১৩/০৬/২০১৬- সরল রেখার হিসাব

Categories

 

কোন একটা কারনে আমি আজ একটু মর্মাহত। মর্মাহত এই জন্য যে, আমি একটা সরলরেখার হিসাব বুঝতে পারি নাই। আমি বুঝতে পারি নাই যে, আমি একটা অবিভক্ত সরলরেখার অংশ যাকে ভাঙবার চেষ্টা চলছে। আমি বুঝতে পারি নাই যে, শত্রু বন্ধুর মত ব্যবহার করলেই সে বন্ধু হয়ে যায় না। বুঝতে পারি নাই যে, শত্রুর শত্রুরাও একসময় তাদের বড় শত্রুকে ঘায়েল করার জন্য একজোটে বন্ধু হয়ে যায়। আমি বুঝতে পারি নাই যে, নিজের ইচ্ছাগুলো, শখগুলো রক্ষা করার জন্য কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ নয়। আমি এখন বিছানায় শুয়ে আছি আর ভাবছি। মনে হচ্ছে আমি কষ্টে আছি, যত না শারীরিক কষ্ট, তার চেয়ে অনেক বেশি কষ্ট মনের ভিতরে। নিজের কাছে নিজেকে খুব বেশি অপরাধী মনে হচ্ছে এইজন্য যে, কেন আমি এতোটা অবুঝ ছিলাম, কেন আমি ঐ হায়েনাটাকে এতোটাই কাছের লোক বলে মনে করেছিলাম, কেন মনে হয় নাই, সে ওঁত পেতে আছে। নিজেকে বড্ড অসহায় মনে হচ্ছে আজ, নিজের কাছে লজ্জাবোধও কম মনে হচ্ছে না। এই পৃথিবীতে আমি আজ অন্তত একটা মানুষরূপী হায়েনাকে তো চিনতে পারলাম যে আমারই আস্তানার কাছে ঘুপ্টি মেরে বাস করে, সাধু হয়ে চলাচল করে অথচ সে হায়েনার চরিত্র লুকিয়ে রাখে।   জীবনের মানে বুঝবার জন্য অনেক দূর যাওয়ার প্রয়োজন নাই। এই হায়েনাটাকে দেখলেই সব বুঝা যাবে। এই হায়েনারা বন্ধু হয়ে অন্তরের ভিতরে কোকিলের কণ্ঠের মত সুর নিয়ে প্রবেশ করে, সে আসলে সুর নিয়ে নয়, সে জহর নিয়ে প্রবেশ করে। এদেরকে বুঝবার জন্য একটু গভীরে যাওয়া দরকার। তা হলে জীবনের মানে কি তার হিসাব বুঝা যাবে। জন্মের পর যাদের আস্তানার কোন হিসাব ছিল না এবং এখনো নাই, কে বা কারা তার অভিভাবক কিংবা কি নিয়ে তারা পরিচিত হতে হবে এই জনসম্যখ পৃথিবীতে, তাই যখন তাদের নাই। বস্তির ঐ অন্ধকার স্যাঁতস্যাঁতে ঘরে যাদের শ্বাসপ্রশ্বাস চলে, জীবনের মুললক্ষ্য ঠিক করার জন্য অপরের সাহায্য লাগে, পেট পুরে খেতে না পেরে মানুষের দ্বারে দ্বারে হাত পেতে জীবন চলে, রাত নামলেই কোথায় একটু ঘুমানো যাবে সেই ভরসায় পরিচিত কারো বাড়ীর পরিত্যাক্ত ঘরে, বা বারান্দায়, কিংবা ঝুল বারান্দায় থাকতে পারলেই নিজেকে বড্ড সুখি মনে করে, তাদের আবার স্তর কি? ল্যাবেল কি? স্ট্যাটাস কি? তারা আর যাই হোক, কারো বন্ধু হতে পারে না। আর বন্ধু হলেও তাদের বন্ধু তাদের স্তরেরই। আমাদের স্তরের তো নয়ই। এদের প্রতিটি চিন্তায়, প্রতিটি অনুভবে, আর সমগ্র ভাবনায় থাকে কিভাবে কোথায় কি ফায়দা লুটা যায়। তাই তারা কখনো চোখের জলে মানুষকে দেখিয়ে একটা সহানুভুতি, কখনো অতি বন্ধুভাবাপন্ন চরিত্রের রূপধরে মনের খুব কাছাকাছি আসার আকুতি, আবার কখনো সাধু সন্নাসির মত গোবেচারা সেজে মানুষের মনের ভিতরে ঢোকার প্রাণান্ত চেষ্টা, এটাই এদের চিরাচরিত অভ্যাস। এরা ভিক্ষা করে না কিন্তু ভিক্ষার টাকায় চলে, যাকাতের টাকায় চলে, এরা পরিত্যাক্ত কিন্তু ভাবে ভাবে চলে, এরা নামহীন, বংশহীন, গোত্রহীন, কিন্তু এরা বড়বড় নামের লোকের দোহাই দিয়ে চলে, অথচ যাদের নামে ওরা চলে, সেই ওরা এই বংশহীন, নামহীন, গোত্রহীন উচ্ছিষ্ট মানুসগুলকে হয়ত চিনেই না। হয়ত বাপের নামটা পর্যন্তই এরা জানে তাদের আদি এবং শেষ পরিচয় হিসাবে। পিতৃকুলের না আছে কেউ, মাত্রিকুলের না আছে কেউ। এদের রূপ যাই হোক না কেন, এদের অন্তরের ভিতর থাকে সর্বদা জহর। এই জাতীয় মেরুদণ্ডহীন হায়েনারা রাগের চেয়ে হাস্যুজ্জল থাকার চেষ্টা করে থাকে বেশি, অপমানেও ওদের দাতকপাটি বন্ধ হয় না, অপমানিত বোধ না থাকায় নির্লজ্জ তোষামোদি লক্ষণীয়। আর অন্তরের ঐ জহরেই অন্যের সব কিছু নস্ট করে মানসিক শান্তিতে থাকতে চায় এই বিকৃতি মানুষগুলো।  

