মাঝিরা সেনানিবাস, বগুড়া। ১১ পদাতিক ডিভিসন-
বেশ অনেকদিন যাবত একটা লিখা লিখবো লিখবো করে লিখা হচ্ছে না। আমি বেশ অনেকদিন হয়ে গেলো এই ১১ পদাতিক ডিভিসনে জিএসও -২ (অর্থাৎ জেনারেল স্টাফ অফিসার-২ অপারেসনের দায়িত্তে আছি)। আমার কাজ অনেক। এই ডিভিসনে যদি ক্ষমতার দিক দিয়ে বিবেচনা করা হয়, তাহলে জিওসি হচ্ছেন এক নম্বর, তারপর হচ্ছেন কর্নেল স্টাফ, তারপর জিএসও-১, তারপরেই আমি। কমান্ড লেবেলে ব্রিগেড কমান্ডার গন তো আছেনই কিন্তু তারপরেও আমার এই পদটা অনেকে ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু।
আমি যেদিন এই ডিভিসনে পোস্টিং হয়ে আসি, আমাকে অনেকেই গ্রহন করতে দ্বিধা বোধ করছিলেন কোনো কোনো ডিভিসনের স্টাফগন। এর পিছনে কারনটা আমি খুজতে চেষ্টা করেছি। কিন্তু খুব সাফল্য পাই নাই। পেলাম একদিন কোনো এক খেলার অনুষ্ঠানে। ইয়াসিন স্যার (যিনি একিউ ব্রাঞ্চের ডিকিউ), তিনি বললেন, আমাদের জি ব্রাঞ্চের অফিসারগন বিশেষ করে আমার আগের জিএসও-২ (মেজর সাইফ, ১৪ লং কোর্সের) সাথে একটা ডিস্ট্যান্স মেইটেইন করতো যা তাদের ভালো লাগতো না। তারা সবাই ধরে নিয়েছেন, আমি যেহেতু আর্টিলারি অফিসার, আমার হয়তো আরো বেশি নাক উচা হবে। আমি হয়ত কারো সাথেই মিশবো না।
আমার নীতীটা ভিন্ন। আমার চাকুরী করতে গিয়ে আমি কোথায় কি অবস্থায় আছি, বা থাকি সেটা ভিন্ন। আমার সাথে সব অফিসারদের হতে হবে একেবারে খাটি সম্পর্ক। যার যার জায়গায় সে সে তার অবস্থানে থাকে, সেটা নিয়ে আমার কোনো মাথা ব্যথা নাই কিংবা তাদের সাথে আমার কোন বৈরিতা নাই। তাহলে কেনো আমার সাথে তাদের সম্পর্কটা খারাপ হবে?
আমি খুব সহজেই সবার কাছে খুব গ্রহনযোগ্যতা পেলাম। উপরের তালায় বসেন কর্নেল বশীর। কর্নেল এডমিন, একসময় আমার সিও ছিলেন সাভারে ১০ মিডিয়াম ইউনিটে।
আমার কর্নেল স্টাফ এখন কর্নেল আইকেবি, যার পুরু নাম ইকবাল করিম ভুইয়া। বেশ প্রোফেশনাল মানুষ। ভালো মানুষ। কিন্তু জিওসি জেনারেল আনোয়ারের সাথে ঊনি অনেক কিছুই মানিয়ে চলেন। জেনারেল আনোয়ারের পিছন ইতিহাস বেশ ঘোলাটে। তিনি নাকি অনেকেরই ক্ষতি করেছেন হয় প্রোমোশনের দিক দিয়ে অথবা এসিআর খারাপ দিয়ে। ফলে কেউ তার সাথে এমন কিছু করে না যাতে জেনারেল আনোয়ার তার আগের ফর্মের মত কোনো কাজ করেন এবং অফিসারগন ক্ষতিগ্রস্থ হন।
জিওসির এডিসি ক্যাঃ তৌহিদ খুব অমায়িক ছেলে। আমার পাশের রুমেই থাকে। মেসে। আমার জিএসও -১ হিসাবে কাজ করছেন লেঃ কঃ হাসান সারোয়ারদি। খুব নরম শরম মানুষ। তিনি তার স্ত্রীকে রিতিমত সমিহ করেই চলেন। কেনো এতো সমিহ করেন সেটা আমার জানা নাই। তবে ভেজাল পছন্দ করেন না তিনি। আমার আশেপাশের অন্যান্য অফিসারগন যারা আছেন, সবাই বেশ ভালো। জিএস-২ (আই) মানে ইন্টিলেজেন্স হিসাবে কাজ করছেন নাইন লং কোর্সের জাহিদ স্যার। আমরা এক সাথে ওএমটি কোর্স করেছি ১৯৮৮ সালে। তিনি খুলনার ছেলে। বেশ বুদ্ধি রাখেন সব কিছুতেই। আমরা পাশপাশি রুমেই থাকি।
যেটা বলছিলাম।
আমি পন করেছি, আমার কাছে যে যেই জিনিসের জন্যই সাহাজ্য চাইবে, আমি যতোটুকু সম্ভব তাদেরকে সর্বাত্মক সাহাজ্য করবো। আমি চাই, এই ডিভিসনে সবাই ভাবুক যে, জিএসও-২ এর কাছে কোনো সাহাজ্য চাওয়া মানে সেটা পাওয়া যায়। যে কোনো অবস্থায় যে কোনো র্যাংকের অফিসার, যে কোনো ইউনিট সবসময় যেনো আমাকে তাদের সমস্যার কথা সাহস করে বলতে পারে আমি সেটাই চাই। এটা হবে আমার ইনভেস্টমেন্ট। দেখি না কোথায় কি দাঁড়ায়।
আমি ইদানিং এর সাফল্য দেখতে পাচ্ছি। আমার ব্যস্ততা বেড়ে যাচ্ছে। কোনো অসুবিধা নাই। আমি মেসে একাই থাকি। আমি লোড নিতে পারবো।