জাহাঙ্গীর, আমি তোমার আর বকসী ভাইয়ের চ্যাট গুলো পরছিলাম। তোমার দৈন্যদশার কথা তুমি অকপটে স্বীকার করেছ। এটা স্বীকার করতে হয়ত সবাই পারে না। আর বাস্তব তাকে মেনে স্বীকার করাটা হচ্ছে একটা সাংঘাতিক গুনের পরিচয়। আমি জানি না তোমার আয়ের উৎস কি বা তুমি এখনো ইউএন এর ভাতা পাও কিনা। একটা সময় ছিল আমি তোমার ব্যাপারে অনেক বেশি জানতে ইন্টারেস্টেড ছিলাম যখন তুমি ইসলামিক আদল থেকে ক্রমাগত একটা ভুল দর্শনের দিকে ধাবিত হচ্ছিলে। তোমার তিন খন্ডে ধারন করা একটা ভিডিও সিডি আমার কাছে এখনো আছে। হয়ত খুজলে পাওয়া যাবে আমার স্টকে।
তোমার উপরে আমার কিছু রাগও ছিল এই জন্য যে, আমি তোমার ট্যালেন্টের ভক্ত ছিলাম এবং এই ট্যালেন্টের কিছু কাজ আমি বাস্তবে হোক সেটা আমি সত্যই চেয়েছিলাম। আমার অনেক ফোরামে আর্মি অফিসারদের কে নিয়ে কথা উঠলে অথবা ট্যালেন্ট কি জিনিস তাঁর সম্পর্কে কথা উঠলে অথবা আমি অফিসারদের যোগ্যতা নিয়ে কথা উঠলে আমি তোমার রেফারেন্স টানতাম। কিন্তু ঐ আশাটা সম্ভবত তুমি ঠিক জায়গা থেকে পালন করতে পার নাই। একটা ট্যালেন্ট মানুষের দ্বারা সমাজের অনেক কিছু পরিবর্তন সম্ভব। আমার ধারনা ছিল যে, তুমি ইচ্ছে করলেই সমাজের বা সংস্থার কিছু কিছু ইস্যু এড্রেস করতে পারতে তোমার ট্যালেন্টের দ্বারা। তুমি কত টুকু করেছ বা করতে পারতে তা তুমি ভাল জান কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছে তুমি পুরু জিনিষটাই সাংঘাতিকভাবে মিস হ্যান্ডেল্ড করে ফেলেছিলা। এ ব্যাপারেও এখন আর তোমার উপর আমার কোন রাগ বা গোস্যা নেই। যেটা হয়েছে, সেটা তুমি দেরি করে হলেও বুঝেছ যে, কিছু কিছু জায়গায় তোমার ভুল ছিল। এই যে ভুল ছিল এবং তুমি বুঝতে পেরেছ, এটা ছিল তোমার ভাল দিক এবং তুমি তা সংশোধন করে ঠিক জায়গায় থাকতে পেরেছ। তুমি জাহাঙ্গীরই আছ, শুধু পালটেছে তোমার মতবাদটা। ভুল থেকে সঠিক পথে। এই জায়গা থেকে তোমার একটা বিশাল শিক্ষণীয় ব্যাপার ছিল। যা তুমি করতে পারতে কিন্তু সব কিছু তুমি হ্যান্ডেল করার ক্ষমতা রাখতে পারনি। কারন তোমার ধৈর্যটা ছিল সরু পথের আইলের মত। গ্রামের সরু পথের আইল দিয়ে কখনো হেটেছ? দেখবা, আইল্টা সোজা কিন্তু হাটতে গেলে পা এদিক ওদিক সরে যাচ্ছে এবং দেখবে তুমি মাঝে মাঝে আইল থেকে ক্ষেতে পরে যাচ্ছ। এটা আইলের দোষ না, এটা তোমার পা কে তুমি ঠিক কন্ট্রোল করতে না পাড়া কারনে।
আমি তোমার ইনিসিয়াল লাইফ স্টাইলটা দেখেছি। আমি তোমার ১ম স্ত্রিকে খুব ভাল করে চিনতাম। তোমাকে নিয়ে তাঁর স্বপ্ন কম ছিল না। আমি জানি না সে এখন বিয়ে টিয়ে করেছে কিনা। সেই প্রসঙ্গে আমি যাব না। আমার কাছে একটা বিষয় খুব অবাক লাগে, সমাজের প্রতিটি ইস্যু আসলে প্রতিটি পরিবারের ইস্যুর সমষ্টিমাত্র। তাঁরমানে এই যে, যে ব্যাক্তি পরিবারের ইস্যুটাকে সঠিক ভাবে এড্রেস করতে পারছে, সে অন্য পরিবারগুলর ইস্যুও এড্রেস করার ক্ষমতা রাখে। একটা পরিবারে দাম্পত্য কলহ হতে পারে, একটা পরিবারে উছশৃঙ্খল সন্তান থাকতে পারে, একটা পরিবারে আর্থিক সমস্যা থাকতে পারে, আর এইসব সমস্যাগুলো কিন্তু বিগার পারস্পেক্টিভে একটা সমাজ। আমি অনেক অভিজ্ঞতা সমপন্ন লোক নই কিন্তু আমার ক্ষুদ্র জ্ঞ্যানে বলে যে, এই সমস্যাগুলো দুই ধরনের লোক দুইভাবে সমাধান করে। (১) সমস্যা হয়েছে, তো এটাকে ছেটে ফেল। এটা হচ্ছে স্মার্ট মুভ কিন্তু এরোগ্যান্ট মুভ। আরেকটা হচ্ছে (২) সমস্যার একদম রুটে গিয়ে রুট থেকে টেনে নিয়ে এসে তাকে রেইলে নিয়ে আসা। সেটা হচ্ছে লংটার্ম সলিউসন। এই দুই নম্বর পদ্ধতিতে সবচেয়ে বেশি লাগে ধৈর্য। আবার লাভটাও বেশি। কারনটা হল, কোন সাব্জেক্টই তাঁর স্থান পরিবর্তন করে না কিন্তু চরিত্র পাল্টায়। পরিবার পরিবার হিসাবেই টিকে যায়, শুধু মানুষগুলো তাঁর ব্যবহার পাল্টায় সামস্টিক ভাবে।
আমি অনেক সময় বাজারে একটা শার্ট পছন্দ করতে গিয়ে দেখেছি, দোকানদার এমন কিছু শার্ট আমাকে দেখাচ্ছে, যেটার কালার আর ডিজাইন আমার কাছে অত্যন্ত অপ্রিয়। মনে হয়ছে এগুলো কি কেউ কখনো কিনে? কিন্তু তারপরেই আবার মনে হয়েছে, হয়ত ঐ শার্ট টাই বা ঐ কালার টাই আরেক জোন কিনার জন্য হন্যে হয়ে খুজছে। এটা দেখবার বিষয় আর ভাব বার বিষয়। পৃথিবীতে ঈশ্বর সব মানুষকে কোন না কোন ভাল গুন দিয়ে তাকে ইউনিক করে পাঠিয়েছেন। আমরা তাদের ঐ ইউনিক গুনগুলো আবিস্কার করতে মাঝে মাঝে ব্যর্থ হই বলে কখন কখন জাস্ট যেটা পেতে চেয়েছি সেটা পেয়েও হারিয়ে ফেলছি। রবিন্দ্র নাথের গল্প গুচ্ছের কোন এক ছোট গল্পের মতন যে, বংশে নতুন অথিতির আগমনের জন্য সাড়া গ্রাম শুদ্ধ বড় কর্তা যেফতখানা করছেন, কিন্তু তারই এক বংশ ধর বড়কর্তার না জানার কারনে সে অবহেলিত হয়ে যেফতখানার খাঁবারের থেকেও বঞ্চিত হয়েছে।
আজকে তোমার আগের স্ত্রীর প্রতি তোমার হয়ত খুব একটা এট্রাক্সন নাও থাকতে পারে কিন্তু প্রায় অনেক বছরের একত্রে বাস করার ফলে যে মিশ্রিত একটা সময় তোমরা নিজেরা বুনেছিলে, সেটা কি আদৌ কখনো জিরো করে দেয়া সম্ভব? তোমার সন্তানদের কাছে কিন্তু তোমাদের এই ভাগাভাগির ইতিহাস কোনভাবেই সুখের নয়। তোমার বেলায় যদি এটা তোমার পূর্বপুরুষেরা বিশেষ করে তোমার শ্রদ্ধেয় বাবা এই একই কাজটা করতেন তোমার মাকে নিয়ে বা তোমাকে নিয়ে, তোমার বর্তমান জগতের সঙ্গে কি কখনো এটা সাংঘরসিক (অন্তত একটু হলেও কি প্রভাব ফেলত না) হত না? কখনো কি ঐ পারস্পেক্টিভ থেকে দেখেছ? আমাদের পরিবারে এমন একটা ঘটনা ঘটেছিল আজ থেকে ৪৫ বছর আগে। আমি যখন ছোট ছিলাম এবং এই ঘটনাটা জানতে পারলাম, সম্ভবত আমরাই প্রথম যারা এমন একটা সম্পর্ক কে অত্যন্ত সাভাবক ভাবে স্বীকৃতি দিয়ে এমন একটা পরিবার সৃষ্টি করতে পেরেছিলাম যে, অবশেষে সে মেয়ে মানুষ বলে হয়ত ইমোশনাল অবস্থাটা তুমি দেখেছ তাঁর চোখের জল দিয়ে। কিন্তু আমিও হলফ করে বলতে পারি, তোমার চোখে জল না এলেও অন্তত ক্ষনিক সময়ের জন্য তোমার চিন্তায় কখন ব্যাঘাত হয়েছেই। আর তোমার ঐ ঘোরের সন্তানেরা এই ব্যাঘাত টাতে অভ্যস্থ হচ্ছে প্রতি নিয়ত। আর এই জায়গাটাই হচ্ছে আমার এত কথা বলার কারন। উপরে বলা (১) নং পদ্ধতিতে নতুন করে সব কিছুই শুরু করা যায় কিন্তু তাতে মানুষ শধু পিছিয়েই যায়। কারন সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ফিনিশিং পয়েন্টে আসতে হলে ঐ একই সময় বরাদ্ধ নিয়ে বারবার নতুন করে কোন কিছু শুরু করা বারবারই বকামি। এতে টিমের সবার ক্ষতি হয়।
তখন টিম লিডার হিসাবে নিজকে বড় অসহায় মনে হওয়া ছাড়া আর কিছুই থাকে না। আর একবার যদি টিম লিডারের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি হয়, তখন ঐ টিম টা কোথায় কিভাবে যে ডি-রেইল্ড হওয়া শুরু করে, তাঁর রক্ষক শুদু সয়ং সৃষ্টি কর্তা। কথাগুলো তোমাকে বললাম বলে কি তুমি মাইন্ড করলা? এটা আমার জন্য ও প্রযোজ্য জাহাঙ্গীর, যদি আমি টিম লিডার হয়ে থাকি। তুমি বুদ্ধিমান, তোমার কথাগুলো বুজবার কথা।