গত ৮ সেপ্টেম্বর আমার জন্মদিন ছিলো। আমি আসলে ইদানিং আর জন্মদিন পালন করি না। ফলে মনেও ছিলো না।
প্রথম মনে করিয়ে দিলো আমার বউ। অবশ্য তিনিও মাঝে মাঝে আমার জন্মদিন মনে রাখতে পারেন না, কিন্তু যেভাবেই হোক, কষ্ট করে হলেও তিনি মনে রাখার চেষ্টা করেন, এবারো মনে রেখেছেন। তাঁর এই প্রথম সংবাদে বুঝলাম, ৮ সেপ্টেম্বর চলে এসছে। আমি অবশ্য আমার বউ এর জন্মদিন ভুলার সাহস করি না, কারন নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন, চুলা বন্ধ হয়ে বিছানাও আলাদা হয়ে যেতে পারে, তাই রিস্ক নেই না। মোবাইলে, কমপিউটারে, ফেসবুকে, সবখানে আগাম এলার্ম দিয়া রাখি যাতে আমি ভুলে না যাই। যেই মাত্র ওনারে “শুভ জন্মদিন কইয়া লাইছি, আবার এক বছর শান্তি”। মাঝে মাঝে ভুইল্যা যামু এই চিন্তায় সাতদিন আগেও কইয়া রাখি যে, শোনো আগামী অমুকদিন কিন্তু তোমার জন্মদিন, আবার ভুইল্যা যাইও না। আসলে আমি কিন্তু খুব গোপনে দায় সেরে ফেললাম। মহিলা মানুষ, পুরুষের চালাকী ধরতে পারেননা।
যাই হোক, এবারে যখন ফেসবুকের টাইমলাইন, ম্যাসেঞ্জার, হোয়াটসআপ, মোবাইলের ম্যাসেজে শতশত “হ্যাপি বার্থ ডে” পাইলাম, তখন আরেকটা কথা আমার বুঝতে সুবিধা হইলো যে, আমার ফেসবুকে যারা মরার মতো কোনো কমেন্ট না কইরা আজিমপুর গোরস্থান মনে কইরা পইড়া থাকেন, আসলে তারা ওই রকম না। তারা পার্কে বসা একাকী দর্শকের মতো থাকেন, দেখেন, পড়েন, হাসেন, কাদেন কিন্তু কিছুই কন না। কিন্তু টাইম মতো আবার ঠিক সরব হন। যেমন আমার জন্মদিনে আমি এতো এতো হ্যাপি বার্থ ডে পাইছি, দোয়া পাইছি তাদের কাছ থেকেও যারা কোনোদিন আমার লেখায় কমেন্ট করে না, লাইক দেন না কিংবা সরব হন না। ভালোবাসাটা মনে হয় এ রকমই। দেখা যায় না, শুধু উপলব্ধি করা যায়। আমি এবার তাদের ভালোবাসাটা খুব কাছ থেকে উপলব্ধি করেছি। ধন্যবাদ আপ্নাদেরকে।
কিছু খুব আদরের ছেলেরা আমার অনেক বিরল ছবি দিয়েও আমার টাইম লাইনে আমার “হ্যাপি বার্থ ডে” পোষ্ট করেছে। তাদের এই ভালোবাসা আমাকে নষ্টালজিক করে তুলে ফেলেছিলো। সেই সব বিরল ছবি দেখে আমার সময় যেনো পিছিয়ে গেছে সেই দিনে যখন ছবিটা তোলা হয়েছিলো। আবেগিত হয়েছি অনেক। এসব ভালোবাসার মুল্য দেবার আমার ক্ষমতা নাই।
আসলে ওই যে একটা লেখা লিখেছিলাম, ভালোবাসা কোনো দোকানে, কোনো শপিং মলে কিংবা কোনো পাহাড় পর্বতের চূড়ায় অথবা কোনো এক রাজপ্রাসাদেও কেজি দরে কিনতে পাওয়া যায় না। এসব ভালোবাসা থাকে মানুষের অন্তরে, হৃদয়ে আর মনের ভিতরে। আপনাদের এসব ভালোবাসার মুল্য আমাকে চোখের জলেও হয়তো পরিশোধ হবে না।
আমি সবার কাছে কৃতজ্ঞ আপনাদের এই প্রান ঢালা ভালোবাসায়। বয়স হয়ে যাচ্ছে, প্রতিটি জন্মদিন আমাকে আমার শেষ গন্তব্যের দিকে একটি একটি বছর করে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। হয়তো একদিন আর জন্মদিনের শুভেচ্ছার কোনো প্রয়োজন হবে না, তখন শুরু হবে আরেকটি পর্ব-মৃত্যু দিবসের দোয়া।
সবার কাছে দোয়া চাই, সবার কাছে ক্ষমা চাই যদি ভুল করে থাকি। আমিও সবার জন্য দোয়া করি। আর ক্ষমা? আমি কখনোই মনে করি না কেউ আমার কাছে কখনো ভুল করেছে।
সবাইকে ধন্যবাদ।