Categories
বিয়ে নামক পরীক্ষায় সবাই এক রকম প্রশ্ন পত্র পায় না। কারো প্রশ্ন নীল আকাশের মতো চোখ জুড়ানো, আবার কারো প্রশ্ন ককেশিয়াস পাহাড়ের দূর্গম পিচ্ছিল ঢালুর মতো অমসৃণ। আর সেইপত্রের সমস্ত উত্তরও এক রকম হয় না। কেউ সহজেই সব কিছু উৎরে যায়, আবার অনেকেই পিচ্ছিল পথে শুরুতেই নিখোজ হয়ে যায়।
অনেক বিবাহিত জীবনের নম্বর সময়ের সাথে সাথে বেড়ে লেটার মার্কে উঠতে পারে, আবার অনেক ক্ষেত্রে পাশ মার্ক থেকে কমতে কমতে ফেল মার্কেও নেমে আসতে পারে। তারপরেও নিজের চেষ্টায়, নিজের বিবেক দিয়ে, চারিপাশ বুঝে কেউ যদি আন্তরীক হয়, এই ফেল নম্বর নিয়ে কখনো কখনো তা বেড়ে আবার সঠিক জায়গায় উঠে যেতে পারে যদি না এই সম্পর্কের মাঝে অন্য কিছু যুক্ত হয়, অথবা এমন কিছু যুক্ত হয় যা তিক্ততায় রুপান্তরীত হয়।
যদি সম্পর্কের মাঝে অন্য কিছু যোগ হয়ে যায়, যা হওয়া উচিত না, যার তার ফলে লেটার মার্ক পাওয়া একটা সম্পর্ক শীতের পারদের মতো দ্রুত নামতে নামতে ফেল মার্কের নীচে চলে যায়, তাহলে বুঝতে হবে সেই ভালবাসার পারদে এমন কিছু ভেজাল ঢোকেছে যা খালি চোখে দেখা যায় না, বা বর্নচোরার মতো তাকে পারদের মতো একই মনে হয়। এই ক্ষেত্রে এই ভালোবাসার ব্যারোমিতার দিয়ে কোনো পক্ষেরই ভালোবাসার তাপমাত্রা বুঝা সম্ভব হয় না। প্রতিবারই মনে হবে রিডিং ভুল। ব্যারোমিতার পালতানো যায় কিন্তু আমি বুয়ারোমিটার না পালটে আমাদের সেই ব্যারোমিতার সঠিক কাজ করে এমন কেনো করতে পারি না? এর একটাই কারন, আমরা বর্নচোরা ভেজালতাকে সনাক্ত করতে অক্ষম। ভালোবাসার সম্পর্কের ক্ষেত্রে এর একটা সার্বোজনীন সমাধান যুগে যুগে মিনিষিরা দিয়ে গেছেন বটে কিন্তু সেটা আমরা না মনে রাখি, না অনুসরন করি। যার ফল সরূপ আমরা অধিক মনো কষ্ট নিয়েই একে অপরকে দুইটি পথের শেষ প্রান্তে এসে চোখের জলেই বিদায় দেই, অথচ ভিতরে ভিতরে যন্ত্রনার আর শেষ থাকে না। তাহলে সেই সমাধানটা কি?
