি ভিত্তিক সিস্টেমের কারনে ভোক্তা সল্প একটা পারসেন্টেজ উবারকে দিয়ে অনেক সহজে এবং তাড়াতারি আগের থেকে অনেক কমমুল্যে গাড়ির প্রয়োজনীয়তা মিটিয়ে ফেলতে পারছেন। তাহলে এতো ঘটা করে শতশত স্টাফ নিয়োগ করে ট্যাক্সি ক্যাবের এজেন্টগুলি ব্যবসা চালাবে কেনো? ফলে বিলুপ্ত হয়ে গেছে ওইসব ট্যাক্সি ক্যাবের ব্যবসা। উবারের কারনে আজকাল সবাই যারা ট্যাক্সি চালান, সবাই ট্যাকিক্যব এজেন্ট।

আরো একটা উদাহরন দেই, আজকাল অনলাইন মার্কেটিং চালু হওয়াতে অনেক মানুষ আর দোকানে গিয়ে পিজা হাটের পিজাই হোক আর ঈদের জামাকাপর, কোরবানীর গরু মহিষ, কিংবা ব্রান্ডের গাড়ি, অথবা নিত্য নৈমিত্তিক বাজার সদাইও কিনতে যান না। অনলাইনে অর্ডার দিচ্ছেন, দোকানদার গুটি কতক নিম্নবেতনের কর্মচারী দ্বারা তা ক্রেতার বাড়িতে বাড়িতে পৌঁছে দিচ্ছেন। এতে যেমন সময় বাচে, পরিশ্রম বাঁচে, বাঁচে মাঝখানের দালালীর খরচ। এতে দুই পক্ষেরই লাভ। আর লাভ বেশি ব্যবহারকারীর।

