৩১/১০/১৯৮৬-কোনো এক বিকেল

১৩ কার্তিক ১৩৯৩

কার্তিক এর বিকেলগুলোর একটা বৈশিষ্ট আছে আলাদা । ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা ময়লা হাত পায়ে কলতলায় ভীর জমায়, হৈচৈ শব্দ, দূরে কাঁচা সড়কের ধার ধরে রাখালের গলাছাড়া গানের আওয়াজ, ভুবনের অন্ধ হয়ে যাওয়া ধীরে ধীরে, রাত নেমে আসে সবার অগোচরে। ঘরে ঘরে কুপির আলো জ্বলে উঠে। আর ঐ কুপির আলোর পাঁশে গোল হয়ে বসা একদল অমনযোগী ছাত্রের মনযোগী হয়ে পড়ার ভান করা দেখতে মন্দ না। গ্রামের এই দৃশ্য দেখতে খুব মজার। কুপি জ্বলছে, দূর থেকে কিছু দুরন্ত পোকামাকর কুপির আলো চুরির লোভে আত্মাহুতি, সবই সুন্দর। তার মধ্যে না শীত না গরম চমৎকার একটা আবহাওয়া। শহরে এর প্রভাব বোঝা যায় না, কিন্তু গ্রামে এটা একটা লোভনীয় ব্যাপার। গ্রাম এই তার রূপ কখনও বদলাতে পারে না। আর এই কারনেই কার্তিক কার্তিক মাসেই আসে, বর্ষা বর্ষাতেই আসে। হেমন্তকে পেতে চাও? গ্রামে চলে এস, শীত পেতে চাও? সবই এ গ্রামে আছে। পথ হারিয়ে ফেলেছ? বহু দূর? কোন অসুবিধা নেই, তোমাকে পথ দেখিয়ে দেবার অনেক মানুষ আছে। এখানে মানুষ বাস করে, এরা যন্ত্র নয়, এরা সবার দুখে কাঁদে, এরা হাসেও প্রানখুলে। তুমি অবাক হয়ে যাবে, ওদের পেটে খুধা আছে কিন্তু সর্বনাশার প্রতিহিংসা নেই। কার্তিক বড় আনন্দের মাস ওদের। ঘরে ঘরে ধান উঠবে, ঘরের বউরা অনেক ব্যাস্ত। ওরা সন্তান পালন করে বুকে আগলে রেখে, শ্যামকে তারা ত্রিপ্ত করে কলিজা দিয়ে, এরা কখন মা, কখন জননি, আবার কখন বা কন্যা। আমার মা এই গ্রামের একজন মানুষ ।

আমি যেখানে আছি, সেটা সাগরের পাঁশে একটা জায়গা। এখানে গ্রামের ছোঁয়া আছে, শহরের ছোঁয়া আছে, কিন্তু এটা আদর্শ গ্রাম নয়, এটা আবার আদর্শ শহরও নয়। এখানে মানুষগুলো গ্রাম চিনে কিন্তু শহরের ভাষা বলে, এখানকার মানুষ গুলো পল্লীগীতি বুঝে কিন্তু মাইকেল জেক্সনের গান গায়। এদের কষ্ট অন্য কেও বুঝে না, ওরাওঁ অন্যর কষ্ট বুঝতে চায় না।

ওরা কষ্টে আছে। আমি কি এখানে ভাল আছি?