আমার কাছে বারবার মনে হয়েছে যে, মানুষের জীবনের এই রকম একটা দুদুল্যমান পরিস্থিতিতে দুইটা মানুষের মধ্যে কোনো না কোনো কারনে সহনশীলতা, মানবিকতা অথবা এই জাতীয় মানবিক আইটেম গুলিতে নম্বর ধীরে ধীরে কমে শুন্যতায় নামতে থাকে। এই শুন্যতায় যেনো কারো স্কোর না নেমে আসে, তার জন্য সবচেয়ে বড় যা দরকার তা হচ্ছে, কোনো শর্ত ছাড়া একে অপরের বিশ্বাসভাজন থাকা, দরকার সেক্রেফাইস বা ত্যাগ, দরকার একনিষ্টতা আর দরকার নিজের সাথে নিজের সৎ থাকা। কেউ যদি মনে করে যে, একটা মিথ্যাকে বারবার মিথ্যে বললে সেটা সত্যি হয়ে যায়, সেটা ভুল, হয়তো ব্যাপারটা এরকম যে, একটা মিথ্যা বারবার বলাতে সত্যিটা কিছুটা ফেকাশে হয়ে যায়। কিন্তু এক সময় মিথ্যাটা প্রকাশ্যে আসেই। কখনো যদি কোন ভুল হয়েও যায় যা নিছক অনিচ্ছহায়, তখন তার হাতে থাকে একটাই অস্ত্র। আর সেটা হচ্ছে, নিসশার্তভাবে ক্ষমা চাওয়া। ক্ষমা চাওয়া কোনো দোষের না। ক্ষমা যিনি চান তিনিও সম্মানীত, আর যিনি ক্ষমা করেন তিনিও। আর এই ক্ষমা চাওতা যতো দ্রুত হয়, ততো মংগলজনক। ততো ক্ষতির সম্ভাবনা কম। অনেক ক্ষেত্রে এই ক্ষমা চাওয়ার মতো সুযোগটাও আসে না। কিন্তু যদি আসে, তা কর্তব্যবোধ বা রিস্পেক্তের সাথে পুনরায় তা শোধন করা সম্ভব। কোনো একটা পজিটিভ ফিগার থেকেই আরো পজিটিভ ফিগার বাড়ে, শুন্য থেকে কিছুই বাড়ে না। শুন্যতায় নেমে যাওয়ার আগেই এই প্রক্রিয়াতা বুঝা দরকার। বুঝা দরকার তাদের, যারা এর ভুক্তভুগী। পরিস্থিতি শুন্যের কোটায় নেমে গেলে এবং উন্নত না হলে এই ক্ষমা কোনো কার্জকরী ভুমিকা রাখে না। একটা কথা খুব ভালো করে মনে রাখা দরকার যে, ঘরের দরজা বন্ধ হবার সাথে সাথে সব সময় মনের দরজা যে বন্ধ হবে এমন কোনো কথা নাই। কিন্তু মনের দরজা যখন বন্ধ হয়ে যায়, তখন ঘরের দরজা এম্নিতেই বন্ধ হয়ে যায়। আর এই পরিস্থিতির জন্য যার জন্য্যে বন্ধ হয়, সেইই দায়ী। কারো ফিলোসফির এয়ারপ্ল্যান যতোক্ষন না পর্যন্ত ভূমিতে ল্যান্ড করে বাস্তবে ফিরে না আসে, ততোক্ষন সেই ফিলোসোফি কারো কাজে আসে না।
দাম্পত্য জীবনের প্রথম দিন গুলির কথা মনে করে দেখলে বুঝা যায়, সবাই সব স্তরের প্রত্যেকেই একটা পজিটিভ দিক থেকেই এগিয়ে এসেছিলো বলেই সম্পর্কটা স্থাপিত হয়েছে। যদি কখনো বিস্লেষন করেন, দেখবেন, দাম্পত্য জীবনের ইতি শুধু স্বামী স্ত্রীর কারনেই হয়েছে এমন নয়, এর মধ্যে আরো অনেক অনেক বহুমাত্রিক মন্তব্য, বিস্লেষন এবং বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তি বর্গের কারনেই বেশীর ভাগ দাম্পত্য জীবনের সফলতা আসে নাই। এই ক্ষেত্রে যারা দাম্পত্য জীবনের মধ্যে বন্দি হয়েছেন, তাদের উচিত, সমস্ত জ্ঞানি, গুনীজন কে এক পাশে রেখে, নিজেদের ভিতরের আত্তার কথা শুনা। নিজের হৃদয়ের কথা শুনা।
চোখ বন্ধ করুন, নিজের উপর ভরষা রাখুন, সৃষ্টি কর্তাকে স্মরণ করুন, দেখুন বন্ধ চোখে কে আপনার সামনে আসে বারবার। যদি হয়ে থাকে সে, যাকে আপনি দূরে সরিয়ে রেখেছেন সেই ভেজাল কিছু বর্ন চোরা পারদের কারনে, আপনি ঠিক ভেজাল টা ধরতে পেরেছেন। পালিয়ে যান সবার কাছ থেকে। কারন, আপনি সব ভেজাল পরিবেশ দারা এখন পরিবেষ্ঠিত। একমাত্র আপনার একা বেরিয়ে যাওয়াই হচ্ছে পরিশুদ্ধ হইবার একমাত্র পথ।
আবার নতুন করে ভালোবাসুন, নতুন করে পৃথিবীর সব কিছু শুরু করুন সেই তাকে নিয়ে যার হাত ধরে একদিন আপনি সবার সামনে শপথ করেছিলেন, আমরা এক সাথে বৃদ্ধ হবো।
জীবন অনেক সুন্দর। আর একতাই জীবন। মনে রাখবেন, অতীতের কোনো ভবিষ্যত নাই। ভবিষ্যত হয় শুধু আজকের জন্য।