৩১/১২/১৯৯৯- অসুস্থ মায়ের পাশে

নতুন বাক্তার চর, কেরানীগঞ্জ, ঢাকা-

গ্রামে এসেছি। ভাইয়া সাথে আছে। মিতুল ও সাথে আছে। মাসুদ কয়েকদিন আগে গ্রামে এসেছিলো বটে কিন্তু এবার আসে নাই। ঢাকায় রয়ে গেছে। বেশ শীত বটে। বিল্লাল ভাইও গ্রামে এসেছে মায়ের কাছে। মা খুব সুস্থ নন। 

রাত হয়ে গেছে। আমরা সবাই খাটের উপর বসে কথা বলছি। বোনেরা আছে, মা বারবার কাশি দিচ্ছেন। ঘরের ওপাশে মা কাথা গায়ে দিয়ে শুইয়ে  আছেন। আমি বারবার মায়ের কাছে যাচ্ছি যেন মায়ের কোন অসুবিধা হলে বুঝতে পারি। বিল্লাল ভাই নিজেও ডাক্তার। ফলে অন্তত একজন ডাক্তার সাথে আছে এটা আমার একটা ভরসা। 

রাত প্রায় ১১টা বাজে। মা খুব ঘনঘন কাশছেন। আমি মায়ের কাশিটা সহ্য করতে পারছিনা। বিল্লাল ভাই, আমার অন্যান্য বোনেরা সবাই মায়ের কাছে এসে বসলেন, কিন্তু হাবীব ভাই মায়ের কাছে এসে বসার আগ্রহ প্রকাশ করলেন না। আমি একটু রাগের সাথেই হাবীব ভাইকে বললাম, আপনি মায়ের কাছে যাচ্ছেন না কেনো? ঊনি মায়ের কাশিতে ওনার সমস্যা হতে পারে এই কারনে তিনি মায়ের ওখানে যেতে চান না। আমার এম্নিতেই মেজাজ খারাপ হয়ে গেলে রাগ উঠে যায়। আর মায়ের ব্যাপারে আমি কোনো কিছুই মানতে পারি না।  রাগ উঠতেছিলো। হাবিব ভাইয়ের প্রতি আমার সম্মানটুকু অনেক কমে গেলো। নিজের মায়ের উপর তার এই ভালবাসা আর শ্রদ্ধ্যা? আমার তো ধারনা যে, মা যদি মারাও যান, হাবিব ভাই আমেরিকা থেকে বাংলাদেশে আসেন কিনা আমার সন্দেহ আছে। 

মা হাবিব ভাইয়ের কাছে একটা বোঝা হয়ে দাড়িয়েছে মনে হল। মায়ের উপর হাবিব ভাইয়ের কোনো শ্রধ্যাবোধ নাই মনে হলো। ভাবলাম, ভাইয়া, আপনারও কিন্তু সন্তান আছে, কোনো একদিন দেখবেন, আজকে যে আচরনটা আপনি আপনার মায়ের প্রতি করে যাচ্ছেন, কোনো একদিন আপনার সন্তানেরা যখন এই আচরনটা করবে, তখন আজকের দিনের এই আচরনটা আপনার মনেও পড়বে না হয়ত কিন্তু এইটাই হলো আপনার ফেরত পাবার দান। 

আগামিকাল হাবিব ভাই পুনরায় আমেরিকায় চলে যাচ্ছেন। আর কোনদিন তার সাথে মায়ের কিংবা অন্যান্য কারো সাথে দেখা হয় কিনা আমরা কেউ জানি না। 

উম্মিকা মাসুদের সাথে অনেক এঞ্জয় করেছে। উম্মিকা, মাসুদ এরাই আমাদের প্রথম বংশধর যাদের জন্য আমরা একটা পরিবার পেয়েছি। মিতুল খুব ভালো মেনেজ করেছে পুরু পরিস্থিতিটা। বিল্লাল ভাইয়ের বউও এসেছে। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *