৬/৭/২০২১-কিছু কথা আছে যা বলতে চাইনা

কিছু কথা আছে যা বলতে চাই নাই কিন্তু বলা হয়ে যায়, কিছু কথা ছিলো, বলতে চেয়েছি, অথচ বলা যায় নাই, কিছু সপ্ন ছিলো যা দেখতেই চাই নাই কিন্তু দেখতে হয়েছে আবার কিছু এমন সপ্ন ছিলো সব সময় দেখতে চেয়েছি কিন্তু তা বাস্তবায়ন হয় নাই। এমন কিছু শখ ছিলো সারাজীবন লালন করেছি কিন্তু জীবনের শেষ তীরে এসেও সেটা ধরা দেয় নাই আবার এমন কিছু ভয় ছিলো যা একেবারেই কাম্য নয় অথচ তা আমি এড়িয়ে যেতেই পারিনি। এটা আমার দোষ নয়। না আমার অপারগতা। আমি এই আফসোসের ব্যাপারটা নিয়েও বহুবার গবেষনা করেছি কেনো, এবং কী কারনে আবার এই কিছু কথা বলা হয় নাই, কিছু কথা না বলতে চেয়েও বলতে হয়েছে, কিছু সপ্ন আমাকে দেখতেই হয়েছিলো অথচ সেটা আমার কাম্য ছিলো না, আবার কিছু স্বপনের ধারে কাছেও আমি যেতে পারিনি।

এই দুনিয়ায় অনেক পয়সাওয়ালা ব্যবসায়ী, অনেক নামীদামী মানুষের জীবন কিংবা সার্থক কিছু মানুষের জীবনী আমি খুব কাছ থেকে দেখার চেষ্টা করেছি এজন্য যে, আমি যাদেরকে সুখী আর খুসী দেখছি, তাদের সব চাওয়া পাওয়া কি পূর্ন হয়েছে যা তারা আমার মতো ভেবেছেন এভাবে যে, যা তারা করতে চেয়েছেন সেটা তারা পেরেছেন, কিংবা যা তারা দেখতে চান নাই সেটা আসলেই তারা দেখেন নাই বা যেটা তাদের আজীবনের শখ ছিলো সেটা তারা পেয়েছেন?

না, এটা একেবারেই সত্যি নয়। তারাও পারেন নাই। কারো জীবনে কখনোই এটা হয় নাই, হবেও না। এর একটাই কারন। আর সেটা হচ্ছে সে তার মতো, আর এই পৃথিবীর অন্যান্য সবাই যার যার মতো। সবাই যার যার থেকে আলাদা। কিন্তু একটা জায়গায় সবার সবার সাথে মিল রয়েছে। আর সেটা হলো, সবাই একা। দলবদ্ধ সমাজই বলি, আর একক পরিবারই বলি, সারাটা জীবন প্রতিটি মানুষ একাই ছিলো আর একাই থাকবে। এই একাকীত্ততা মানুষের জীবনে একটা আফসোসের পাশাপাশি একটা সুখের অনুভুতিও নিয়ে আসে যখন সে ভাবে যে সে যা করতে চায় না, সে সেটা করেই না। আবার সে যেটা করতেই চায়, সে সেটাই করে। আর ঠিক এ কারনেই কেউ দলবদ্ধভাবে সুখীও নয় আবার এককভাবেও নয়। এভাবেই একটা চরম আফসোস নিয়ে মানুষ এই নীল আকাশের রুপ, এই নির্জন পাহারের মাদকতা কিংবা কনকনে শীত অথবা বর্ষার রিম ঝিম বৃষ্টির টুং টাং শব্দের মুরত্রছনা ছেড়েই বিদায় নেয় যাকে কেউ আর কখনোই মনে রাখে না।

কেউ সুখী না। আমিও না। আবার সবাই সুখী, সেখানে আমিও সুখী। এই মাত্রাটা সময়ের সাথে সাথে কখনো প্রখর হয় আবার কখনো বুঝাই যায় না কোন স্টেজে আমরা অবস্থান করছি। এর ফলে যেটা হয় যে, কখনো কখনো নিজের সন্তানকেও নিজেরা চিনতে পারি না, আবার কখনো কখনো আমাদের সন্তানেরাও আমাদের চিনতে পারে না। সবার স্বকীয়তা আলাদা, সবার চিন্তাধারা আলাদা, সবার পছন্দ আলাদা। এই আলাদা আলাদা স্বকীয়তা, চিন্তাধার আর পছন্দের ভীড়ে কারো সাথেই কারো কিছুই মিল নাই বিধায় কোনো না কোনো সময়ে এরা একটি বিন্দুতে এসে কনফ্লিক্ট তৈরী করে। এই কনফ্লিক্ট তৈরির বিন্দুতে যদি কেউ খুব সহজে অতিক্রম করে বেরিয়ে যেতে পারে, তারা সবার থেকে একটু বেশী আত্তত্যাগী আর সুখী। এর মানে সেক্রিফাইসের কোনো বিকল্প নাই। যতো বেশী ছাড়, ততো বেশী জীবন সহজ। কিন্তু এটা সব সময় পারা যায় না।

