৯/৯/১৯৮৬-লুনার চিঠি

আজকে ওর চিঠি পেলাম। আর “ওর” বলাতে আবার অনেকেই ব্যাপারটা ভুল ব্যাখ্যা করতে পারে। ও আমার ছোট বোন লুনা, লেঃ এমদাদের আপন ছোট বোন। একটা ছবি পাঠিয়েছে পারুর ছবির  সংগে। পারুটা কে আমি চিনিনা। উপলক্ষ্য আমার জন্মদিন। গতকাল আমার জন্মদিন ছিল, আমার মনে নেই, কিন্তু ও মনে রেখেছে। একটা ভিউকার্ডও পাঠিয়েছে। লুনা সুন্দর চিঠি লিখে, যেমন এই  যে আজকের চিঠিটা। লিখেছে, “ভাইয়া, এখানে এই মিষ্টি মধুর লাজুক গাঁয়ে এসে থেমে গেছে ব্যস্ত ঘড়ির কাটা–সত্যি তাই। দীর্ঘ ৫ বছর পর আমি গ্রামে এসেছি। অতীতে ছিলাম একা, চঞ্চল ছোট্ট মেয়ে, আর এখন? চঞ্চলা তরুণী। তাই অতীতে যা ভালবাসিনি এখন সেটা বেশ ভাল লাগে।“ বাপরে বাপ কি পাকা পাকা কথা।

অনেকদিন যাওয়া হয় নাই ওদের বাসায়। পাশেই থাকে শহীদ ভাই। এমদাদের পরিবারের সাথে ওদের খুব মিল। শহীদ ছেলেটাও সাদামাটা। আমরা সবাই একটা ক্লাবের সাথে জড়িত। নাম সৃজনী সঙ্ঘ। আমরা যখন ছুটিতে আসি, তখন রেগুলার হই এই ক্লাবে কিন্তু খুব অল্পই ছুটি পাই। লুনারা ইব্রাহীমপুর থাকে। জায়গাটা কচুক্ষেতের পাশে। আমার ঐটা এলাকা নয়, তারপরেও আমি অনেকের সাথেই পরিচিত।

এবার আসি লুনার ব্যাপারে আরো একটু বলি। অসম্ভব ধরনের কালচারালা মাইন্ডেড একটা মেয়ে। যে কোনো বিষয় নিয়ে ওর সাথে আলাপ করা যায়। ওর সাথে যখন বসে আড্ডা দেই, তখন বড় আপা (লুনার বড়) মাঝে মাঝে এমন সব মন্তব্য করেন যেনো আমি আর লুনা প্রেমে পড়েছি, লুনা আমার হবু বউ। মাঝে মাঝে আমিও লুনাকে এতাই বলি, যে, বউ হবি? ও হাসে আর বলে- না থাক, দাদাই ভালো। আজীবন পাশে থাকা যাবে। বউদের কোনো সিউরিটি নাই। না আছে স্বামীদের।

এমদাদের বাবা (লুনার বাবা) ও খুবই খোলা মনের মানুষ। আর ওর মা তো আরেক লক্ষী ঘরের বউ। কি দিয়ে যে কি আপ্যায়ন করেন মাঝে মাঝে আমি খুব অবাক হই। ছুটিতে ওদের বাসায় না গেলে ভাবেন, বুঝি ভুলে গেছি, হয়তো আর মহব্বতটা আগের মতো নাই। অথচ আমি না কখনোই বদলাই, না কেউ আমাকে বদলে ফেলতে পারে। আমি জানি না, ‘সময়’ আমাদের সবাইকে কোন রাস্তায় একদিন নিয়ে যাবে।