বর্তমান পরিস্থিতিতে ডলারের মান অনেক শক্ত। অর্থাৎ Strong US Dollar. এটার আসলে মানে কি?
আমরা যে কোনো কিছু Strong কেই পজিটিভভাবে নেই কারন সেটার একটা ক্ষমতা আছে। কিন্তু মনে রাখা উচিত যে, ফাইন্যান্স এবং অর্থনৈতিক ভাষায় এই শক্ত কারেন্সীর মুল্যায়ন কিন্তু অন্য রকম। এটা খুব সহজ নয়। কারন ডলারের স্ট্রং পজিশন মুলত ডাবল এজড একটা ছুড়ির মতো। আর এটার কোন পাশের ধার দিয়ে কাকে কিভাবে যে কাটবে সেটা প্রেডিক্ট করা খুব কঠিন।
যেমন ধরুন, এক ডলারের দাম বাংলাদেশে বর্তমানে আগের থেকে প্রায় ২৩/২৪ টাকা বেশী, ইয়েনের মুল্য কমেছে প্রায় ১০% এর উপর, ইন্ডিয়ার কারেন্সীর মুল্য কমেছে প্রায় ১৫%, পাকিস্থানের রুপীর দাম এমন কি ইউরোর দামও কমে গেছে ডলারের কাছে। এটার মুল কারন কি? (এখানে একটা ছোট কথা বলে রাখি- ডলার আন্তর্জাতিক মুদ্রা হওয়ায় ডলার একটা তাজা ইস্যু। যদি ডলারের সাথে সাথে আরো অনেকগুলি আন্তর্জাতিক মুদ্রা বাজারে চলমান থাকতো তাহলে বিশ্ব বাজারে ডলার অর্থনৈতিক দিক দিয়ে কোনো দেশকেই কাবু করতে পারতো না।)
যেটা বলছিলাম, ডলার এতো স্ট্রং হবার কারন কি?
খুব গভীরভাবে পর্যবেক্ষন করে দেখবেন-মার্কিন অর্থনৈতিক পারফরম্যান্সের কারণে ডলার কিন্তু এতটা শক্তি অর্জন করছে না। ডলার স্ট্রং হচ্ছে উলটা দিকে থেকে মানে বিশ্বের বাকি অংশে হতাশাজনক অর্থনৈতিক কর্মক্ষমতার কারণে।
যারা ডলারের দেশ সেসব নাগরিকদের জন্য স্ট্রং ডলার একটা মারাত্তক সুখবর। কারন একই পরিমান ডলার খরচ করে এসব কাষ্টোমার বেশী লাভ পায়, বেশী পন্য কিনতে পারে। কিন্তু যারা আমদানির উপর নির্ভরশীল বা যে সব ব্যবসায়ীরা আমদানী করে কাচামাল কিংবা ক্যাপিটাল মেশিনারিজ আনতে চায়, তাদের জন্য স্ট্রং ডলার মারাত্তক খারাপ খবর। তারা একই পরিমান পন্য আগের তুলনায় বেশী নিজস্ব কারেন্সী দিতে হয় অর্থাৎ বেশী কারেন্সী দিয়ে ডলার কিনতে হয়। অথবা একই পরিমান পন্য কিনতে গেলে বেশী পরিমান ডলার কিনতে হয়। এটা গেলো যারা ডলারের দেশ না তাদের জন্য খারাপ খবর।
স্ট্রং ডলার থাকার পরেও আমেরিকার জন্য বা ডলারের দেশের জন্য এটা খারাপ খবর কিভাবে যেখানে তাদের অনেক খুশী হবার কথা?
