ভিন্ন প্রসঙ্গ–সবার জন্য 

একটা জিনিষ ইদানিং খুব বেশী করে অনুভুত হয় যে, জীবনের সব অধ্যায় এক রকম নয়।  এটা আমার হয়ত বুঝতে দেরী হয়েছে কিন্তু এই সব তত্ত্বকথা মনিষীরা যুগে যুগে বলে গেছেন। মনিষীরা তাদের অভিজ্ঞতার আলোকে অনেক তত্ত্বকথাই বলে গেছেন বটে কিন্তু কেউ সে সব তত্ত্বকথা মানে না। হ্যা, মানে তখন যখন কারো জন্য সেসব পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় এবং নিজেদের জন্য প্রযোজ্য হয়। সেই সুবাদেই বলছি যে, আমি আপনি ততোক্ষন সবার কাছে যত্নশীল যতোক্ষন আপনি নিঃস্বার্থভাবে দিতে পারবেন কিন্তু পাওয়ার আশা করবেন না। আশা করলে আপনি হেরে যাবেন। এটা নিজের স্ত্রী থেকে শুরু করে সন্তান, পাড়াপ্রতিবেশী, বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন সবার বেলায় প্রযোজ্য। কেউ মানুক বা না মানুক, এটাই সত্য।

এর থেকে যে শিক্ষাগুলি নেওয়া দরকার তা হচ্ছে,যা কিছু করবেন জীবনে, নিজের জন্য করুন, নিজে সুখী সময় কাটানোর জন্য আয় করুন এবং তা দুইহাত ভরে খরচ করুন। আপনার অনুপস্থিতিতে আপনার সন্তানগন কিভাবে চলবে কিংবা তারা কোথায় কিভাবে বাস করবে তা আপনার চিন্তা থাকতে পারে বটে কিন্তু তারজন্য অনেক কিছু আয় করে সঞ্চয় করে তাকে পঙ্গু করে রেখে যাওয়ার কোনো দরকার আমি মনে করি না। বরং তাকে উপযুক্ত শিক্ষা দিয়ে ছেড়ে দিন, তাতেই সে এই পৃথিবীর কোনো না কোনো স্থানে ঠাই করে নেবে। এই পৃথিবী পরিশ্রমী মানুষের জন্য সুখের আবাস্থল। অলসদের জন্য এখানে সব কিছুই নাগালের বাইরে।  পূর্ব বর্তি জেনারেশনের আহরিত সম্পত্তি উত্তরসূরিদের জন্য কিছুটা আরামদায়ক হলেও একটা সময় আসে, কোনো না কোনো উত্তরসুরীর মাধ্যমেই তা বিনাশ হয়। এই বিনাশ টা হয়ত এক জেনারেশনের মধ্যে ঘটে না। কারো কারো বেলায় এক জেনারেশনেই শেষ হয়ে যায় আবার কারো কারো বেলায় এটা ক্ষয় হতে কয়েক জেনারেশন পার হয়। কিন্তু ক্ষয় হবেই। এর প্রধান কারন, যিনি সম্পদ করলেন, তার যে দরদ, আর যারা বিনা পরিশ্রমে পেলো তাদের দরদ এক নয়। আরেক টা কারনে নস্ট হয়। তারা হলেন যাদের বংশ ধরের মধ্যে ছেলে রি-প্রেজেন্টেটিভ নাই। ওই সব লোকের বেলায় তাদের কস্ট করা সম্পত্তি নিজের ছেলে সন্তানের পরিবর্তে চলে যায় অন্য বাড়ির আরেক ছেলের হাতে যিন সম্পদের মালিকের নিছক মেয়ের স্বামী। এরা দ্রুত সম্পদ হাত ছাড়া করে কারন তারা একদিকে এতাকে ফাও মনে করে, অন্যদিকে যতো দ্রুত সম্ভব সব সম্পত্তিকে নিজের নামে রুপান্তরিত করতে চায়।

যেহেতু আপনি পরিশ্রম করছেন, সুখটা আপনিই করুন। যদি ভাবেন যে, আগে সঞ্চয় করে স্তূপ করি, বাড়ী গাড়ি করি, ব্যাংকে একটা মোটা টাকা সঞ্চয় হোক তাহলে আপনার হাতে একটু সময়ও নেই সকালের সূর্য দেখার অথবা রাতের জ্যোৎস্না দেখার। আপনার ভাগ্যে আছে শুধু বাদরের মতো এই স্থান থেকে অন্য স্থানে লাফিয়ে লাফিয়ে কোথায় ফল পাওয়া যায় তার সন্ধান করা, অথবা পালের বলদের মতো সারাজীবন হাল চাষের মতো চাষির হাল বেয়ে যাওয়া যাতে চাষিই শুধু লাভবান হয়, আর নিজে শুধু জাবর কাটবেন।

এ কথাগুলি কেনো বলছি?

আমার চোখে দেখা এই ছোট্ট জীবনে অনেক ঘটনা। কস্ট করে সম্পত্তি বা এসেট রেখে গেছেন, কিংবা ব্যবসা রেখে গেছেন, জাস্ট তার মরনের পর ওই সব সম্পত্তি কত তাড়াতাড়ি ভাগাভাগি করে নিজেদের মধ্যে নিয়ে নেয়া যায়, তার জন্য তর সয় না। অথচ ওই সব উত্তরসুরীরা এক্টিবার ও তার রুহের মাগ ফিরাত বা ধর্মীয় কোনো উৎসবের একটু ও পয়সা খরচ করতে চায় না। মজার ব্যাপার হচ্ছে, তারাও সেই এক ই ফাদে পা দিয়ে তাদের উত্তরসুরীদের জন্য ই সঞ্চয় করে জমা করে যান এবং নিজেরা ভোগ করেন না।

   

অপ্রিয় সত্যের মুখুমুখি দাঁড়ানো সাহসের প্রয়োজন

কখনো যদি তোমরা দেখো যে, তোমার অপ্রিয় সত্য কথায় কেউ কোনো উত্তর করছে না, কিন্তু তোমার অগোচরে মুখ ভেটকাচ্ছে, তাহলে বুঝবে যে, তোমার আশপাশ চাটুকারে ভরে গেছে। তুমি বিপদের মধ্যে আছো।  এ অবস্থায় তোমার যা করনীয়, তা হচ্ছে, তুমি একা চলার অভ্যাস করো। এই একা চলার মধ্যে যদি কাউকে রাখতে চাও সাথে, তাহলে এমন কিছু মানুষকে রাখো যারা প্রাইমারী স্কুলের দরিদ্র শিক্ষক। তারা নীতি থেকে বিচ্যুত হয় না আর হবেও না।