এই পৃথিবীতে সুস্থ্য, স্বাধীন, আরাম এবং সম্মানের সাথে বেচে থাকার চেয়ে বড় কোনো নিয়ামক নাই। একজন শারীরিকভাবে অসুস্থ্য বিলিয়নার কোটিপতিকে হাসপাতালের বেডে জিজ্ঞেস করে দেখুন, তার কোনটা প্রয়োজন, টাকা নাকি সুসাস্থ্য? একজন মৃত্যু পথযাত্রী মানুষকে জিজ্ঞেস করুন তার একদিন বেশি বাচার জন্য সে তার অর্জিত সমস্ত সম্পত্তি কাউকে বিলিয়ে দিতে চায় কিনা, একজন অন্ধ, কিংবা পংগু মানুষকে জিজ্ঞেস করুন, তার চোখের জ্যোতি কিংবা পঙ্গুত্ব স্বাভাবিক হবার জন্য সে তার কি কি জিনিষ বা সুখ বিসর্জন দিতে প্রস্তুত?
উত্তর একেবারেই সহজ।
সবাই স্বাধীনভাবে, অল্পতেও আরামের সাথে বেশিদিন বাচতে চায়। পৃথিবী আসলেই খুব সুন্দর। এর গাছপালা সুন্দর, পথের ধারে নেড়ি কুকুরের ঘেউ ঘেউ সুন্দর, বাগানে অবহেলায় বেড়ে উঠা একটা সবুজ পাতার দোলাও সুন্দর। এই পৃথিবীতে কেউ আসলেই কারো নয়, যতো ভালোবাসার কথাই বলুক, যতো আবেগেই আপনাকে কেউ জড়িয়ে ধরুক, দিন শেষে সবাই যার যার তার তার। আপনি দিনের পর দিন বিছানায় পড়ে থাকুন, দেখবেন, একদিন আপনার চারিপাশের লোকগুলিও আর সেই আগের মতো আপনার কাছে আর ঘেষবে না, আপনি আজকে দারিদ্রসীমার নীচে বাস করুন, আপনার যত রুপই থাকুক না কেনো, আপনাকে মানুষ ব্যবহার করতে চাইবে শুধু আপনার শরীরটা। সেটা যদি ঘামে দুর্গন্ধও হয়, তাতেও কিছু আসে যায় না। সেই শরীর যখন একদিন আর তার দেহের সাধ দিতে পারবে না, দেখবেন, আপনি ব্যবহৃত টিস্যুর মতো ডাষ্টবিনেই পতিত হচ্ছেন। অথচ যখন আপনার শরিরের চামড়া ভাজ পড়ে যাবে অথচ আপনি সুস্থ্য, আপনি সাবলম্বী, আপনি স্বাধীন, দেখবেন তারপরেও আপনার ধারে কাছে মানুষের কোন অভাব নাই।
আপনি দুনিয়া ত্যাগ করার পর কেউ আপনার জন্য এক বিন্দু সময়ও নষ্ট করবে না এই ভেবে, আহা, আমি তাকে যদি আবার পাইতাম। কেউ কাউকে বারবার পাইতে চায় না। যে চলে যায়, সেই হারিয়ে যায়। আজ যারা আপনার কাছে আছে, তারা তাদের সার্থের কারনে আছে। যারা আপনার কাছে আগে ছিলো না অথচ এখন কাছে এসছে মনে রাখবেন তারা শুধু আপ্নার কাছ থেকে এমন কিছু চায় যা তাদের কাছে নাই। হোক সেটা শরির, হোক সেটা অর্থ কিংবা দেহভোগ। সময় পাস করার জন্যেও অনেকে আসে যা একেবারেই ক্ষনিকের। অথচ আবেগের যেন শেশ নাই। এই পৃথিবীর কোটি কোটি সুন্দুরী আছে, কোতী কোটি সুদর্শন আছে, একবার একজনকে ব্যবহার করার পর যেনো অন্য আরেকটি সুদর্শন পুরুষ বা নারির প্রতি মোহ চলে আছে। তাহলে আপনার ভুমিকা কতদিনের? শুধু ততোদিনের, যতদিন আপনার মানুষটির চাহিদা বিদ্যমান। অতঃপর? আপনি অকেজো। আপনাকে কোন দরকার নাই। না সন্তানের দরকার, না স্বামীর, না সমাজের কারো।
