Categories
এই নীলাকাশ ভেদ করে যেমন ভগবানকে পাওয়া যায় না, আবার সমুদ্রতল মেথুন করেও কোন দেবদেবির দেখা পাওয়া গেছে এর তেমন কোন হদিসও পাওয়া যায় না। ঠিক তেমনি অন্তরভেদ করে অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে দেখলেও এক ফোঁটা ভালোবাসার আলামত পাওয়া যায় না। অথচ কেউ কষ্ট দিলে বুকে ব্যথা লাগে, আনন্দ দিলে অন্তরে সুখের আচ্ছাদন অনুমিত হয়। অনেকদিন ভালোবাসার মানুষকে না দেখলে বুক শুন্য শুন্য মনে হয়। তাহলে এই ভালোবাসার উৎসটা কি বা কোথায়?
“আমি তোমায় ভালবাসি” এর মানে অনেক ব্যাপক। আর এই ব্যাপক অর্থের কারনেই হয়তবা শতবর্ষী যুবকের চোখ অষ্টাদশী বৃদ্ধার জন্য কাদে, কাছে না থাকলে মনে হয় কি যেন নাই তার পাশে। শেষ বিকালে অথবা অষ্টাদশীর চাঁদনী রাতে কিংবা শীতের কোন এক কাকডাকা ভোরে পাশাপাশি বসে এক কাপ চা অথবা গরম গরম কোন ঝাল মিষ্টি টক খাওয়া, অমাবশ্যার রাতে কোন এক শ্মশানের পাশ দিয়ে হেটে যাওয়ার অজনা ভয়ে কুকড়ে থাকা হাত দিয়ে তাকে ধরে রাখার যে ভরসা। এই সবই ভালবাসা। একসময় এই ভালবাসা পরিনত হয় একটা অভ্যাসে। তখন অভ্যাসটাই ভালবাসা।
আজ যে শুধু তোমার মুখ দেখে ভালবাসল, তোমার রূপকে দেখে ভালবাসল, তোমার যৌবনকে দেখে শুধুমাত্র লোভের লালসায় ভালবেসে গেলো, সে আর যাই হোক তার সঙ্গে তোমার ভালোবাসার অভ্যাস হবেনা। কারন ভগবানকে ভালবাসা, একটা গাছকে ভালবাসা অথবা মাকে ভালবাসা আর সেই অপরিচিত মানুষটাকে মনের ভিতরে নিয়ে ভালবাসা এক নয়। তার সঙ্গে জরিয়ে থাকে নিঃশ্বাস, তার সঙ্গে জরিয়ে থাকে ভূতভবিষ্যৎ, তার সঙ্গে জরিয়ে থাকে জীবনের প্রতিটি সুখদুঃখের হাসিকান্নার সবগুলো অধ্যায়।
আজ থেকে পঞ্চাশ বছর পর তোমার অনুপস্থিতিতে যে তোমাকে মনে করে চোখের জল ফেলবে, আজ থেকে আরও শত বছর পর যে তার উত্তরসূরিদের কাছে তোমার নাম স্মরণ করে সেই অতীত জীবনের রোমান্সের কাহিনী শুনাবে, তোমার জীবদ্দশায় অসহায়ত্তের কারনে যে তোমাকে ছেড়ে চলে যাবে না, যাকে দেখলে মনে হবে, সে তোমাকে নয় তোমার জীবনটাকে ভালবাসে, হোক তুমি পঙ্গু, হও তুমি বিরঙ্গনা অন্তঃসত্ত্বা, হও তুমি বোবা কিংবা বধির, সেটা তার কাছে ভাল না বাসার কোন কৈফিয়ত হতে পারে না। এখানে ভালবাসাটা শুধু শ্রদ্ধার, ভালবাসাটা অন্তরকে বুঝবার আর চারিদিকের হায়েনাদের থেকে ভালোবাসার মানুসটিকে নিরাপদে রাখার আপ্রান চেষ্টা। লম্বাপথ পারি দেওয়ার কোন সঙ্গি নাই তো কি হয়েছে, সে তোমার জন্য অপেক্ষা করবে, নৌকায় আর একজনেরও জায়গা আছে তোমার যাওয়ার জায়গা নাই, তো কি হয়েছে, সে তোমার জন্য নৌকা ছেড়ে পাশে এসে দারাবে, তোমাকে কেউ বিরঙ্গনা করেছে? তো কি হয়েছে? সে তোমার সবকষ্ট ধুয়ে মুছে নিজের ভালবাসা দিয়ে আদর দিয়ে কাছে টেনে নেবে। চিনেছ কি তাঁকে? যদি চিনে থাক, তাহলে নিশ্চিত জেনো, সে তোমাকে ভালবাসে।
আমরা ভালোবাসার কথা বলি, আমরা স্নেহের কথা বলি, আমরা পারিবারিক বন্ধনের কথা বলি। কখনো কি দেখেছেন, আমাদের কাছ থেকে কে কিভাবে ভালবাসা চায়? আমাদের কাছে থেকে কিভাবে স্নেহ চায়? অথবা কখনো কি খুব কাছ থেকে ভেবেছেন, কেন অনেক আদরে গড়া সোনার সংসার কেন ভেঙ্গে যায়? তার সব গুলো কারন যদি যোগ করেন, দেখবেন, একটাই উত্তর, আমি যেমন ভালবাসা চাই তেমনি সবাই আমার কাছ থেকে ভালবাসা চায়। নিবেন অথচ দিতে জানবো না তাহলে তো একবার পাব আর সেটাও হারিয়ে যাবে ২য় বারের বেলায়। সোনালী, আপনি সুখি হবেন আমার ধারনা। ভাল বাসুন যাকে আপনি ভালবাসেন, ঐ দূর পাহারের প্রতিধ্বনির মত আপনার দেওয়া ভালবাসাও চারিদিকের পাহার থেকে শত গুনে আপনার কাছে বিভিন্ন সুরে, বিভিন্ন রঙে আপনার কাছে ফিরে আসবে।