উচ্ছিষ্ঠ সময়ের রাজত্ব
২০২১
৯ জুলাই
পড়াশুনার জন্য কনিকার বিদেশ যাওয়ার প্রস্তুতি ধীরে ধীরে প্রায় সমাপ্তির দিকে। ভিসা হয়ে গেছে, টিকেট হয়ে গেছে, ইউএমবিসি ইউনিভার্সিটিতে ভর্তির ব্যাপারে সব ফরমালিটিজ শেষ হয়ে ভর্তিও হয়ে গেছে, ওর জন্য এক বছরের আগাম টিউশন এর নিমিত্তে ১৪ হাজার ডলারের মধ্যে ১৩ হাজার ডলার ফিও আমি ছোট ভাই (মোস্তাক আহমেদ) এর কাছে রেখে দিয়েছি, ভ্যাকসিনেশনের সবকটা টীকাও প্রায় নেয়া শেষ। যাওয়ার সময় যে কতগুলি ডলার ওর হাতে দিয়ে দেবো সেটারও প্রায় ব্যবস্থা করে রেখেছি। এখন শুধু আগামী ১০ তারিখের দিবাগত রাত মানে ১১ অগাষ্ট ২০২১ তারিখে ভোর ৪টায় ওর কাতার এয়ার ওয়েজে উঠা বাকী ইনশাল্লাহ। একাই যাবে কারন এই করোনাকালীন সময়ে আমরা কেহই ভিসা পাচ্ছি না বিশেষ করে ভিজিটিং ভিসা। আবার ব্যবসায়ীক ভিসার জন্য যিনি আমাকে আমেরিকা থেকে ইনভাইটেশন পাঠাবেন, তাদের পক্ষেও পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না বিধায় আমি ব্যবসায়ীক ভিসার জন্যেও এপ্লাই করতে পারছি না। ফলে কনিকাকে একাই যেতে হবে আমেরিকায়। একটু অসস্থিতে আছি বটে কিন্তু কনিকার উপর আমার ভরষা আছে যে, কনিকা একাই যেতে পারবে ইনশাল্লাহ।
কনিকার জন্মদিন আসলে এই সেপ্টেম্বরের ২০ তারিখে হবার কথা। কিন্তু কনিকা তখন দেশেই থাকবে না। গতবার ওর জন্মদিনটা ভালোমতো কভিডের কারনে পালন করতে পারিনি। এটা নিয়ে ওর কোনো কষ্ট ও ছিলো না। কিন্তু এবার যেনো ওর মন খারাপ হচ্ছিলো যে, ইচ্ছে করলেও সে তার জন্মদিনটা ঢাকায় পালন ক্রতে পারবে না বলে। কনিকার আফসোস থাকবে যে, ওর এ বছরের জন্মদিনটা সে আমেরিকায় থাকায় সবার সাথে পালন করা সম্ভব না। মন খারাপ করবে, তাই আমরা ওর আগাম জন্মদিন এবং ওর বিদেশ যাওয়ার প্রাক্কালে সবাইকে একবার দাওয়াত করে খাওয়ানোর জন্য যে অনুষ্ঠানটা করার প্ল্যান করেছিলাম, সেটা এক সাথেই করলাম আজ। প্রায় ৫০/৫৫ জন্য গেষ্ট এসেছিলো, আমার ব্যবসায়ীক পার্টনার মুর্তজা ভাই এবং তার স্ত্রীও এসেছিলেন। সময়টা ভালোই কেটেছে।
সাজ্জাদ সোমা ওর বাচ্চারা আর সনি এবং তার জামাই সহ বাচ্চারা সব সময়ই আমাদের বাসায় আসতে পছন্দ করে, ওরাও বাদ যায় নাই। কনিকার জন্য ভালো একটা সময় কেটেছে আমাদের সবার। এমন ঘটা করে হয়তো আগামী ৫ বছর আর ওর জন্মদিন পালন করা হয়তো সম্ভব হবে কিনা জানি না।
কভিড-১৯ এর প্রভাব হটাত করে দেশে মহামারীর লক্ষন দেখা দিচ্ছে বলে সরকার কঠিন লক ডাউন দিয়েছে। যদিও আমাদের গার্মেন্টস শিল্পের জন্য এটা বাধ্যতামূলক নয়, তারপরেও আমি ইচ্ছে করেই এই কয়দিন ফ্যাক্টরীতে যাচ্ছি না। বাসায় বসে ডায়েরী লিখি আর দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের ব্যাপারে অনেক পড়াশুনা করছি। সাথে ইউটিউব থেকে সেই দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের ভিডিও ফুটেজগুলিও দেখার চেষ্টা করে ঐ সময়টাকে বুঝবার চেষ্টা করছি। আনা ফ্রাংক এর ডায়েরীর উপর একটা মুভি হয়েছে, সেটাও দেখলাম। আইখম্যানের উপর প্রায় শতাধিক ট্রায়াল হয়েছে, সেগুলিও দেখলাম। খুব কঠিন সময় ছিলো দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময়টা।
যাই হোক যেটা বলছিলাম, কনিকার পর্ব। কনিকা তার জন্মদিন উপলক্ষ্যে প্রায় লাখখানেক টাকার ক্যাশ গিফট পেয়েছে। আমি চাই নাই কেউ ওকে গিফট করুক কারন এসব গিফট আসলে কনিকার জন্য এখন আর খুব একটা প্রযোজ্য নয়, সে এগুলি বিদেশ নিতেও পারবে না আর আমরাও এগুলি আগামী সময়ে সংরক্ষন করতে পারবো না। তাই গেষ্ট যারা এসেছিলো, তারা সবাই কনিকাকে ক্যাশ টাকাই গিফট করেছে। আর এ কারনেই ওর গিফট এর টাকা এতো বেশী উঠেছিলো।
কনিকা খুব ফুরফুরা মেজাজে আছে। কারন ও যা যা চেয়েছে যেমন দেশের বাইরে ভালো একটা ইউনিভার্সিটিতে পড়ার, সেটা সে একাই ম্যানেজ করেছে, কোনো কিছুতেই কোনো বাধার সৃষ্টি হয়নি, ওর জন্মদিনটাও ঘটা করে পালন করা হলো, আর আফসোস থাকবে না, আবার বিদেশ যাওয়া উপলক্টাষে সবাইকে দাওয়াত করে খাওয়ানো হলো, ওর নিজের ও ভালো লেগেছে, সব কিছু আল্লাহর রহমত, বাকীটা ভালোয় ভালোয় সব হলেই আলহামদুলিল্লাহ।