মজার ব্যাপার হলো-প্রতিটি মানুষের মূল্যায়ন তার জীবন শেষ হয়ে যাবার পর শুরু হয়। আর যাদের মূল্যায়ন তাদের জীবদ্দশায় হয়, তারা শুধু জানতে পারেন না যে, তাদেরকে চাটুকারীতা করা হচ্ছে। আর চাটুকারীতা হচ্ছে এটা না জানার কারনেই মনে মনে তারা একটা আলাদা জগতে আরামবোধ তথা গর্ব বোধ করেন বটে কিন্তু যখন তিনি আর থাকেন না, তখন কোনো পলিথিনের ভিতরে ঠেসে আটকানো একটা বহুদিনের পচা গলিত মাংশের টুকরার মতো ভিন্ন গন্ধ কিংবা বহুদিন যাবত আটকানো একটা আতরের শুন্য বোতলের মতো যে কোনোটাই ছরাতে পারে। কিন্তু তার তখন কিছুই যায় আসে না। তখন তার সব হিসাব কিতাব শুধু তার আর বিধাতার মধ্যে।

এ রকম একটা জীবনে আমি তাই আফসোসের ব্যাপারটা খুব মামুলী একটা ঘটনা বলেই চালিয়ে দেই। এতে একটা মজা আছে। আর সে মজাটা হলো এমন-

ধরুন আপনার এখন খিচুড়ি খেতে ইচ্ছে করলো, গিন্নীকে বললেন, গিন্নী একটা অজুহাত দেখিয়ে এখন খিচুড়ি খাওয়া যাবে না বলে পাশ কাটিয়ে গেলেন। আপ্নিও ধরে নিন, আপনার ভীষন ইচ্ছাটা খিচুড়ি খাওয়ার দিন আজ নয়। আজ আপনার খিচুড়ি খাওয়ার দরকারই নাই। কোনো আফসোস থাকবে না। অথবা আপনার সাথে আপনার সন্তানের কোনো একটা বিষয়ে মতের অমিল হলো যা আপনি মানতে চান না। কারন আপনি চান আপনার সনাত্ন আপানার কথামট কাজ করলে তার ভবিষ্যৎ ভালো হবে। কিন্তু সেটা সে মানতে নারাজ। ধরে নিন, আপনি আপনার কাজ করে ফেলেছেন তাঁকে গাইড করার মাধ্যমে। কিন্তু আপনি জানেন এটা হয়তো সময়পোযোগী না। কি আছে? সেটা তার জীবন। তাকেই সাফার করতে দিন। আপনি তো আর সেটা ভোগ করবেন না। অথবা ধরুন, আপনি চান বিশাল কিছু একটা আর্থিক অবলম্বন থাকুক যাতে আপনার অবর্তমানে আপনার আপনজনেরা ভালো থাকে। কিন্তু সেটা করতে গিয়ে এই “বর্তমান” সময়ে আপনি কারো কাছে কিপটা, কারো কাছে কঠিন ইত্যাদিতে ভূষিত হবেন। কি দরকার? ছেড়ে দিন তাদের ভবিষ্যৎ তাদের উপর। আপনি তো আর থাকবেনই না। তখন তারা কি করবে, আর কি করবে না সেটা তাদের ব্যাপার। ঐ যে বললাম, তখন আপনার মূল্যায়ন হবে এইভাবে যে, আহা, বাবা কিংবা স্বামী তো ঠিকই করতে চেয়েছিলেন। আপনি মুল্যায়িত হবেনই। আফসোসের কোনো প্রয়োজনই নাই।

আপনার আফসোস হবে তখন যখন আপনার সব কিছু থাকতেও আম্পনি আপনার নিজস্ব পছন্দকে মূল্যায়ন করেন নাই, আপনার আফসোস হবে তখন যখন আপনি যেটা করতে চেয়েছেন আর করতে পারতেন নিজে মনের সুখের জন্য কিংবা আনন্দের জন্য অথচ আপনি সেটা করেন নাই। সেই আফসোস এর দোষ আপনার।

আপনার ব্যবসায়ীক কোনো পার্টনারের সাথে কোথায় যেনো একটা অমিল হচ্ছে যার জন্য আপনি শান্তিতে নাই। ছেড়ে দিন ততোটুকুই যতোটুকুতে আপ্নার ব্যবসায়ী খুসি থাকে। আপনি শুধু মিলিয়ে নিন, আপনি অতটুকু ত্যাগে কতটুকু ক্ষতিতে পড়লেন। যদি সামলে নেয়া যায়, এটাই ভালো মনে করে শান্তিতে থাকুন। ভালো ঘুম হবে আর ভালো ঘুম একটা আরামের লক্ষন। আপনি তো সাথে করে কিছুই নিতে পারবেন না। যেহেতু নিতেই পারবেন না, তাহলে অযথা সেগুলিকে ধরে রাখার কি ফায়দা? সব তো অন্য কেউই ভোগ করবে!! যদি তাইই হয়, অতটুকুই আপনার দরকার যতটুকুতে আপনি ভালো থাকেন। বাকীটা অন্যের। আফসোসের কোনো কারন নাই।

বড় বড় মিনিষীরা, বড় বড় ব্যবসায়ীরা কিংবা আরো বড় বড় জ্ঞানীরা তাদের শেষ জীবনে এসেই এই আফসোসের সন্ধানটা পান। আর মৃত্যুর বিছানায় শুয়ে শুধু একটা কথাই বলে যান সবার উদ্দেশ্যে যে, জীবনে কি পেলাম? আমি কি কারো জন্যেই কিছু করি নাই? কিংবা আমি তাহলে সারাজীবন কাদের জন্য এতো পরিশ্রম করলাম যখন আমার এই মুমুর্ষ সময়ে কেউ পাশে নাই কিংবা আমি যা চাই সেটা আর পাই না?

এটাই মূল কথা। জীবনের শেষ সময়ে কেউ কারো কাছেই থাকে না কারন সবাই আলাদা। সবাই ব্যস্ত।