আমিও আজ এমনি একটা বন্ধুরুপে পাশে থাকা হায়েনার জহরসমেত দংশনের জর্জরিত ব্যথায় কাতরাচ্ছি। আমি বুঝতে পারি নাই আমার পাশে দাড়িয়ে থাকা এই হায়েনাকে। এরা সবাই হায়েনার বংশধর। ছেলে হোক মেয়ে হোক, হোক ওদের পরবর্তী বংশধর, সবাই মানুষের অববয়ব কিন্তু হায়েনার আদর্শ ছাড়া কিছুই নাই তাদের মধ্যে। এটা আমার জন্য একটা শিক্ষা হয়ে রইল। তবে পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, আমি কেন আমার অবিভক্ত সরলরেখার ঐ প্রান্তে দাড়িয়ে থাকা আমার প্রানপ্রিয় শুভাকাঙ্ক্ষীর সাথে এই নিয়ে আলাপ করি নাই? আমি সেটাও বুঝতে পারি নাই। কি চক্রাকার বিপদের সঙ্গে আমি বসবাস করছিলাম। তবে শান্তিরবার্তা এই যে, কিছুটা রক্তক্ষরণ হয়েছে, কিছুটা আঁচর তো লেগেছেই, কিন্তু আজ অন্তত কিছুটা হলেও জীবনের সাথে জীবনের কোথায় অমিল, সেটা বুঝতে পেরেছি। ফারা কেটে যাবে, আবার বর্ষা আসবে, আবার শরত আসবে, শুধু আসবে না হায়েনাদের জন্য সুজুগের সংবাদ। এই অনাকাঙ্ক্ষিত হিসাব থেকে আমি শিক্ষা নিয়েছি। আমাকে শিক্ষা নিতে হয়েছে, যদি শিক্ষা না নেই, তাহলে জীবনের আরও অনেক পর্ব আসবে, যেখানে মনে হবে ঐ পথ আরও কঠিন এবং উত্তরনযোগ্য নয়। পতন নির্ঘাত নিশ্চিত।  

আজ যারা আমার সঙ্গে অসঙ্গতিমুলক আচরন করেছে, তারা ভাল কি মন্দ এই বিচার হবে সময়ের পথ ধরে ভবিষ্যতে। আমি তৈরি হচ্ছি। আপনারাও তৈরি হউন। আর ঐ হায়েনাটাকে বলছি, তুমিও তৈরি হও। তুমি আর যাই কিছু করো না কেন, তোমার রক্তের পরিচয়, বংশ, সেটা আর নতুন করে গজিয়ে তুলতে পারবে না। তুমি এর চেয়ে ভাল কিছু করে দেখাতেও পারবে না তোমার পরবর্তী হায়েনাদের কাছে। হায়েনা হায়েনাই। আর তৈরি হও ঐদিনের জন্য, যেদিন তুমি তোমার চোখের জলের সব ভান্ডার ঢেলে দিয়েও আমার রোষানল থেকে বেচে যাবার কোন সম্ভাবনাই নাই, আর সমস্ত সুরালয়, কিংবা জরালয় দিয়েও প্রমান করতে পারবে না যে, তুমি হায়েনার বংশধর নও। তুমি আমার কাছে বিষধর সাপের চেয়েও খারাপ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *