২৮/০৩/২০২০-করোনা ভাইরাস-২

Categories

করোনা ভাইরাস প্রথম ধরা পড়ে চীনের উহান শহরে। তারা জানতো এই ভাইরাসের তীব্রত এবং ক্ষতিকারক দিকগুলি। ফলে, কর্তৃপক্ষ ব্যাপারটাকে বিশ্বসমাজে ধামাচাপা দেওয়ার নিমিত্তে উহানকে আইসোলেট করে তারা নিজস্ব সোর্স এবং দেশ বিদেশ থেকে বিভিন্ন সময়ে নামে বেনামে এর প্রতিষেধক ক্রয় করে সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছিলো। কিন্তু একটা সময়ে সেটা আর চাপা দেওয়ার সম্ভব না হওয়ায় ভাইরাসটির ব্যাপারে তারা প্রকাশ করতে যেমন বাধ্য হয়, তেমনি তাদের গাফিলতির কারনে ইতিমধ্যে করোনা ভাইরাসটি বিভিন্ন দেশে সংক্রমনের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এটা যেমন চীনের করা ঠিক হয় নাই তেমনি এই করোনার তীব্রতা নিয়েও বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধান এবং জনগনও প্রাথমিকভাবে বেশী গুরুত্ত না দেওয়ায় ব্যাপারটা এখন বৈশ্বিক মহামারিতে পরিনত হয়েছে যেখানে প্রতিনিয়ত মানুষ মারা যাচ্ছে আবার নতুনভাবে করোনা ভাইরাস ছড়িয়েও পড়ছে। সারাবিশ্ব এখন ঘরবন্দি। কিন্তু ঘরবন্দিই এর সমাধান নয়। এর প্রধান কারন ১৪/১৫ দিন ঘরে বন্দি হয়ে হয়তো যারা আক্রান্ত হন নাই বা হয়েছেন তাদের উপসর্গটা বুঝা যাবে কিন্তু যিনি ১৪ তম দিনে আক্রান্ত হবেন, তাকে তো আবারো ১৪/১৫ দিন বন্দি থাকতে হবে। তাহলে এভাবে কি চলতেই থাকবে কোয়ারেইন্টাইন? কিন্তু কতদিন? কত মাস বা কত বছর? একজন আক্রান্ত ব্যক্তিই পারে আরো নতুন মানুষকে আক্রান্ত করতে, ফলে ঘরবন্দি এর সমাধান নয়। এর সমাধান হতে হবে প্রতিটি মানুষ করোনা আক্রান্ত কিনা তার টেষ্ট করা। এটা সহজ কাজ নয়। জার্মানি, ইতালী, চীন, আমেরিকা, স্পেন প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৪০ হাজার মানুষকে পরীক্ষা করছে। যেখানে আমরা সম্ভবত এ পর্যন্ত আইইডিসিআর এর মাধ্যমে ১০৬৮ জনকে টেস্ট করতে পেরেছি। তাতে যদি চলতি মার্চ মাস পুরোটা ধরা হয়। তাহলে ২৮ দিনে,এ পর্যন্ত গড়ে ২৪ ঘন্টায় ৩৮ জনকে টেস্ট করা হয়েছে। কিন্তু করোনাতঙ্কে বিদেশ থেকে এসেছেন প্রায় ১০ লাখ প্রবাসী। সেই হিসাব দেখা যায় ২৪ ঘন্টায় ৪২ জনকে টেস্ট করলে ১০ লাখ মানুষকে পরীক্ষা করতে লাগবে ২৩,৪০৯ দিন অর্থাৎ ৬৫ বছর। এই কাজ করতে যদি এই এত বছর লেগে যায়, তাহলে কি সারা দেশ এত বছরই ঘরবন্দি হয়ে থাকবেন? এটা কিছুতেই সম্ভব না।

এরজন্য সত্যিকার অর্থে যা করনীয় তা হচ্ছে, সত্যি তথ্য জানা। সরকার, এবং ব্যক্তি পর্যায়ে প্রতিটি মানুষ একযোগে সত্য পরিবেশন করা এবং তার বিরুদ্ধে কার্যকরী ভুমিকা নেওয়া। আমাদের দেশে করোনা নাই, (যদিও টেষ্টের মাধ্যমে পরীক্ষিত নয় বক্তব্যটা) বা আর নতুন কোনো করোনা হয় নাই, এইসব কথা বলে আমরা আপাতত ক্রেডিট নিতে পারি কিন্তু লং রানে যা ঘটবে যে,

(১) সারা বিশ্ব যখন করোনা মুক্ত হয়ে যাবে, তখনো আমাদের দেশে পরীক্ষা না করার কারনে হয়তো বা কিছু কিছু মানুষের করোনার উপসর্গ ধরা দিতে পারে যা অন্যদেশ এইসব গুটিকতক মানুষের জন্য আমাদের বহির্গমন যাত্রা অনির্দিষ্ট কালের জন্য স্থগিত করে দিতে পারে। একটা কথা আমার মনে হয় যে, এখন থেকে সমস্ত এয়ারপোর্টে করোনার বিপরীতে স্বস্ব দেশের এয়ারপোর্ট করোনা আছে কিনা এই টেষ্ট করিয়েই কোনো যাত্রীকে তাদের দেশে প্রবেশের অনুমতি দিবে হয়ত। আর এটা যদি হয় নতুন কোনো শর্ত আরোপ, তাহলে, আমাদের দেশের যাত্রীদের মধ্যে যদি এই ধরনের কোনো সিম্পটম কোথাও পাওয়া যায়, সাথে সাথে এই তথ্য এক দেশ থেকে আরেক দেশে বিদ্যুৎ গতিতে ছড়িয়ে পড়তে পারে আর তখন যেটা হবে, সেটা হলো এই যে, লোক, যাত্রী, এমন কি মালামাল স্থানান্তরেও বাংলাদেশকে সমগ্র বিশ্ব কোয়ারেন্টাইন করে ফেলতে পারে।

(২) আরেকটা মারাত্মক ব্যাপার ঘটে যেতে পারে যে, সঠিক করোনা আক্রান্ত তথ্যের অভাবে প্রকৃতপক্ষে করোনায় মৃত্যুবরনকারীর করোনা হয় নাই এইটা বিশ্বাস করে তার কবর, তার গোসল, জানাজা ইত্যাদি পালনের কারনে দেশে নতুন নতুন করোনা আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বেড়ে গিয়ে শেষ অবধি না একটা মহামারীর রুপ নিয়ে নিতে পারে। তখন দেখা যাবে, বিশ্ব যেখানে প্রায় করোনা মুক্ত, আমরা সেখানে মহামারীতে আক্রান্ত।

(৩) এই অবস্থায় ঠিক যা যা ঘটছে, তা তা সব মিডিয়ার মাধ্যমে গুজব না ছড়িয়ে সঠিক তথ্যটা আমাদের সবাইকে জানানো দরকার এবং যত দ্রুত সম্ভব আক্রান্ত এলাকায় বা পরিবার বা যারা কোনো না কোন একটা উপসর্গে (হাচি, কাশি, জর, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদির যে কোনো একটা) মারা যাচ্ছেন, তাদের এবং তাদের সাথে মেলামেশা করেছেন এমন ব্যক্তি বর্গ/এলাকায় জরুরি টেষ্ট করিয়ে নিশ্চিত করা তিনি করোনায় মৃত্যুবরন করেছেন কি করেন নাই। এটাই এখন সমাধান। এ ব্যাপারে ফেসবুক থেকে প্রাপ্ত একটা তথ্য (আমি এর সত্যতা জানি না) শেয়ার করছি যে,

বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, টেস্ট না করার কারণে সঠিক সংখ্যা জানা যাচ্ছে না যে দেশে আসলে করোনা আক্রান্ত সংখ্যা কত। এদিকে জাতিসংঘের ফাঁস হওয়া একটি আন্তঃসংস্থা নথি মোতাবেক, করোনাভাইরাসের বিস্তার প্রশমন ও অবদমনে জরুরী পদক্ষেপ নেওয়া না হলে কভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হয়ে “৫ লাখ থেকে ২০ লাখ” মানুষের মৃত্যু হতে পারে। “জাতীয় প্রস্তুতি ও প্রতিক্রিয়া পরিকল্পনা” (সিপিআরপি ভি১) শীর্ষক এই নথিতে এই সংখ্যাকে “ভয়াবহ” বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। চলতি সপ্তাহে ঢাকায় বিদেশী কূটনীতিকদের এই নথিটি দেওয়া হয় বলে খবর প্রকাশ করেছে সুইডেন ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম নেত্র নিউজ। ২৬ মার্চের এই নথিতে বলা হয়, “বাংলাদেশে জনসংখ্যার ঘনত্ব অত্যধিক হওয়ায়, বৈশ্বিকভাবে প্রযোজ্য মডেলিং পদ্ধতি ও পরামিতি অনুমান অনুযায়ী, কভিড-১৯ রোগের প্রভাবের পূর্বাভাস হলো, মহামারী চক্রে ৫ লাখ থেকে ২০ লাখ মানুষের জীবনহানি ঘটবে। অন্যান্য দেশে ব্যবহৃত মডেলিংয়ের বিপরীতে চিন্তা করলে এই সংখ্যা ও মাত্রা খুব আশ্চর্য্যজনক কিছু নয়। কিন্তু এই সংখ্যা অত্যন্ত ভয়াবহ। এই সংখ্যাকে বিবেচনা করে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো উচিৎ।”

ধীরগতির টেস্টের কারণে পরিস্থিতি ভয়াবহতার দিকেও যেতে পারে। তখন শুধু লকডাউন দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে না।