২৯/১২/২০১৯ -অরু ডায়েরি-৩

Categories

অরু ভর্তি হয়ে গেলো ইউনিভার্সিটিতে। নতুন জায়গা, নতুন পরিবেশ, নতুন নতুন সব বন্ধু। গ্রাম থেকে আসা একটি মেয়ে শহরের কতই না ধনাঢ্য পরিবারের ছেলেমেয়েদের সাথে এখন এক সারিতে উঠা বসা করতে হয়। কিন্তু অরুর কি আছে সেই সামর্থ ওই সব পরিবারের বাচ্চাদের সাথে তাল মিলিয়ে চলার? আমি ব্যাপারতা বুঝি। আমি বুঝি কিভাবে কোন স্তরের কোন বাচ্চারা কিভাবে চলে। আমি অরুকে ঠিক আমার সন্তানের মতো করেই চালানোর চেষ্টা করছি। অরু খুব অল্প সময়ের মধ্যেই খাপ খেয়ে গেলো সবার সাথে। ওর চলন বলন, ওর কথা বার্তা, ওর বেশ ভুষা সব কিছু উচ্চ বিত্ত সমাজের বাচ্চাদের মতোই আমি ব্যালেন্স করছিলাম। ওকে দেখে কোনো বুঝার উপায় নাই যে, ওর বাবা বা মা কেহ ওকে এক বিন্দু পরিমান সাহাজ্য করছে না। ও ভুলেই গেলো ওর আসল বাবা মাকে। এক সময় অরু আমাকে বাবা বলে ডাকতে শুরু করে দিলো।

আমি যাই, আমি দেখা করি, আমিই ওর সব কিছু দেখভাল করি। অরু তার ছোট একটা আলাদা বাসায় তার পড়ার টেবিল, সাজানো ঘর, বিছানা পত্র, ছোত একতা রান্না ঘর আর কাজের এক মায়াবতী সীমাকে নিয়ে ভালই সাজিয়েছে তার আপন গন্ডি, যেখানে আছে তার শুধু বাবা, আর বাবা।

দিন যায়, মাস যায়, বছর পেরিয়ে কয়েক বছর পার হয়ে যায়। অরু এক ইয়ার থেকে আরেক ইয়ারে, আরেক ইয়ার থেকে আরেক ইয়ারে পাশ দেয়। আমার বড্ড ভালো লাগে।

একদিন-

অল্প পরিচিত কোন এক অসচ্চল পরিবারের তার এক বান্ধবী, লুনা, তার নিজের প্রয়োজনেই আশ্রয় নেয় অরুর সাজানো এই ছোট সংসারে। উদ্দেশ্য আর কিছুই না, কয়েকদিনের আবাস। অরুর চালচলন, বেশভুষা, সাজানো সংসার আর চাকচিক্যে লুনার যেনো মন উদাস হয়ে যায়। লুনা তার জীবনের সাথে অরুর জিবনের এতো বড় ফারাক দেখে সারাক্ষনই তার মন উসদাসীন হয়ে থাকে। সকালের নাস্তা, দুপুরের খাবার আর বিকালের আরাম আয়েসের সাথে যেনো এই লুনা কিছুতেই মিলাতে পারে না কি নাই ওদের আর কি আছে লুনাদের। ভিতরে ভিতরে লুনার শুরু হয় এক অজানা ক্ষভ আর জিদ। এই জিদ যেন কোন এক এদেখা ঈশ্বরের উপর, এই জিদ যেনো কোন এক সমাজের উপর, সাথে বাড়ে জিদ আমার সেই ছোট জননী অরুর উপর। লুনার সাথে কনো কিছুইই বুঝার আগে লুনা তার জীবনের চরম এক প্রিশোধের আগুনে জ্বলে উঠে। অরুর মতো একজন অসচ্চল গ্রামের চটপটে তরুনী যদি তার তথাকথিত বাবার আদরে এতো কিছু আয়েশী জীবন পায়, তাহলে লুনা কেনো তার জিবনে একই রুপে তা পাবে না, এতাই যেনো হয়ে উথে লুনার এক চরম হিংস্র মানসিকতা। লুনার এই হিংস্র মানসিকতার কিছুই না বুঝে কোনো এক বিকালে অরু হাত ধরে বেরিয়ে যায় বিকালের কোনো এক রাজপথে। হয়ত অরু তাকে নতুন শহর দেখাবে, হয়ত অরু তাকে শহরের সুন্দর বাতিঘর আর আলর রাস্তা দেখাতেই নিয়ে যায়।

রাত পেরিয়ে যায়, রাত গভীর হয়ে যায়, অরু আর ফিরে আসে না। কোথায় অরু?