এখানে আরো একটা মজার ব্যাপার ঘটছে অহরহ। আগে মানুষের চাহিদা ছিলো এক রকম। এখন চাহিদা অন্যরকম। গাড়ীটা পুরানো হয়ে গেছে? তো নতুন মডেলের আরেকটা গাড়ি কিনার শখ। একটা জামা ছয় মাস পড়েছেন? তো আরেকটি জামা না হলেই নয়। ফলে কোয়ালিটির পাশাপাশি পরিবর্তনের চাহিদাটাও বেড়েছে। একটি পন্য বেশীদিন ভোক্তা ব্যবহারও করতে চান না। তিনি চান নতুনত্ব। তাই ভোক্তা চান, কমমুল্যে ভালো একটা পন্য। আগে একটি পন্যের দাম নির্ধারণ হতো এর প্রোডাকশন খরচের সাথে মালিকের কিছু লাভের পারসেন্টেজের যোগে। এইসব সিন্ডিকেট, কর্পোরেট সিস্টেমের কারনে প্রতিটি ধাপেই লাভ এবং খরচ যোগ হয়, ফলে কয়েক দফায় যেমন খরচ বাড়ে, তেমনি কয়েক দফায় লাভের হারও বাড়ে। ফলে বর্তমানে এই প্রক্রিয়ায় প্রোডাকসন খরচের উপর লভ্যাংশ ধরে এবং মধ্যসত্ত্ব দালাল, কর্পোরেট সিস্টেম ইত্যাদির বাড়তি খরচ যোগান দিতে গিয়ে কোনো পন্যের মুল্য নির্ধারণ অনেকাংশে খুব সহজ মনে হচ্ছে না বরং রিস্কের মধ্যে পড়ে যাচ্ছে। ফলে, বর্তমানে সরবরাহকারীগনও ক্রেতার পন্য ক্রয়ের ক্রয়ক্ষমতা এবং চাহিদার উপর মুল্য নির্ধারণ করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু কিভাবে? একদিকে কর্পোরেট সিস্টেমে দাম কমানো যাচ্ছে না তাদের ওভারহেড খরচ বেড়ে যাওয়াতে, আবার অন্যদিকে কোথাও কোথাও ভোক্তা এবং ক্রেতা সরাসরি সমন্নয় হবার কারনে একই পন্যের মুল্যে বেশ তারতম্য দেখা দিচ্ছে। যেখানে পন্যের মুল্য কম, ভোক্তা সেখানেই ঝোঁকে যাচ্ছেন। দেখা যাচ্ছে, যে পন্যটি বাংলাদেশের এক দোকানদার ভারত থেকে কিনে এনে এদেশের ভোক্তার কাছে পৌঁছে দেন, তখন তার মুল্য বেড়ে দাড়ায় প্রায় তিন থেকে চার গুন। ভোক্তা যখন তার হিসাব কিতাব করে দেখেন যে, যদি ভোক্তা নিজেই ভারতে গিয়ে পন্যটি কিনেন তাহলে তার যাতায়ত ভাড়া, থাকা খাওয়ার সব খরচ বাদ দিয়েও লাভে থাকেন। তাহলে কেনো ভোক্তা এদেশে বসে এদেশের বিক্রেতার কাছ থেকে বেশি দামে পন্যটি কিনবেন? তিনি নিজেই পাড়ি দিবেন ভারতে। অথবা এই আইটির বদৌলতে যদি তথ্যটি ভোক্তা পান এবং অনলাইনে পন্যটি হাতে পাবার সুযোগ পান, তাহলে তো আর শারীরিক কষ্টও করতে হবে না। সরাসরি নিজের ঘরে পৌঁছে যাবে তার পন্যটি। যার ফলে দেখা যাবে, বাংলাদেশের বিক্রেতা তার পন্যের মুল্য আগের তুলনায় কমাতে বাধ্য হবেন। কিন্তু কিভাবে কমাবেন? বিক্রেতা দাম কমানোর জন্যে মাঝখানের যেসব স্টাফ, দালাল, কিংবা ওই যে এক্সপার্ট লোকবলের ব্যয়ভার, সেখানে তিনি হাত দিবেন। আর যখনই ওখানে হাত দিবেন, সরাসরি কিছু ইন্টারমিডিয়ারী লোকবল, স্টাফের চাকুরী যাবে। তিনি পর্যায়ক্রমে ধাপ কমিয়ে দিবেন। দুইটা অফিসের জায়গায় যদি একটা অফিস দিয়েই ব্যবসা কিংবা অফিস চালানো যায়, কিংবা দশজনের জায়গায় যদি পাঁচজন দিয়ে কাজ চালানো যায়, কিংবা জোনাল অফিস, এরিয়া অফিস ইত্যাদি বাদ দিয়েও যদি খরচ কমানো যায়, তিনি তাই করবেন। কারন পন্যের দাম কমাতেই হবে। তাহলে এখানে প্রশ্ন আসে, এইসব ইন্টারমিডিয়ারী লোকবল ছাটাইয়ের কিংবা সেটআপ কমানোর ফলে শতভাগ কাজ চলবে কিভাবে? তাহলে কি এক্সপার্টদের আর প্রয়োজন নাই? না, এক্সপার্টদের প্রয়োজন অবশ্যই আছে। এর বিকল্প হিসাবে হয়ত দেখা যাবে একজন অতি গুরুত্তপূর্ণ এক্সপার্ট দিয়েই অনেকগুলি কর্পোরেট অফিস চলবে। অথবা হয়তো এই এক্সপার্ট লোকজন ফ্রি ল্যান্স হিসাবে কাজ করবেন সাব কন্ট্রাক্ট হিসাবে অনেক গুলি লোকের জন্য এক সাথে। আর এদের সংখ্যা খুব বেশি হবে না। ফলে বর্তমানে নিয়োগকৃত নিজস্ব এক্সপার্টের আর প্রয়োজন রাখার যুক্তিযুক্ত মনে করবেন না কর্পোরেট অফিসগুলি।

