অন্দরমহলের রাজনীতিতে সরকার এবং বিরোধী পক্ষ হিসাবে দেশের ভারসাম্য রক্ষায় যেমন আমরা একটা ছক কষি, তেমনি পুরু পৃথিবীতেও সম্ভাব্য শক্তিধর দেশগুলিকে আমরা একত্রিভুত করে এক্সিস এবং এলাইড ফোর্স হিসাবে ছক কষে পুরু প্রিথিবীকে আমরা দুটু ভাগে শাসনে লিপ্ত হই। এই এক্সিস এবং এলাইড ফোর্ষ গুলি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উপাদান হচ্ছে ইন্ডিভিজুয়াল দেশ সমুহ। এই ইন্ডিভিজুয়াল দেশ গুলি নিতান্তই তাদের ব্যক্তিগত সার্থের জন্য কখনো এক্সিস, কখনো এলাইড ফোর্সে জায়গা পরিবর্তন করে। আর ঠিক এ কারনে অতীত বিস্লেষন করলে দেখা যায়, পৃথিবী কখনো শাসন করেছে মোঘলরা, কখনো জার্মানী, কখনো ফ্রান্স, কখনো পশ্চিমারা। এই ক্ষমতাগুলির নাম যদি দেই, তাহলে এর নাম হতে পারে ‘করিডোরস অফ পাওয়ার”।
কিন্তু এই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দেশগুলির ব্যক্তিগত ক্ষমতা যদিও খুবই নগন্য কিন্তু করিডোর্স অফ পাওয়ারে তাদের সামষ্টিক ক্ষমতার যোগফল একটা বড় ধরনের ফ্যাক্টর। কোনো কোনো ক্ষুদ্র দেশ তাদের ভুল পদক্ষেপের জন্য করিডোরস অফ পাওয়াএর থাকতে চেয়ে বা তার থেকে বিচ্যুত হতে চেয়েও চিরতরে বিলীন হয়ে গেছে। কেউ আবার নতুন করে আরো কিছু অংশ নিয়ে পুনরোজ্জিবীত হয়ে উঠেছে। মাঝখানে কিছু অসহায় মানুষ এর ফল ভোগ করতে করতে তাদের নিজের বর্তমান আর অতীত সবই জলাঞ্জিত দিতে হছে। নিরপেক্ষতা যদিও একটা বিপদ্মুক্ত অবস্থান কিন্তু যুগে যুগে কিছু ভুল নেতার কারনে নিরপেক্ষ থাকতে চেয়েও ক্ষুদ্র দেশ গুলি কোনো না কোন আবেগে তাদের পক্ষ পরিবর্তন করে হয় এক্সিস না হয় এলাইড ফোর্সের করিডরসস অফ পাওয়ারে যোগ দিয়ে সর্বিশান্ত হয়ে গেছে।
ইউক্রেন, তেমন একটি রাষ্ট্র।
আমি এর আগেও বহু লেখায় শুধু এটাই বলতে চেয়েছিলাম যে, চাদের থেকে সূর্যের আকর্ষন ক্ষমতা অনেক বেশী হলেও এই পৃথিবীতে জোয়ার ভাটা হয় চাদের আকর্ষন ক্ষমতার কারনে। রাশিয়া ঠিক সেই রকম একটা চাদের মতো। ইউরোপ, পশ্চিমা কিংবা অন্যান্য শক্তিধর দেশ গুলির আকর্ষনের থেকে একেবারে উঠোনে বসে থাকা রাশিয়ার আকর্ষন ক্ষমতা অন্যান্যদের থেকে এতোটাই বেশী যে, ইউক্রেনের উচিত ছিলো না এলাইড ফোর্সের কোনো নতুন ফর্মুলায় পা দেয়া।
এই মুহুর্তের বাস্তবতায় দেখা যাচ্ছে, হাংগেরী পোল্যান্ড, রুমানিয়া যেনো ইউক্রেনের সীমানাকে পরিবর্তনের জন্য একেবারে উতপেতে বসে আছে। অন্যদিকে ক্রমাগত সাপ্লাই দিতে দিতে এলাইড ফোর্সের সক্তিগুলিও নিতান্ত ক্লান্ত হয়ে এবার ক্ষান্ত দিতে চাইছে। ইউরোপিয়ান প্রেসিডেন্ট বা উপদেষ্টারা এখন একে অপরের উপর না হলেও এক্সিস শক্তিগুলিকে দোষারুপ করছেন কেনো তারা রুলস বেজড অর্ডারের সাথে এক না হয়ে অন্য দিকে সাপোর্ট করছে। কিন্তুএটাই তো হবার কথা। যখন কেউ প্রতিবাদ করার শক্তি থাকে না কিন্তু মেনেও নিতে পারে না, তখন তারা চুপ থাকে বটে কিন্তু সুযোগের সন্ধানীতে যদি একবার প্রতিবাদ করার মতো পরিস্থিতি আসে, তখন তারা প্রয়োজনে বলয় পরিবর্তন করে কখনো এলাইড থেকে এক্সিসে, কখনো এক্সিস থেকে এলাইডে স্থান পরিবর্তন করেই ফেলে। আর এটাই হলো বিশ্বরাজনীতি। সুইডেন, ফিন ল্যান্ড ঠিক সেভাবেই নিরপেক্ষতা উপেক্ষা করে শেষ অবধি একটা বলয়ে ঢোকতে বাধ্য হয়েছে। ভাল কততা হবে বা খারাপ কততা সেটা বলবে ভবিষ্যত। তবে আমি এর আগেও বলেছি, এখনো বলছি- বহু দূরে বসবাস করা কোটিপতি দুসসম্পর্কের আত্মীয়ের চেয়ে পাশের বাসার লক্ষপতি প্রতিবেশির প্রয়োজন বেশি মানুষের। রাশিয়া তেমনি একটা লক্ষপতি প্রতিবেশি ইউরোপের জন্য।
সবকিছু পালটে যাচ্ছে-ইউরোপ কখনো নিজের উঠোনে যুদ্ধ দেখেনি, এবার তাদের উঠোনেই যুদ্ধের বিভীষিকা। মধ্যপ্রাচ্যে সব সময়ই যুদ্ধ চলছিলো এবার সেই যুদ্ধ অগ্রসর হয়ে বিভিন্ন অঞ্চলে দ্রুত সরে যাচ্ছে। দক্ষিন এশিয়ার দেশগুলি ক্রমাগত একে অপরের আরো কাছে চলে আসার পায়তারা করছে এবং কোথাও কোথাও আভ্যন্তরী মেলবন্ধনেও বেধে যাচ্ছে, আফ্রিকা এখন তার নতুন রুপে এমনভাবে সবার নজর কাড়ছে যে, পরবর্তীতে আফ্রিকা এই গ্লোবাল পলিটিক্সে একটা নতুন ক্ষমতা হয়ে দাঁড়িয়ে যাবে। চীন কখনো যুদ্ধে সাড়া দেয় নাই, এবার চীন নিজেও তার সেই পুরানো চেহাড়া থেকে একটু হলেও সরে এসছে।
করডোর্স অফ পাওয়ারের পরিবর্তনটা একেবারে চোখের সামনে ভেসে উঠছে। আর এই পাওয়ার পলিটিক্সে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হবে ইউরোপ। আর সেই ক্ষতিগ্রস্ত ইউরোপ কোনো এক সময়ে হয়তো ব্রেক্সিটের মতো অনেক দেশ লাইন ধরবে গ্রেক্সিট (জার্মানীর বহির্গমন), ফ্রেক্সিট (ফ্রান্সের বহির্গমন) কিংবা এমন আরো।
পৃথিবী আবার শান্ত হবে।