মাতৃভূমিকে রক্ষার জন্য জীবন উতসর্গ করলে তাকে বলা হয় শহীদি মৃত্যু। কিন্তু যে জীবন শেষ হয় কোনো সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে, কাউকে ক্ষমতার মসনদে বসানোর জন্যে কিংবা একে অপরের সাথে কোন ঝগড়া বিবাদে অথবা অন্য কোনো দেশের দূর্ব্রিত্তায়ন মানসিকতার পক্ষে যুদ্ধ করে, তাকে আর যাইই বলি শহীদি মৃত্যু আমি বলতে নারাজ।
ইদানিং সারাটা বিশ্বজুড়ে ক্ষমতার লোভ আর গদী টিকানোরর কুটকৌশলে যে খুন খারাবি চলছে, এর কৈফিয়ত কোথাও না কোথাও তো কাউকে না কাউকে একদিন দিতেই হবে। আজকে যারাই ক্ষমতার মসন্দে বসে নীরিহ জানমালের ক্ষতিগ্রস্থ করছে, এদের ক্ষতিপুরন কষ্মিনকালেও কেউ পুষিয়ে দেয় নাই, দিবেও না। ফলে যার ক্ষতি হয়, সেইই একমাত্র ভুক্তভোগী। তাকে কেউ মনে রাখে না, তার পরিবারের জন্য কেউ দায়িত্বও নেয় না। যে মানুষটি আজকে তার গুরুদেরকে ভালোবেসে অন্ধগলীতে লাশ হয়ে পড়ে গেলেন, তার পরের কাহিনী তার জন্য পুরুই আলাদা এবং অন্ধকার। কিছুক্ষনের জন্য হয়তো সেই লাশটা অতীব দামী হয়ে উঠলেও সেটা সন্ধ্যার আগেই চিরতরে হারিয়ে যায়।
অনেকেই বলে থাকেন, আজকের দিনের ক্ষমতার পালাবদলে হয়তো আমাদের সুখ বয়ে আনবে। এই কথাটার মতো মিথ্যা আশ্বাস আমার এই ৫৮ বছরের মধ্যে আর কোনো আশ্বাসই দেখি নাই। যারা ক্ষমতায় থাকে আর যারা ক্ষমতার পালাবদলে ক্ষমতায় আসে, তাদের মধ্যে আজ অবধি আমি কোনো তফাত দেখি নাই। পালাবদলের এই মাঝখানে যেসব স্লোগান, মেনিফেষ্টো থাকে তা নিছক কিছু বুলী যা আওরাতে হয়। ফলে যারা সুখের আশ্বাসে সেই তাদের গুরুজনদের মরিচীকার মত আশ্বাসে তাদের অমুল্য জীবন বলি দিয়েছেন বা দিচ্ছেন তারা সর্বদাই তিমির প্রাচিরেই রয়ে যান। তাদের ভাগ্য কখনো পরিবর্তন হয় না। এই দন্দের পালাবদলে মিছিলে মিছিলে একে অপরের আঘাতে যেসব মানুষগুলি মরেন, তারা আসলে শুধু দাবার গুটির সামনের সারির পনের মতো। নিজেদের সুখী ভবিষ্যতের জন্য, পরবর্তী বংশধরদের নিরাপত্তার জন্য আজকে যারা এই নীরিহ পনরুপী মানুষগুলি আন্দোলন করছেন তাদের মুল্য নেয়াহেতই সামান্য। কিন্তু সেই মানুষরুপি পনটাই কোনো না কোনো পরিবারের একমাত্র হয়তো উপার্জনকারী ব্যক্তি। তারও সন্তান আছে, তারও সংসার আছে, প্রিয় বাবা মা ভাইবোন আছে। অথচ তারা নিঃশব্দে ঝরে যায় অন্য কোন ক্ষমতালিপ্সু মানুষের জন্য যারা কোনোদিনই এসব মানুষের আপনজন ছিলো না। চোখের সামনে এসব করুন দৃশ্য দেখলে বার বার নিজের কাছে একটা প্রশ্ন জেগে উঠে-এর আসলে শেষ কোথায়? কবে মানুষ মানুষ হবে? একই দৃশ্য বারবার পুনরাবৃত্তি হলেও মানুষ কেনো ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয় না?
জীবন বড্ড সুন্দর, হোক সেটা আধাপেটে, কিংবা রোগে ভোগে। এতো ছোট জীবনে আমাদের সবার উচিত নিজের জন্য বাচা। অন্যকে বাচিয়ে নিজে মরে যাওয়ার মধ্যে কন বাহাদুরী নাই। অন্য কারো হাতের পুতুল হয়ে, কিংবা অন্য কাউকে নিজের জীবনের বদলায় সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য বিলীন করে দেয়া উচিত নয়। যে আজ এই দুনিয়া থেকে চিরতরে হারিয়ে গেলো, তার জন্য সূর্য উত্তরে উঠে দক্ষিনে অস্ত গেলেও কিছু যায় আসেনা। আকাশ ভর্তি নীলমেঘ কিংবা গাছে বসা পাখির কিচির মিচিরের দুষ্টু শব্দ বা মিষ্টি ডাকাডাকিতেও কিছু যায় আসেনা। আমরা একা একা কোনো কিছুই যেমন পরিবর্তন করতে পারবো না, দূর্বল জনগোষ্ঠীর সমষ্টিগত শক্তি দিয়েও বৃহত্তর শক্তির মোকাবেলা করতে পারবো না।
পৃথিবী হয়তো একদিন শান্ত হবে।