এখানে আরো একটা উদাহরন দেই ব্যাপারটা সহজ করে বুঝানর জন্য।

একটা সময় হয়ত খুব বেশি দেরী নাই যখন মানুষজন আর মোবাইল ফোনের কোম্পানী গুলিকেও টাকা দিয়ে মোবাইল ফোন ব্যবহার করবেন না। কারন যে হারে ভাইবার, হোয়াটস আপ, স্কাইপ কিংবা অন্যান্য সোস্যাল মিডিয়া চালু হয়েছে এবং হচ্ছে সারা বিশ্বব্যাপি, তাতে আর মোবাইল ফোন অনেক ক্ষেত্রেই প্রয়োজন পড়বে না। যে কাজটি আমি ভাইবার দিয়ে, স্কাইপ দিয়ে, কিংবা ফেসবুকের সিস্টেম দিয়ে অথবা হোয়াটস আপ দিয়ে সমাধা করতে পারছি, কেনো আমি অযথা মোবাইল ফোনে টাকা খরচ করে সেই একই কাজটি করবো? কে তখন আর ইন্টারনেট কিনবেন, কিংবা মোবাইল ব্যালান্স কিনবেন, যেখানে একটা এমএমএস দিয়েই ভাইবার কিংবা হোয়াটস আপ কিংবা স্কাইপ দিয়ে সেই একই কাজটি করতে পারে! আপাতদৃষ্টিতে কিন্তু এর প্রভাব ইতিমধ্যে মোবাইল কোম্পানিগুলিতে পড়তে শুরু করেছে। একটার পর একটা মোবাইল কোম্পানি তাদের ব্যবসা বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছেন, অথবা কয়েকটি মোবাইল কোম্পানি মিলে একসাথে মিলিত হয়ে, যুগ্ম এক্সপার্ট নিয়োগ করে তাদের ব্যবসায় অনেক স্তরের কর্মচারী ছাটাই করছেন বা গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের ব্যবস্থা করে লোকবল কমিয়ে দিচ্ছেন। ব্যাপারটা এমন দাঁড়াবে যে, গ্রামীনফোনের এক্সপার্ট দিয়েই কম্বাইন্ডলি রবি মোবাইল চলবে, কিংবা একজন এক্সপার্টই দুই কোম্পানীর জন্য ফ্রিল্যান্সার হিসাবে কাজ করবেন। তখন আর ইন্টারমিডিয়ারী স্টাফ, ইঞ্জিনিয়ার, এডমিন কিংবা সিস্টেম ম্যানেজারের কোনো পদও থাকবে না। ফলে কর্পোরেট ইউনিটের মাঝখানের অধিকাংশ ইন্টেলেকচুয়ালস, বা এক্সপার্ট বর্গবৃন্দের সংখ্যাটা অনেক অংশে হ্রাস পাবে। কস্টিং মুল্য অনেক কমে যাবে। আজ যারা এসি রুমে বসে বুয়েট পাশ করে, কিংবা বিদেশী ডিগ্রী নিয়ে সাহেব হয়ে নামীদামী অফিসগুলোতে টাই পড়ে হাতের ইশারায় কিংবা নাক উচু করে পায়ের উপর পা তুলে কাজ করছেন, তখন ছাটাই করা এইসব লোকগুলি কোথায় যাবে? তারা তো আর কৃষকের মতো হাটে ঘাটে, এসি বিহীন রুমে কাজ করতে অভ্যস্থ নন। কিংবা তিনি যেই বিষয়ে ডিগ্রী নিয়েছেন, তার বাইরে তো আর কোন কাজও শিখেন নাই!! তাহলে তাদের গন্তব্য কি? আসলে, তাদেরকেও কোনো না কোন প্রক্রিয়ায় একটা সময় কোনো না কোনো প্রোডাক্টিভ ইউনিট খুজে বের করতে হবে যেখানে ওইসব ঘর্মাক্ত গন্ধের মানুষগুলির সমপর্যায়ে এসে দাড়া করাবে তাদের এবং এদেরকে প্রোডাকসন ইউনিটের সেইসব করমচারীর মর্যাদায় নামিয়ে দেবে যারা টাই পড়ে কাজ করেন না অথবা সকাল আত তায় অফিসে আসেন ঠিকই কিন্তু কখন বাসায় যাবেন তার সঠিক সময় তারা জানেন না। কারন ওটা প্রোডাকশন ইউনিট।   

এই ব্যাপারটা সর্বত্র ঘটবে। ঘটবে কৃষি খাতে, ঘটবে শিল্প খাতে, ঘটবে সব জায়গায়।

এইভাবে আস্তে আস্তে মানুষের বিদেশ ভ্রমনও কমে যাবে। এয়ারলাইন্সের ব্যবসায়ও অনেক প্রভাব পড়বে। যেমন ধরুন, যেই কাজটা করার জন্য আমাকে ব্যংকক, সিঙ্গাপুর যেতে হতো, সেটা আর না করে তথ্য আদান প্রদান, ফাইল চালাচালি, তার উপরেই সিদ্ধান্ত গ্রহন অনেক দ্রুত এবং সহজ হয়ে যাবে। তাহলে লাখ লাখ টাকা ব্যয় করে কেনো এয়ারলাইন্সের অফিসে লাইন দিয়ে লোকজন টিকেটের ধান্দায় দাঁড়িয়ে থাকবে? এরমানে এই নয় যে, সবকিছুই বন্ধ হয়ে যাবে। আমি বলতে চাচ্ছি যে, সিস্টেম পালটে যাবে। মধ্যসত্ত্ব স্তরের কর্মীবাহিনী অনেক অংশে হ্রাস পাবে। সবই থাকবে কিন্তু তখন সবাই হয় ভোক্তা আর না হয় সরবরাহকারী। আর এইসব সম্ভব হবে শুধুমাত্র ডিজিটাল যুগের যখন একচ্ছত্র লিডারশীপ চলবে। তখন কৃষক তার ধানবিক্রির  জন্য আর মাঝখানের দালালদের সাহাজ্যের প্রয়োজন মনে করবে না সিন্ডিকেট থাকবে না, ইন্তারমিডিয়ারী লোকবলও থাকবে না। সে নিজেই মালিক, নিজেই জি এম, নিজেই কমার্শিয়াল, নিজেই মার্কেটিং অফিসার এবং তার সাথে কিছু হেল্পিং হ্যান্ডস। এতে যেমন উৎপাদনকারী তার ন্যাজ্য মুল্য পাবেন, আবার ভোক্তাও পন্যটি অনেক কমদামে ভোগ করতে পারবেন। আর ঠিক এটার মাধ্যমেই কস্টিং কমিয়ে ফেলা সম্ভব হবে। এতে করে কি হবে সেই সব কর্পোরেট অফিশিয়ালদের? কি হবে জব মার্কেটের?

কর্পোরেট অফিসগুলি এখন যেসব এক্সপার্ট ইন্টেলেকচুয়ালগুলি নিজস্ব অর্থায়নে লালন পালন করছেন, সেইসব ইন্টেলেকচুয়াল গুলির সাপোর্ট নেবার জন্য কর্পোরেট পলিসি করবেন। হয়ত দেখা যাবে কয়েকটা কোম্পানি মিলে একটি বিসেস এজেন্টের কাছ থেকে সাবকন্ট্রাক্ট বেসিস সাপোর্ট নেবেন। থার্ড পার্টি সোরসিং হবে বেশি বেশি। হাইলি কোয়ালিফাইড ব্যক্তি না হলে আজকাল কর্পোরেট অফিসগুলুতে যেসব এক্সপার্ট চাকুরি করছে তারা চাকুরী হারাবেন। আর এই চাকুরী হারানো ব্যক্তিগুলি তখন কি করবেন? তারা শেষমেস কোনো না কোনো প্রোডাক্টিভ ইউনিটেই কাজ নিতে বাধ্য থাকবেন যেখানে আজকের পরিবেশ আর পাওয়া যাবে না। হোক সেটা কোন মুজার কারখান, বা হোক সেটা কোন রুমালের কারখানা, কিংবা হক সেটা কোনো আম বাগানের আমের ফলনের ব্যবসা। যার ফলে এখন এইসব স্টাফদের উচিত শুধুমাত্র কর্পোরেট অফিসে এক্সপার্ট হিসাবে নিজেকে নিরাপদ মনে না করে বর্তমান কাজের পাশাপাশি এমন কিছু স্কিল তৈরী করা যাতে টাই না পড়ে একেবারে লেবার শ্রেনিতে গিয়ে কাজ করার ক্ষমতা রাখা। সবাইকে শ্রমিক হতে হবে। হাইলি কোয়ালিফাইড এবং সবচেয়ে ভালো র‍্যাংকে না থাকতে পারলে কেহই কাউকে কর্মসংস্থানে আপ্যায়ন করবেনা। তখন একমাত্র ভরসা শ্রমিক হিসাবে কাজ করার মানসিকতা। এই পর্বটি ঠিক এখনি বুঝা যাবেনা। হয়ত এটা ২০২০ সালের মধ্যে ঘটবেই। জব মার্কেট বলে কিছু আর থাকবে কিনা আমার সন্দেহ আছে। আর যারা জবে থাকবেন, তারা হচ্ছেন এতোটাই কোয়ালিফাইড যে, তাদের ছাড়া এই তথ্যলাইনের কাজও হয়তো হবে না। আর তারা হচ্ছেন ভোক্তা এবং সরবরাহকারীগনের সমন্বয়ক এবং সিস্টেম চালু রাখার একমাত্র বাহক। তাদের লাগবেই। ওটা জব নয়, ওরা সিস্টেম।

একটা সময় হয়ত আসবে যে, পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিগ্রীধারী একজন মানুষ হয়ত নিজেই একটা গাড়ি কিনে ট্যাক্সি ক্যাবে চালকের ভুমিকায় আছেন, অথবা বুয়েট থেকে পাশ করে হয়ত দেখা যাবে তিনি তার ক্ষুদ্র কোনো একটি প্রোডাক্টিভ ইউনিট চালাচ্ছেন।

ওইসময় যা ঘটবেঃ

(১)  ডিজিটাল যুগে প্রোডাক্টিভ ইউনিটগুলির মালিকগন হোক সেটা ধান চাষ করার কৃষক, অথবা অতি বড় মাপের কোনো গারমেন্টস ব্যবসায়ীই, তারা মার্কেটিং এ একই কাতারে চলে আসবেন। কোনো দ্বিতীয় মাধ্যম কাজ করবে না।

(২)   ভোক্তা এবং সরবরাহকারী সরাসসি যোগাযোগের কারনে দালালবাহিনী বিলুপ্ত হবে। পন্যের দামও কমে  আসবে।

(৩)   আইটির কারনে অনেক কিছুর বিলুপ্ত হবে যেমন বিলুপ্ত হয়ে গেছে ডিভি, ফ্লপি, সিডি, ক্যাসেটপ্লেয়ার, ক্যামেরা, ইত্যাদি পন্য। আজকাল রেডিও একটা ইতিহাস, আজকাল হাতের ঘড়িও হয়ে যাচ্ছে ইতিহাসের মতো।    লাইব্রেরী হয়ে যাচ্ছে কম্পিউটার।

   

(৪)  ইনফরমেসন একেবারে হাতের মুঠোয় সবসময় মজুত থাকায় মার্কেটিং কন্সেপ্ট আর লোকাল এলাকা ব্যপ্তি না  হয়ে গ্লোবাল এরিয়াতে চলে যাবে। তখন চাঁদপুরের এক কৃষক নাইজেরিয়ার আরেক ধান আমদানী ব্যবসায়ির কাছে সরাসরি তার পন্য বিক্রিতে জড়িয়ে পড়বেন।

(৫)   মধ্যসত্ত্বভোগী এজেন্ট বা দালাল কিংবা কর্পোরেট অফিসের বর্তমান কন্সেপ্ট পুরুপুরি বদলিয়ে আরেক ধাপে উন্নিত হবে। তখন যারা থাকবে তারা সবাই মালিকপক্ষের লোক আর তাদের সাহাজ্য করবে  একদল থার্ড পার্টি।

(৬) বেকার লোকের সংখ্যা সাময়িক সময়ের জন্য বেড়ে যাবে বটে কিন্তু অচিরেই লোকজন এই সিস্টেমের সহিত   খাপ খাওয়ানোর জন্য সবাই প্রোডাক্টিভ কন্সেপ্টে এডজাস্ট করবে। যারা এখনি শুরু করেছেন,  তারা অনেক দূর এগিয়ে যাবেন, আর যারা শুরু করেন নাই বা ভাবছেন না, তারা অনেক চড়াই উতরাই দিয়ে পার হবেন।

(৭)  ব্যাংকিং সেক্টরে অভুত পরিবর্তন আসবে। সেটা কিভাবে? সেটা হচ্ছে কারেন্সি কন্সেপ্ট। এই কারেন্সি কনসেপ্টে কারেন্সির পরিবরতে পন্য হয়ে উঠবে প্রধান আদান প্রদানের মাধ্যম। এক দেশের তেল দরকার, আরেক দেশের ধান দরকার। জাস্ট বিনিময় হয়ে যেতে পারে পন্যটি। মাঝখানে শুধু পন্য বিনিময়ের মুজুরীটুকু থাকতে পারে।

(৮)  নারী পুরুসের ভেদাভেদে অনেক পার্থক্য কমে আসবে। কারন এখন যেমন ব্যবসা কিংবা এই জাতীয় কোন  সেক্টরে পুরুষের আধিপত্য বেশি কারন সর্বত্র কোথাও না কোথাও নারীদের জন্য সবকিছু সহজ  মনে হয় না। কিন্তু তখন এই কঠিন পরিবেশটি নারীদের জন্য সহজ হয়ে আসবে। 

তাহলে কি করা উচিত?

(১)  প্রতিটি মানুষের উচিত এখন জাপানের মতো প্রোডাক্টিভ ইউনিটে কাজ করা যায় সেই মোতাবেক শিক্ষা ব্যবস্থায় দেশের আইন তৈরী করা।

২)  দেশ করুক বা না করুক, প্রতিটি পরিবারের উচিত তার সদস্যদেরকে এমন কিছু কিছু সেক্টরে প্রশিক্ষন দেওয়া যাতে ভবিস্যতে শুধু করপরেট সংস্থায় কাজ করার জন্য তৈরী না করে নিজেরা নিজেরা কিছু   কিছু প্রোডাক্টিভ ইউনিটের ব্যবস্থা করা অথবা প্রোডাক্টিভ ইউনিটে কাজ করতে পারে সেই দৃষ্টিভঙ্গিতে নিজেদের সদস্যদের তৈরী  করা।

(৩) একের অধিক লাইনে এবং পুরুপুরি ভিন্ন প্রকৃতির কাজের জন্য নিজেকে তৈরী করা। আজ কর্পোরেটে আছে, আগামিকাল শ্রমিক হতে তাতে কোনো বাধা থাকবে না এবং সেটা করতে পারার সক্ষমতা।

(৪)   বর্তমানের কর্পোরেট অফিস গুলোর দিকে চাকুরীর জন্য না তাকিয়ে নিজেরা কিছু করা।

 সত্যি সত্যি জব মার্কেট ছোট হয়ে আসছে। এর পরিবর্তন বুঝা যাবে আগামি কয়েক বছরের মধ্যেই।