আমেরিকার জন্য স্ট্রং ডলার অন্যদের চেয়ে বহুলাংশে বেশী বিপদ, এই কারনে যে, এটি মার্কিন রপ্তানিকে বিদেশী তৈরি পণ্যের সাথে আরও ব্যয়বহুল করে তোলবে, যার ফলে অন্য দেশের চাহিদা কমিয়ে দেবে বা জোর করে কমিয়ে দিতে দেশ বাধ্য হবে। এটা তো আমরা দেখতেই পাচ্ছি যে, বহু দেশ অনেক ভোগবিলাস পন্য আমদানীতে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে যাতে নিজেদের কারেন্সীর অনুপাতে ডলারের মাধ্যমে অতিরিক্ত খরচ না করতে হয়। ফলে যারা রপ্তানী করে সে সব দেশের রপ্তানী আয় কমে যায়। অর্থাৎ আমদানীকারকেরা ডলারের দাম বাড়ায় তারা আমদানীতে নিরুসাহিত করে। এর ফলে বিদেশী রাজস্ব স্ট্রীমসহ মার্কিন কোম্পানিগুলি সেই লাভের মূল্য হ্রাস দেখতে পায়। আমেরিকার জিডিপি কমে যায় বা যাচ্ছেও।
তাহলে এখন প্রশ্ন হচ্ছে-এটা কিভাবে মার্কিন বিনিয়োগকারীদের প্রভাবিত করে?
সাধারণভাবে, এর অর্থ হল একটি শক্তিশালী ডলারের অধীনে মার্কিন ইক্যুইটিগুলির উচ্চ এক্সপোজারসহ একটি পোর্টফোলিও আন্তর্জাতিক ইক্যুইটিগুলির উচ্চ এক্সপোজারের চেয়ে ভাল করতে পারে বটে, তবে সেই মার্কিন ইকুইটিগুলি যেগুলি বিদেশে প্রচুর ব্যবসা করে সেগুলি হ্রাস পেতে পারে। উদাহরণ যদি দেই-প্রক্টর এবং গ্যাম্বল, একটি মার্কিন কর্পোরেশন, বিশ্বের বৃহত্তম ভোগ্যপণ্য কোম্পানি যার বার্ষিক বিদেশী বিক্রয় বিলিয়ন ডলারের সাথে এই মঙ্গলবার রিপোর্ট করেছে যে তাদের ত্রৈমাসিক আয় ৩১% শতাংশ কমেছে । এর একটাই কারন, স্ট্রং ডলার।
এটাকে বলে ট্রেডওয়ার। এই ট্রেডওয়ারে কারেন্সী ডিভালুয়েশনের কারনে অন্যান্য দেশের পন্যের মুল্য কমে যায়। যেমন জাপান, তাদের বর্তমান গাড়ির মুল্য আগের থেকে অনেকাংশে কমে গেছে শুধুমাত্র ডলারের স্ট্র হবার কারনে। এর ফলে জাপান এখন তাদের উতপাদিত গাড়ি সেসব দেশে পাঠাতে দ্বিধা করছে। তারা আপাতত পন্য রপ্তানীতে নিরুৎসাহিত করছে। ফলে যারা আমদানী নির্ভর দেশ, যেমন আমেরিকা, তাদের জনগন পন্য পাওয়া থেকে বিরত হয়। অথচ আমেরিকার কাছে স্ট্রং ডলার থাকার পরেও পন্য নাই।
এই ট্রেডওয়ারের কারনে বিভিন্ন দেশে স্টক এক্সচেঞ্জগুলিও উঠানামা করছে, ফলে ডলারের দেশের পন্যের স্টক এক্সচেঞ্জের ক্রয় বিক্রয়ও অনেকাংশে কমে গেছে। এর ফলে খোদ আমেরিকাতেও রিসেসন নামক একটা ধাক্কা লাগছে। কিন্তু ডলার স্ট্রং।
এই বর্তমান পরিস্থিতিতে আগামীতে যা দেখা যাবে সেটা হচ্ছে- ডলারের বিপরীতে অন্য কোনো কারেন্সী বা কারেন্সীসমুহ দাড় করানো। ডলারকে আর একক আন্তর্জাতিক মুদ্রা হিসাবে গন্য না করা। হতে পারে সেটা ‘ব্রিক্স কারেন্সি’, হতে পারে নতুন কোনো কারেন্সী যা ইউরোর মতো সব দেশ ব্যবহার করবে। ইউরো যেমন এখন ২৯টি দেশের কমন মুদ্রা।
ডলারের জন্য এটাই সবচেয়ে মারাত্তক খারাপ খবর।