৮/১/২০২৪-উম্মিকার বিয়ে এবং আমার বিশ্লেষণ

অনেকদিন আগেই লিখেছিলাম যে, আমি ধীরে ধীরে আমার জীবন নিয়ে গুছাচ্ছি। উম্মিকার বিয়েটাও আমার এই চলমান প্রক্রিয়ার একটা অংশ। কারন আমি ধীরে ধীরে দায়িত্ব ছেড়ে দিতে চাচ্ছি, সব কিছুর হিসাব কিতাব একেবারে নখের আগায় রাখতে চাচ্ছি যেনো মৃত্যু যেদিন আসবে সেদিন যেনো আমাকে এটা বলতে না হয়, অনেক কিছু করার বাকী ছিলো।

উম্মিকার আগেরবার বিয়েতে যদিও উম্মিকার পছন্দ মতোই ছেলেকে উম্মিকা আমাদের সামনে হাজির করেছিলো কিন্তু বিয়ের ঠিক আগে উম্মিকা সেই ছেলেটার সাথে বিবাহে রাজী ছিলো না। কিন্তু যেহেতু আমরা কথা দিয়ে ফেলেছিলাম, ফলে অনেকটা জোর করেই আমরা উম্মিকাকে অই ছেলের সাথে উম্মিকার বিয়ে দিয়েছিলাম। বুঝতে পারিনি ছেলেটা যে এতো লোভী। শেষ পর্যন্ত আমরাই ছেলেতাকে তাড়িয়ে দিতে বাধ্য করেছিলাম।

এবারের বিয়েতে আমি উম্মিকাকে কোনো জোর করিনি। কিন্তু ছেলেটার বয় বিদ্যমান থাকায় কোনোভাবেই রাজী ছিলাম না। অবশেষে ছেলেতা তাঁর ১ম স্ত্রীকে ডিভোর্স করার পর এবং আমি বিস্তারীত আলোচনার পর অবশেষ ডাল আবিরের সাথে উম্মিকার বিয়েতে রাজী হইলাম। এই রাজী হবার পিছনেও আমার একটা উদ্দেশ্য ছিলো- আর সেটা হচ্ছে, আমিও চেয়েছি উম্মিকা দ্রুত বিয়ে করে তাঁর নিজের পছন্দমত স্বামীর কাছে থাকুক।

এবারে জামাই এর ব্যাপারে আমার অনেক রিজার্ভেশন আছে। প্রথমবার ভেবেছিলাম, জামাই মানে ছেলে পাওয়া। কিন্তু সেটা ভুল প্রমানিত করেছিলো উম্মিকার প্রথম হাসবেন্ড। জামাই কোনোদিন ছেলে হয় না আর ছেলের বউ কোনোদিন নিজের মেয়ে হয় না। আমি এবার সেইটাই মনে মনে স্থির করেছি যে, কোন কিছুতেই আমি আর আগের মতো ভাবাবেগে থাকবো না। জামাইয়ের রোজগারে সে তাঁর ভালো মন্দ সংসার চালাবে, ওদের কোনো ব্যাপারেই আমি অন্তত নাক গলিয়ে উপযাজক হয়ে অতিরিক্ত কিছুই করতে যাবো না। জামাই শশুড়ের যতটুকু ব্যব্ধান থাকা দরকার, এবার ঠিক সেই মাপকাঠিতেই সম্পর্কটা আমি চলমান রাখতে চাই। না মাথায় তোলা, না নীচে রাখা। এটা ওদের জীবন, ওদের সংসার। সংসার শুরু করার আগে যা যা দরকার (ফ্রিজ, টিভি, এসি, ফার্নিচার, ওভেন, পিউরিট, আলমারী, শোকেস, দাইনিং চেয়ার টেবিল, খাট) সব দিয়ে দিলাম। সাথে গহনা প্রচুর। আমি ঠিক এর পরে আর কিছুই আগ বাড়াইয়া দিতে নারাজ। আমার দেয়ার ক্ষমতা আছে কিন্তু যাদের নেওয়ার ক্ষমতা নাই, তাদেরকে অন্তত সেধে কিছুই দিতে যাব না।

উম্মিকার মা প্রথমবারের অভিজ্ঞতা থেকে কিছু শিখছে বলে মনে হয় না। সে আবিরকে নিজের ছেলেই মনে করে, বেশ ভাবাবিত, আবেগিত, যেনো ঠিক আগের রানার মত। আমি তাতে কিছুই বলছি না কারন সে শুনবে না। উলটা মিনিং বের করবে। কিন্তু আমি জানি ঠিক কখন আমি ছাড় দেবো।

উম্মিকা প্রচন্দ রকমের সার্থপর। উম্মিকা যখন বুঝতে পারে যে, সে সেরে গেছে, উম্মিকা খারাপ ব্যবহার করতে পিছপা হয় না। আমি ওর এই গুনটা সম্পর্কে একেবারে ক্লিয়ার। ফলে আমিও উম্মিকার কাছ থেকে কিছুই আশা করি না। উম্মিকা আমাদের ফ্যামিলি গার্ল হিসাবে কাজ করে না। উম্মিকা মনে করে, যতটুকু নেয়া যায়, অতটুকুই ভালো। উম্মিকার এই গুনটা আমার একেবারেই অপছন্দের। উম্মিকার ধারনা নাই, আমার হাত কত খোলা যদি কেউ আমার সাথে একেবারে বন্ধুর মতো থাকে। যাক সে কথা, আমি জানি কখন আমি কাকে কতটুকু ছার দেব। এবার আর আগের মত এতো উলফুল্ল হবার কন কারন দেখি না। উম্মিকা বা আবির যদি চালাক হয়, তাহলে ভাল, তা না হলে আবির স্রেফ আমার কাছে উম্মিকার হাজবেন্ড এবং অন্য বাড়ির ছেলে।

হতে পারে আজ থেকে ৫/৬ বছর পর আমি বুঝতে পারবো, ওরা কতটুকু আমার বা কতটুকু ওরা আমার জন্য। এতা না বুঝা অবধি আজ যা দিলাম, আপাতত এখানেই ক্ষান্ত আমি। উম্মিকার মা হয়তো আমাকে অনেক কিছুর জন্য চাপ দিতে পারে কিন্তু সেতা আমার সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে আমি কিছুই করতে চাই না। আমাকে অনেক কিছু বুঝতে হবে আগে। তারপর সব কিছু তো ওদেরই। সহজে সব কিছু যেমন আমি পাইনি, আমিও চাই না কেউ সহজে আমার কাছ থেকে সব ছিনিয়ে নিক, হোক সেটা উম্মিকার মায়ের চাপ বা উম্মিকার। আমি কখনো আর উম্মিকা বা আবিরকে বিদেশে যেতে বল্বো না। যদি ওরা যেতে চায় সেটা ওদের নিজের যোগ্যতায় এবং খরচে যেতে হবে। যদি কিছুটা সাহাজ্য লাগে সেটা হয়ত আমি করবো কিন্তু শতভাগ কখনোই না। আমার নিজের জন্যেও আমাকে সঞ্চয় বাচিয়ে রাখতে হবে কারন আমি জানি, এক সময় আমার জীবন আমাকেই টানতে হবে। সেই সময় শুধু আমার সঞ্চয় আমাকে বাচিয়ে রাখতে পারবে। লোকজনের খরচায় আমার জীবন অনেক সহজ হতে পারে। আমি এই ব্যাক আপ কখনোই নিঃশেষ করে ওদের জন্য উজার করে দিবো না।

আমার এখন দায়িত্তের মধ্যে রয়ে গেলো ছোট মেয়ে কনিকা। আমি ওকে আগামী ২০২৫ সালের আগষ্ট পর্যন্ত পরার সমস্ত খরচের তালিকা করেছি। আর ওকে এটাও বলেছি, ২০২৫ সালের আগষতের পর আমিও ওকে দেশ থেকে কোনো সাপোর্ট দিতে চাই না। বিদেশে পরাশুনা করিয়েছি। ওর পিছনে আমার প্রায় ৩ বা সাড়ে ৩ কোটি টাকা খরচ করতে হয়েছে। মেয়েদের মধ্যে ওর পিছনেই আমার সবচেয়ে বেশী খরচ করা হল। এরপরেও যদি সে নিজের পায়ে দাড়াতে না পারে সেটা ওর ব্যর্থতা।

আরো একজন আছে যে আমার রিস্পন্সিবিলিটি। তাঁর ব্যাপারেও আমি অনেক সচেতন কারন সে মনে করে আমি ছাড়া ওর আর কেউ নাই। আমি সার্থপর নই আর আমি দায়িত্তশিল মানুশের মতোই আচরন করে থাকি যারা আমার নিজের এবং কাছে লোক।

সবাই ভালো থাকুক।