যদি বিশ্বাস না হয়, ঘুরে আসুন সেই পতিতালয়ে যেখানে আপনার থেকেও সুন্দুরী কোন মানবী তার সমস্ত দেহ অনাবৃত করে কাউকে না কাউকে খুশি করার চেষ্টা করছে অথচ ক্ষনিকের আনন্দের পর সেই পতিতা না জানে তার পুরুষের নাম বা ঠিকানা, না সেই পুরুষ জানে সেই পতিতাতার পরের দিনের কোন খবর। আজকালকের পর্ন সাইট গুলির কথা ভাবুন, একেকটা নারী একজনের চেয়েও আরেকজন সুন্দুরী, তাদের জন্য কোনো সংসার নাই, অথচ সারা দুনিয়ার মানুষ এদেরকে দেখতে থাকে, আনন্দ নিতে থাকে অথচ কেউ তাদেরকে নিয়ে সংসার করতে আগ্রহি নয়। কেনো? আপনি কোনো সুদর্শন পুরুষের নজরে পড়েছেন, সেটা ভাবুন কিসের কারনে? আপনার গুনের, আপনার রুপের নাকি আপনার সম্পদের? যদি দেখেন, আপনার পাশ দিয়ে হেটে যাওয়া আরেক সুদর্শনা নারী আপনার পুরুষের চোখ কেড়ে নিয়েছে, তাহলে ভেবে নিবেন, আপ্নিই শুধু তার কাছে সবচেয়ে সুন্দুরী নন। যদি দেখেন, আপ্নার সুদর্শন প্রেমিক আপনার থেকেও বিত্তশালি নারির প্রতি আশক্ত, ঘুরে দাড়ান, সে আপনার জন্য নয়। আর আপনার গুন? সেতো যখন আপনি তার সংসারে প্রবেশ করবেন, তারপরে প্রমান করবেন আপনি কতটা গুনি। সেটা অনেক পরের চাপ্টার।
তাই আমি সর্বদা নিজের জন্য বাচতে চাই। এই পৃথিবীর মানুষ উদপাদনের কারখানা আমি নই, না আমি সেই ফ্যাক্টরী যেখানে আমি পৃথিবীকে বাসযোগ্য করে যাবার জন্য দায়িত্ত নিয়েছি। আমি শুধু আজকের জন্য বাচতে চাই। আর যারা আমার সাথে বাচতে চায়, হয়তো তারা বেচে যাবে কিন্তু সেটাও তাদের নিজের সার্থে। পথের ধারে কতই না মানুষ ছাদবিহীন, খাবারবিহীন বা কাপরবিহিন অবস্থায় বেচে আছে, তারাও তো কারো না কারো সন্তান, তাদেরঅ তো বাবা মা ছিলো বা আছে, তারা তো হটাত করে আকাশ থেকে লাফ দিয়ে এই পৃথিবীতে আসে নাই। তাদের জন্য কতজন মানুষ ভাবে? কেউ ভাবে না। কারন মানুষ কারো জন্য কখনোই ভাবে না। আর যারা ভাবে- হয়তো তারা অন্য কোনো চরিত্রের। সংখ্যাটা এতোই ছোট যে, হাতের নলায় ধরা যায়।
এই পৃথিবী কারো জন্য কখনো পক্ষপাতিত্ব করে নাই, কারন সে এতোটাই উদাসিন, কোনো মানুষের চোখের জলের বা সুখের উচ্ছলতা তাকে স্পর্শ করে না।