৩০/০৭/২০১৯-কনিকা

মেয়েটা জন্মের দিনই আমার বুক কাপিয়ে দিয়েছিল। অবিকল আমার মায়ের চেহারা নিয়ে সে এই পৃথিবীতে পদার্পন করেছিল। আমি ভয় পেয়েছিলাম এই ভেবে যে, সে আমার মায়ের রিপ্লেসমেন্ট কিনা ভেবে। আজ আমার মা বেচে নেই কিন্তু কনিকা আছে। কনিকার মেয়ে হয়ে জন্ম নেওয়ায় আমার মা কনিকাকে একদম পছন্দ করে নাই। কিন্তু এতা তো আর আমার কনিকার দোষ নয়। আর আমিও কোনোদিন কেনো আমার বর মেয়ে হবার পর আবারো একটা মেয়েই হল, ছেলে কেনো হলো না, এ প্রশ্নতা আমার মাথায় কখনোই আসে নাই, এখনো না। ওরা দুজনেই আমার সন্তান আর আমার ভালো লাগার মানুষ।

কনিকা ছোত বেলায় যেমন বেশী অভিমানী ছিলো, আজ এতো বর হয়ে গেছে, তার সেই ভাবতা এখনো কমে নাই। বকা দিলে কান্না করে, বিশেষ করে আমি বকা দিলে তো ওর চোখের পানিতে সয়লাব হয়ে যায়। ওর মা যখন সারাক্ষন এই পরা, ঐ রুম গোছানো, অই তাইম মতো না খাওয়া, ঐ ঠিক মতো গোসল না করা, তাইম মতো পড়তে না বসা ইত্যাদির কারনে বকতেই থাকে, এতা ওর কান দিয়ে আদৌ ঢোকে কিনা আমার মাঝে মাঝে প্রশ্ন জাগে। নির্বিকারই তো থাকে। যেই আমি একটু বকা দিয়েছি- গেলো এদিনের মতো দিন বরবাদ। কেনো এমনতা হয় জানি না তবে আমি ওকে বকতেও পারি না।

মাঝে মাঝে কনিকা আমার কাছে চিঠি লিখে। চিথির বেশীর ভাগ মুল উপাদান, অর্থ নৈতিক আলাপ আলোচনা। এই যেমন, বড় আপিকে সে কিছু হোম ওয়ার্ক করে দিয়েছে, তার সাথে সেই হোম ওয়ার্কের মুজুরী হিসাবে একটা ডিল হয়েছে, তাই তাকা দিবে কে? বাবা। একজনের হোম ওয়ার্ক, আরেক জন করে দিবে, আর আরেক জন সেই তাকার মুজুরী দেবে, ফলে কত বার্গেনিং হবে এটা নিয়ে কারো কোনো মাথা ব্যাথা নেই। কারন বাবা টাকা দিবে। সেই তাকা আবার কাজের পর পরই তাদের হাতে যেতে হবে, আর হাতে যাবার পরই সেতা আবার তার মায়ের কাছে জমা হবে। ওর মা অদের ব্যক্তিগত একাউন্টে জমা করে দেবে। অর্থ নীতির এই চক্রটা বেশ মজার।

আবার কোনো কোন সময় কনিকার কিছু কাজ তার বড় আপি করে দেবে, ফলে চক্রতা একই। শুধু মালিক পক্ষের মুজুরী পাওনা হবে বড় মেয়ে, তাকা দেবেন বাবা, কাজ হাসিল করবেন কনিকা। এই দুয়ের আবার একটা ভারসাম্য করে যার যার পাওনা বুঝিয়ে দিতে হবে। অর্থাৎ কে কত টাকার কাজ করিয়ে নিলো, আর কে কত পাবেন তার একটা কঠিন হিসাবের ডেবিত ক্রেডিট আমার কাছে লেখা ঐ চিঠিতে বিস্তারীত থাকে। তবে মজার বায়াপার হলো সেন্ট্রাল ব্যাংকের মানি ব্যাক থেকে সব তাকাই পরিশোধ যোগ্য।

আবার কিছু কিছু চিঠিতে এমন থাকে যে, অন লাইন অর্ডার করা হয়ে গেছে, আইটেমটা চলেই আসবে দু একদিনের মধ্যে, আমার সাথে কথা বলার হয়তো কোনো অবকাশ হচ্ছে না, তার কোচিং আর আমার অফিসের তাইমিং এর কারনে। কিন্তু ডেবিট নোটের মতো আমার ওয়ালেটে কনিকার একটা চিঠি পাওয়া যাবে তাতে কবে কত টাকা ডেবিট করে দিতে হবে তার বিস্তারীত বর্ননা থাকে।

এটা অবশ্য আমার বড় মেয়ে করে না। সে আবার তার মায়ের সাহাজ্য নেয়। ওর মা আমাকে ফোন করে, তখন আমার ওয়ালেটের উপর চাপ পড়ে। আমার দুই মেয়ের এই ব্যাংকিং হিসাব কে যে ওদের শেখালো আমার জানা নাই, তবে তাতে ব্যাপারতা অনেক সহজ ভাবেই এল সি এর মতো ট্রাঞ্জেক্সন হয়।

কিছু কিছু চিঠি আবার অভিযোগ পত্রের মতো। আর সেই অভিযোগ হয় তার মায়ের নামে না হয় তার আপির নামে। যেমন, তার উপর পরার চাপ পড়ে যাচ্ছে, তার বিনোদনের সময়টা কেড়ে নেয়া হচ্ছে, তার আই পড ব্যবহারের সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। তাতে তার মন ভালো নাই। সে আর এই বাড়িতাকে বসবাসের যোগ্য মনে করিতেছে না। এতার একটা সমাধান হোক।

এই রকমের হাজার হাজার না হলেও মাসে দু একটা অভিযোগ পত্র তো পাইই।