২৭/১২/২০১৯-অরু ডায়েরী-১

Categories

যেদিন সেই প্রথম অরু আমার অফিসে এসেছিলো, তখন অরু সবেমাত্র ইন্টার পাশ করেছে। সনটা ছিলো ২০১৬। আমি অরুকে সম্ভবত একবার দেখেছিলাম আমাদের গ্রামে। আমার ভালো করে মনেও নাই ওর চেহাড়া। কিন্তু যেদিন ও আমার অফিসে এলো, দেখলাম বেশ চটপট করে কথা বলে, গুছিয়ে কথা বলে। বুঝা যায় না যে, অরু গ্রামের এমন একটা অসচ্ছল পরিবেশ থেকে এসেছে। দূর থেকে ছবিতে গ্রাম যত ভাল লাগুক, আর যতো সবুজ শ্যামলাই মনে হোক, এই সুবুজ শ্যামলা বড় ছোট হরেক রকম ফল মুলাদির ফাক ফোকর দিয়েও অনেক সুন্দর সুন্দর জংলী ফুল অনেক অবহেলায় কখন যে বেড়ে উঠে তার যেমন কেউ হিসাব রাখে না, ঠিক তেমনি অরূকে দেখেও আমার মনে হইলো, এমনি একটি শিশির ভেজা অজানা ফুল বাতাসে হেলে দুলে বেচে আছে। সেই ফুলটি এখন আমার সামনেই যেনো কোনো এক শহরের ড্রয়িং রুমের মধ্যে সাজানো একটি গন্ধবিহিন ফুল। অথচ তার গন্ধ আছে মিষ্টি, চেখে দেখার মানুষ নাই।

অফিসে সারাক্ষনই কাজ থাকে, নিবিড় ভাবে এককালীন একটা অখন্ড সময় দিতে পারছিলাম না। অরু কালো একটা বোরকা পড়ে আপাদ মস্তক ঢেকেই সে আমার অফিসে এসেছিল। লম্বা একটি মেয়ে, ছিমছাম দেহ, গ্রামের বালিকাদের মতো একেবারে ওই রকম না। খাওয়ার সময় হয়ে গিয়েছিলো, তাই অরুকে নিয়ে আমার টেবিলে একসাথে দুপুরের খাওয়াটা সেরে নিলাম। প্রকৃত পক্ষে এই খাবারের সময়টাতেই আমি অরুকে বেশ একটা সময় দিতে পারলাম। অরু আমার ছোটবেলার বন্ধুর মেয়ে।

জিজ্ঞেস করলাম, কি কারনে সে আমার কাছে এসেছে। খুব আমতা আমতা করে আমার দিকে ভয়ে ভয়ে চোখ নিয়ে অরু বল্লো, কাকা, আপনার কি আমার কথা কিছু মনে আছে?

বললাম, খুব একতা বেশি মনে পড়ে না। কিন্তু এমন কিছু কি আছে যে মনে করার মতো?

অরু বল্লো, আজ থেকে প্রায় ৪ বছর আগে আমার বাবা আপনার কাছে এসেছিলো আমার বিয়ের ব্যাপারে পরামর্শ নিতে। আপনি বাবাকে আমার বিয়ে দিতে না করেছিলেন। আবার আমারো বিয়ে করার কোনো ইচ্ছে ছিলো না। আমি সবে মাত্র ক্লাশ নাইনে উঠেছি। আমার পরার খুব শখ ছিলো। বাবা আপনাকে অনেক সম্মান করেন আর সমীহ করেন। আপনার কথাটা বাবা রেখেছিলো। কিন্তু মাঝে মাঝেই যে আবার এই ভুতটা নড়েচরে উঠতো না তা নয় কিন্তু আমি বারবার আমার বিয়েটা এড়িয়ে যেতে সক্ষম হয়েছি। আমি এবার ইন্টার পাশ করেছি, ইউনিভার্সিটিতে পরার খুব শখ।

কথাগুলি শুনে আমার খুব ভালো লাগলো যে, গ্রামের একটি মেয়ে তার পরাশুনাটা চালানোর জন্য কত আপ্রান চেষতা করছে। আমি অরুকে বললাম, অরু তুমি যতো পড়তে চাও, পড়ো, দরকার হয় আমি তোমাকে সাহাজ্য করবো।

খুব খুশী হলো অরু।

কিন্তু আমি অরুকে এই সাহাজ্যের জন্য একটা শর্ত আরোপ করে দিলাম। আর সেই শর্তটা ছিলো, তাকে যে করেই হোক অর্থনীতির মতো একতা বিষয় নিয়ে পড়তে হবে।

(চলবে)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *