উচ্ছিষ্ঠ সময়ের রাজত্ব
২০২১
৮ জুলাই
জীবনে হতাশ হওয়ার কোনো কারন নাই। একদিন নিজেকে নিজেই বলেছিলাম যে, ভগবান মানুষের জন্য প্রতিটি দিন একই রকম করে কাটাতে দেন না। আজ যে রবিবার আপনি হাসছেন, আগামী রবিবার আপনি নাও হাসতে পারেন, হয়তো সেদিন আপনি হাসিতে আপনার প্রতিটি মুহুর্ত ভরে থাকবে। এই সপ্তাহটা হয়তো আপনার জন্য ভয়ানক অস্থির যাচ্ছে, কে জানে আগামী সপ্তাহটা হয়তো হবে একেবারেই সুন্দর। তাই হতাশ হবার কোনো কারন নাই। প্রতিটি ঝড় কিংবা বিপদের মাঝেও কিছু না কিছু সুসংবাদ থাকে, কিছু না কিছু ভালো জিনিষ আসে। একটা মৃত ঘড়ির দিকে তাকান, দেখবেন নষ্ট ঘড়িটাও দিনে দুবার একদম সঠিক সময় প্রকাশ করে। অপরিষ্কার জল খাবারের অনুপোযোগী হলেও সেটা আগুন নেভানোর কাজে লাগে। বোবা কিংবা বোকা বন্ধুও আপনার অন্ধ জীবনে রাস্তা দেখিয়ে দিতে পারে।
তারপরেও একটা সময় আসে যখন শুধু নিজের জন্যেই নিজেকে বাচতে হয়। অন্য কারো জন্যে নয়। আমরা সামাজিক কিংবা পারিবারিক জীবনের কথা বলি। ওটা একটা শুধু কন্সেপ্ট যেখানে মানুষ একা থাকতে পারে না বলে সে এই দলবদ্ধ জীবন বা পারিবারিক জীবনটাতে থাকতে চায়। কিন্তু একটা সময়ে সবাই এই জীবনেও হাপিয়ে উঠে। সন্তান, স্ত্রী কিংবা আশেপাশের সবাই যেনো তখন এক ঘেয়েমীতে ভরে যায়। তখন কেউ কারো আদর্শ কিংবা অভিজ্ঞতাকে আর কাজে লাগাতেও চায় না, বরং যেটা নিজেরা ভাবে সেতাই যেনো পরিশুদ্ধ, আর সেটাই করতে চায় সবাই। সন্তানেরা যখন বড় হয়ে যায়, তখন তাদেরকে তাদের মতো করেই ছেড়ে দেয়া উচিত। তাদের চিন্তা ধারা, তাদের পছন্দ কিংবা আশা নিরাশা সবন কিছু তাদের মতো। তাই, আমরা যারা বড়রা তাদের জন্যে দুশ্চিন্তা করি, এটা হয়তো আমাদের অভিজ্ঞতার আলোকে ভাবি যে, ওরা ভুল করছে বা যা করছে সেটা ঠিক নয়। আর এই অভিজ্ঞতা থেকে আমরা আমাদের কিছু কন্সেপ্ট বা ধারনা বা উপদেশ ওদের উপর চালাতে চাই যা অহরহই ওরা মানতে চায় না। যখন এমন একটা কনফ্লিক্ট সামনে আসে, তখন আমাদের উচিত আর না এগোনো। সবাইকে যার যার পথে চলতে দিয়ে ঠিক ঐ জায়গাটায় দাড় করানো উচিত যাতে ওরা বুঝতে পারে, আমাদের উপদেশ ঠিক ছিলো কিংবা আমরাই ঠিক ছিলাম। কিন্তু সমস্যা হলো ঐ সময় কোনো কিছুই আর পিছনে গিয়ে সঠিকটা করা যায় না বলে মনে কষ্ট লাগে বা খারাপ লাগে। কিন্তু ওটা ছাড়া তো আর কিছুই করার নাই। চেয়ে চেয়ে ধ্বংস দেখা ছাড়া যদিও কোনো উপায় নাই, তারপরেও সেটাই করতে দেয়া উচিত যাতে ওরা এটা বুঝতে পারে যে, বড়দের অভিজ্ঞতার দাম ছিলো, উপদেশ গ্রহন করা উচিত ছিলো। তাহলে হয়তো আজকের দিনের এই অধোপতন কিংবা ছেড়াবেড়া জীবনে পড়তে হতো না।
লাইফটায় অনেক পরিবর্তন নিয়ে এসেছি আমি নিজেও। নিজের ঘরে যখন কেউ একাকিত্ত বোধ করে সেখানে সময় একেবারেই স্থবির। সেখানে যেটা চলে সেটা হচ্ছে- সময় মত খাওয়া, আর নিজেকে অন্য কিছুতে ব্যস্ত রাখা। এটা একটা সময়ে সবার জীবনেই আসে। আমি যদি বলি, এটা ইতিমধ্যে আমার জীবনেও শুরু হয়ে গেছে, ভুল বলা হবে না।
কেনো বললাম কথাটা। এর নিশ্চয় কোনো কারন তো আছে। আজকের যে ঘটনাটা ঘটেছে সেটা আমার কাছে কাম্য নয়। না আমি আশা করেছি। আমার সন্তানদের জন্য আমার থেকে বেশী কেউ ভাবে এটা আমি কখনোই বিশ্বাস করতে চাই না। কিন্তু সেই সন্তানেরা যদি কখনো বলে, যে, আমরা তাদের জন্য অভিশাপ,আমরা পশুর চেয়েও খারাপ ব্এযবহার করি, কিংবা আমরা প্ৃথিবীর সবচেয়ে খারাপ বাবা মা ইত্যাদি, এর থেকে বড় পরাজয় আর কিছু হতে পারে না। তবে আমি জানি, জীবনে এ রকমের অনুভুতি সবারই আসে। যখন এই অনুভুতি ভুল প্রমানিত হয়, তখন বেলা এতোটাই বেড়ে যায় যে, কারো কারো জীবনের রাত শেষ হয়ে আরো গভীর রাতে অন্য কোনো জগতে সে চলে যায়।