ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের বক্তব্য শোনার জন্য কানাডা, আমেরিকা, ইউকে, পোল্যান্ড, ইজরায়েল, অষ্ট্রেলিয়া, জার্মান, ফ্রান্স ইত্যাদি পার্লামেন্টে বিশেষ অধিবেশন হয়েছে। সব এমপিগন, মিনিষ্টারগন স্ট্যান্ডিং ওভেশনে সম্মান দিয়ে একাত্ততা দেখিয়েছেন। এছাড়া জি-৭, জি-২০, স্কোয়াড, ব্রিক্সস, ব্রাসেলস মিটিং তো আছেই, তারপর ন্যাটোর পরপর অনেকবার মিটিং, ন্যাটো দেশসমুহের মধ্যে বারবার মিটিং/ বৈঠক, জাতিসংঘের বিশেষ অধিবেশনে বহুবার গুতেরিসের ভাষন, প্রেসিডেন্ট জেলেনেস্কীরও ভার্চুয়াল ভাষন, ইত্যাদি বহুবার সম্প্রচার করা হয়েছে। এ ছাড়া, বিভিন্ন সময়ে রাষ্ট্রপ্রধানদের বিশেষ বিশেষভাবে কয়েকজন একত্রে মিলিত হয়ে বৈঠক করেও বিভিন্ন প্রস্তাব করেছেন। রাশিয়ার একনায়কতন্ত্র স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে কয়েক হাজার নিষেধাজ্ঞাসহ রাশিয়ার কমার্শিয়াল, ইকোনোমিক্যাল নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে অন্যান্য দেশ সমুহকেও ন্যাটো এবং পশ্চিমারা বিভিন্ন দেশকে এমন এমন চাপের মধ্যে রেখেছে যে, হয় তাদেরকে ন্যাটো, ইইউ দেশসমুহ তথা পশ্চিমাদের কথা শুনতে হবে, অথবা তারাও তাঁদের নিষেধাজ্ঞায় পতীত হবেন এমন কথাও বলা হয়েছে। উপরন্তু, যেসব দেশকে আগেই এই পশ্চিমারা বিভিন্ন কারনে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছিলো, যেমন ইরান, ভেনিজুয়েলা ইত্যাদি তাদেরকে এখন আবার নিষেধাজ্ঞার বাইরে নিয়ে ওই সব দেশের তেল/ গ্যাস রপ্তানীর শর্তে যোগাযোগও করেছে। শুধু এখানেই শেষ নয়, হাজার হাজার মিলিয়ন, বিলিয়ন ডলারের সাহাজ্য, মাত্রাতিরিক্ত অস্ত্র সরবরাহ, এমনকি প্রানে মেরে ফেলার হুমকী দিতেও কোনো বাধা ছিলো না। একটা সুপার পাওয়ারের দেশের প্রেসিডেন্টকে আরেকটা সুপার পাওয়ারের দেশের প্রেসিডেন্ট তাঁর ক্ষমতা উতখাতের নিশ্চয়তা দিয়ে, রিজিম পরিবর্তনের হুমকীও দিয়েছে।
আমি মানি, রাশিয়া ইউক্রেনের মতো একটা স্বাধীন রাষ্ট্রকে এভাবে অতর্কিত হামলায় হাজার হাজার মানুষের ভোগান্তি কিংবা দেশ দখলের মতো কাজ করতে দেয়া উচিত না এবং তাঁর এই কাজকে কোনোদিনই সমর্থনযোগ্য নয়। সারা দুনিয়ার বিশেষ করে ন্যাটো, ইইউ, ব্রিক্স, পশ্চিমা দেশ, ফ্রান্স, জাপান, অষত্রেলিয়া, আমেরিকা, কানাডা, জার্মান কিংবা এসব দেশ যে মানবতা দেখাচ্ছে, তা ঠিকই আছে। আমিও তাঁদের এসব কর্মকে সমর্থন করি।
কিন্তু ঠিক তারপরের যেটা আমার জানতে ইচ্ছে করে-
তারা কি এসব শুধু ইহুদী, খ্রিশটিয়ান, হোয়াইটস এর জন্যই প্রজোজ্য নাকি সব মানুষের জন্য? তারা কি আফগানিস্থান, সিরিয়া, প্যালেষ্টাইন, ইয়েমেন, তালেবান, ইরাক, ইত্যাদি দেশগুলির মানবেতর মানুষগুলির জন্যেও এটা করতে পারতেন না? এতো এতো পার্লামেন্টারী সেসন না হোক, অন্তত কিছুটা আওয়াজ, কিছুটা সাহস, কিছুটা আশসাস? এখানে এই কথা আবার কেউ বলবেন না যে, অন্যান্যদের উপর অত্যাচারের কারনে ইউক্রেনের সাধারন মানুষের ভোগান্তি কেনো সমর্থন করা হবে? ঠিকই তো। সেটাও সমর্থন যোগ্য নয়। কিন্তু প্রশ্নটা ইউক্রেনের সাধারন মানুষের ব্যাপারে নয় শুধু, প্রশ্নটা সেই ভোগান্তিগুলির মানুশ গুলির জন্যেও। কিন্তু অইসব ভোগান্যি গুলির জন্য দায়ী কারা? কে বা কারা করেছে সেসব? কাদের দ্বারা সেই সব ভোগান্তিগুলি হয়েছে বা হচ্ছে? এখনো তো হচ্ছে? এই ন্যাটো, এই পশ্চিমারা, এই ইহুদীরা, এই খ্রিষ্টানরা, এই হোয়াইটসরাই তো বিমান থেকে অতর্কিত হামলা, হাজার হাজার মানুষের রিফুজি হবার কান্নার সিনারীও, ধর্ষন, লুটপাট, জীবননাশ করেছে। হয়তো ফ্রান্স করে নাই কিন্তু আমেরিকা করেছে, তখন ফ্রান্স চুপ ছিলো। হয়তো আমেরিকা করে নাই ইউকে করেছিলো, তখন আমেরিকা, ফ্রান্স উভয়েই চুপ ছিলো, হয়তো রাশিয়া করেছে কিন্তু টার্গেট মুসলমান ছিলো বলে আমেরিকা, ফ্রান্স, কানাডা, জার্মান সবাই চুপ ছিলো। তখন কি ওই সব সন্ত্রাসী ক্ষমতাধরদেরকে অন্তত কথা দিয়ে ধমক দিয়ে প্রতিহত করার নৈতিক দায়িত্ব রাখতে পারতো না? সেসব দেশের মানুষেরাও তো অতীব সাধারন জনগনই ছিলো। তাঁদের বেলায় এতো কাভারেজ, এতো মিটিং, এতো সোচ্চার কেনো করলো না আজকের দিনের নেতারা? তখন কি তারা ওয়ার্ল্ড লিডার হিসাবে এই ওয়ার্ল্ডে ছিলেন না? তারা যদি সমন্নিতভাবে আবার বলছি সমন্নিতভাবে এক জোটে সেই সব অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াতেন, তাহলে কি এই প্রিথিবিতে অন্য আরেক জুলুমবাজের তৈরী হতো?
এর মানেই এই, যারা আজ রাশিয়ার এই এগ্রেসিভ অন্যায়কে সমর্থন করে, তারা আসলে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে কথা বলছে না, কথা বলছে সেসব ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যারা ইউক্রেনের এই অবস্থায় মনে করছে যে, ইউক্রেনদের উপর আরেক জুলুমবাজ অন্যায় হচ্ছে বলে এতো ব্যাপক নরাচরা করছেন। এটা ডাবল স্ট্যান্ডার্ড বলেই ভাবা হচ্ছে। ১৪ গোষ্টি নিয়া একজনের বিরুদ্ধে লড়াই করাই যায়। ১৪ গোষ্টির শক্তি নিয়া পাশের বাড়ির বস্তির মফিজও মাস্তানী করতে পারে একজনের বিপক্ষে। ওয়ান টু ওয়ান করুক না? দেখা যাক কি হয়? সব শিয়ালেরে একসাথে করে হুক্কা হুয়া দেয়া মানে একা সাহসী নয়। এই যে ৩ হাজার ইহুদী ইজরায়েলে গেলো ইউক্রেন থেকে, তাদেরকে বাসস্থান দেয়ার জন্যে অকোপাইড গাজায় শুরু হয়েছে আরেক ধংশযজ্ঞ। কই কেউ তো এই মুহুর্তে সেটার ব্যাপারে সোচ্চার হচ্ছে না? মিডিয়া কাভারেজও নাই, কিন্তু ওইসব নীরিহ মানুষগুলি তো বাস্তচ্যুত হচ্ছে। তাঁদের ব্যাপারে কেউ তো কিছু বলছে না?
ন্যাচার যখন প্রতিশোধ নেয়া শুরু করে, তখন শুরু হয় খুব ছোট কিছু থেকে। তখন সব জুলুমবাজদের সাথে যারা চুপ ছিলো, তারাও সেই ন্যাচারাল প্রতিশধের আওতায় এসে যায়। হতে পারে, সেই প্রক্রিয়টা শুরু হয়ে গেছে আর এটা খুব দ্রুত গতিতে এগিয়ে আসছে বলে আমার ধারনা। এই মুহুর্তে যতোটা ক্লিন দেখা যায় পরিস্থিতি, সেটা হয়তো ততোটা ক্লীন নয়। যার যার সার্থে আঘাত লাগলে কিছুদিন পর বুঝা যাবে, কে কার বা কার কে।
গ্রামে যখন দুই মোড়ল মারামারি করে, সেই গ্রামেই কেউ কেউ খুব মুচকী মুচকি হাসে এইজন্য যে, অন্তত এক মোড়ল আরেক মোড়লেরে ঘুষি তো মারছে!! যে ঘুষিটা আসলে অই মুচকি মুচকি হাসা নীরিহ পাবলিক মারতে চাইতো কিন্তু কখনো পারে নাই। এই দুই মোড়লকে আসলে কেহই পছন্দ করে না। তারা গাড্ডায় পড়লে অধিকাংশ লোকই অন্তরে একটু শান্তি পায়। মজা হলো-দুই মোড়লের অধোপতন সবাইই চায়। ভালোবাসা বা ক্রতজ্ঞতা যতোটুকু কেউ দেখায় সেটা জাষ্ট না পাইরা।
এই আর কি।